সেদিনের ভালোবাসা
-পারমিতা চ্যাটার্জী
মনে কি পড়ে তোমার
প্রথম দেখা হওয়ার দিনটা-?
মনে পড়ে? সেই সোনালী বিকেলের নিভে যাওয়া আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা দুজন–
কি জানি কি হয়ে দুজনের–
প্রাণে বেজে উঠেছিল না বলা কথার সুর –
কিছু বলতে চাই কিন্তু পারছিনা বলতে-
মনের কথা থেকে যাচ্ছে মনের গোপনে —
অবশেষে এলো সেই কালবৈশাখীর সন্ধ্যা —
উত্তাল হাওয়ার উদ্যমতার মাঝে প্রথম ধরলাম হাত তোমার —
মনে পড়ে সেদিনের প্রথম স্পর্শের অনুভূতি?
কখন কি করে যেন হারিয়ে গেলাম দুজনে
ভালোবাসার প্রবল উচ্ছাসে–।
সামান্য চাকরি– সামান্য মাইনে সাথে গোটা দুই টিউশানি–
ভালোবাসায় আড়াল হল অর্থের দীনতা –।
কিছু না ভেবেই বেড়িয়ে পড়লাম নির্জন সমুদ্র সৈকতে —
মনে পরে?
কি তুমুল উত্তেজনা —
ছোট্ট ঘর নিয়েছিলাম ভাড়া–
আক্ষেপ ছিল না তাতে–
ছোট্ট একফালি জানলা দিয়ে দেখতাম
সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস —
আছড়ে পড়ছে ঢেউ জানলার সামনে–
সমুদ্রের হাওয়ায় হাওয়ায় এলোমেলো মন–
কাছে এলো দুজনের–
কত কথা, কত গান, কত মন জানাজানি, কত কানাকানি —
তারই মধ্যে হারিয়ে গেলাম দুজন দুজনের একাত্ম বন্ধনের ডোরে–।
আজও কি মনে আছে সেদিনের রাতের কথা–?
জানি তুমি হারিয়ে ফেলেছ রোজকার একঘেয়ে সংসার যাত্রায়–
আমি যে আজও রোমান্টিক — শুধু তোমায় নিয়ে–
এখনও তো একই আছে সেই কালো হরিণ চোখের বিহ্বলতা —
এখনও তো পিঠ ভরা তোমার কালো চুলের রাশি —
কোথাও তো কোন তফাৎ নেই —
তবে? তবে আজ কেন জোছনা মিথ্যে লুটোপুটি খায় আমাদের শয্যায়?
বল না কেন?
কেন এত বদলে গেল?
ভালোবাসা সে তো একই আছে–
কবিতা? সেও তো আছে বুকের মাঝের খাতাটায় বন্দী হয়ে–
এখনও হারায়নি ছন্দ তার-
আজও তো শ্রাবণের বৃষ্টি ঝড়ে পরে–
তবে কিসে এত বদল হল বল না সুনয়না?
আর একবার কি যাবে না কি সমুদ্র সৈকতের সেই ছোট্ট ঘরটায়-?
চল না যাই আর একবার — দেখে আসি দুটি সদ্য বিবাহিত যুবক যুবতীর এলেমেলো ভালোবাসার স্মৃতির কোণটা—
চল না সুনয়না আর একবার ফিরে যাই আমাদের পুরানো ফেলে আসা স্মৃতি ঘেরা সমুদ্রের তীরে সেই ছোট্ট ঘরটায়–
হয় তো আবার ফিরে পেতে পারি দুজনে দুজনকে–
এখনও যে হয়নি বলা সেই না বলা কথাটা–
এবার হয়েছে সময় সে কথা বলে যাবার–
চল না যাই আর একবার শুধু — শেষ কথাটা বলব তোমার কাছে– বালুকাবেলার নীরব নির্জনতায়–।।