পাহাড়ী ঝরণা

পাহাড়ী ঝরণা
-অণুশ্রী দাস

 

কৃষ্ণদ্বাদশীর মেঘ খবর পাঠিয়েছিল পাহাড়ের বুকে দুঃখ জমেছে হাজার কিলো… পাইন, ফার, ওক্ নানা মাপের সিপাহী নজরদারীর ভাঁজে আজীবন বন্দি এক পাহাড়… গ্রীষ্মের দাবদাহে ঝলসে যাচ্ছে বসন্তের শেষ ছাপ টুকু… পাহাড় আবারও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার অভিশপ্ত জীবনে বেঁচে থাকার শেষ প্রাণটুকুও…

অনেক যুগ আগেকার কথা,
হেসে খেলে বয়ে চলা উচ্ছ্বসিত ঝরনার সাথে পাহাড়ের আলাপ হয়েছিল যৌবনের প্রথম প্রহরে… রুক্ষ পাহাড়ের বুকে এক দুটো ফুল ফোটানোর অজুহাতে কখন না জানি বসন্তকে এনে ঝরণা পাহাড়কে সাজিয়ে ছিল হলুদ সবুজের রংবাহারে, রাত্রিবেলা সবার চোখ এড়িয়ে বসুন্ধরার রাজকুমারী ঝরণা পাহাড়ী অভিসারে বেড়তো… সর্বহারা রিক্ত গগন চুম্বী পাহাড়ারের বুকে ঝরনা পেয়েছিল আমিত্বের আস্বাদ, তার কলকল্লোলে সুরে সমৃদ্ধ পাহাড়ের বেসামাল ভালোবাসায় তারা হয়ে উঠেছিল একে অপরের পরিপূরক…. দিন থেকে রাত, ষড়ঋতুর আবর্তনে, পাহাড়ী ঝরণার নিখাদ প্রেমের সুরে চতুর্দিক যখন উদ্ভাসিত তখন রাজকন্যার প্রেমের দুর্নামে বসুন্ধরার ক্রোধের সামনে এই সোহাগী সম্পর্ক এক লহমায় বিনাশ হল… রুক্ষ পাহাড় বন্দি হল হাজার সিপাহীর মাঝে আর ঝরণা সেও নিজেকে মিশিয়ে দিল ধরিত্রীর গহ্বরে… এখন পাহাড়ের বুক চিরে তির তির করে বয়ে চলে একফালি জলের ধারা… ঐ মিষ্টি জলের রসদে প্রতি বসন্তে ঠিক আগের মতো ফুল ফোটে পাখি আসে…. মনে হয় অভিশপ্ত পাহাড়ের মনে আবার ঝরণা শুরু করেছে মিষ্টি প্রেমের মান অভিমানের অধ্যায়… পাহাড়ও দুহাতে জড়িয়ে ধরতে চায় ঝরণাকে… কত জীবনের শুষ্ক কন্ঠ একবার ভিজিয়ে নিতে চায় প্রেমের পরশে… কিন্তু ঐ তির তির বয়ে চলা জলধারা, যার পায়ে রিণিঝিনি সুরের নুপূর বাঁধা, ওটা কোনো সাধারণ জলের ধারা নাকি সেই পাহাড় আর হারিয়ে যাওয়া ঝরণার সোহাগের শেষ চিহ্ন তা জানি না..

Loading

Leave A Comment