অমলকান্তি আমার বন্ধু

অমলকান্তি আমার বন্ধু

-কাজল দাস 

 

 

অমলকান্তির সাথে দেখা-
হঠাৎ এক ব‍্যাস্ত শহরে,
সে এখন আর ছাপাখানায় কাজ করে না।
পথে-ঘাটে, শ্মশানে- বাজারে
রোদ্দুর খোঁজা তার একমাত্র কাজ।
তাকে দেখে  ভারী অবাক হ’লাম আমি।
মনে হয় সে যেন অন্য গ্রহের মানুষ।

সে এখন পকেট ভরেছে খুচরো সাহস দিয়ে,
রুখে দাঁড়াতে একটা লাঠি, আর একটা চশমাই সম্বল।
হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় শহর থেকে গ্রামে, আর গ্রাম থেকে…
কখনো সকালের কৈশোরে কখনো গোধূলির অবসাদে।
মুঠো- রোদ্দুর খোঁজা তার কাজ।

ভারী কাঁচের ঘোলা দৃষ্টিতে
আমায় দেখা মাত্রই বলল- কেমন আছিস তুই?
বললাম- ভালো!
কোনো কথা না বলে আমার হাতটা চেপে ধরলো
-আমায় দুটো টাকা দিবি?
একটা কলম কিনবো।
কেন’রে, কি করবি কলম দিয়ে?
বলল- শব্দরূপ, ধাতুরূপ…..
বলতে বলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

তারপর বলল -আচ্ছা বন্ধু, বলতে পারিস-
শব্দের কি কোনো রূপ হয়?
এই ধর, এইধর আমি চিৎকারে ফেটে পড়ি,
কখনো আবার গুমড়ে উঠি খিদের রাতে,
সেই শব্দ কি লেখা যায়, নাকি তাকে বাধা যায়
– কোনো রুপে?

সত্যি খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে,
ওর লিকলিকে চেহারা আর বিষ্ময়কর দুটো চোখ,
আমার পরিপাটি জীবনকে যেন এক নিমিষে গ্রাস করে নিতে চাইছে।

বললাম- যাই!

দুটো টাকা দিবি ভাই?
একটু রোদ কিনবো, … একটু রোদ।
সকালের ফুটপাতে লেগে থাকা বুভুক্ষার রোদ,
শ্রমিকের ঘামে ভেজা ধূলোমাখা রোদ,
কৃষকের কাস্তের সান দেয়া রোদ!
ছোট ছোট শিশুদের থালা ভরা রোদ
একটু রোদ….
আর দেরি নয়, আমি যাই বন্ধু…….
আমি যাই…
অনেক রোদ চুরি হয়ে গেছে
-অনেক রোদ

 

Loading

Leave A Comment