পশু কারা??
-তন্ময় সিংহ রায়
একটা সম্পূর্ণ/আধাসম্পূর্ণ জীবনে অক্সিজেনের যথার্ত ভাগ তো পায় সকলেই কিন্তু সঠিকভাবে বাঁচাটা অসম্ভব বলে ভূল করলেও যথেষ্ট কঠিন বলাটাই বোধকরি নির্ভুল। একটা পশু সারাজীবন বাঁচে তার পশুত্ব বজায় রেখে কিন্তু একটা মানুষ বারে বারে হারিয়েছে বা হারাচ্ছে তার মনুষ্যত্ব। কিছু ক্ষেত্রে, আত্মসম্মানহীনের নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে হৃদয় তাচ্ছিল্যে পূর্ণ করে আমরা স্মরণ করি কুকুর নামক এমন একটা প্রাণীকে যে কখনই হারায়নি তার পশুত্ব। কুকুর বিশ্বাসঘাতক, স্বাভাবিক জ্ঞানে এ কথাটা বলার ক্ষমতা আজও পর্যন্ত কারো হয়েছে কিনা তা আমার সম্পূর্ণ অজানা কিন্তু মানুষ বিশ্বাসঘাতক, এটা আজ একটা কুকুরেরও বোধ করি জানা। বুদ্ধিবিহীন কোনো কর্মের স্রষ্টাকে আমরা অনেক ক্ষেত্রে উদাহরণ দিই গরু বলে। একটা গরুও কখনও তার পশুত্ব হারিয়েছে কিনা তাও আমার জানার বাইরে। যদি যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা/বিশ্লেষণধর্মী উত্তর চাওয়া হয় কারো কাছে যে একটা গরু কি সত্যিই প্রকৃত অর্থে নির্বোধ? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে দ্বিতীয় প্রশ্নের আবশ্যিক দাবী রাখে, কেন/কিভাবে? অথবা বুদ্ধিহীনতার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে গরু নামক প্রাণীটি কতটা যথার্থ তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ/ব্যাখ্যা করো। যদি উত্তর না হয় তাহলে কেনো তাকে মিথ্যে দোষারোপ ও অপমান? পশু বলে? জানিনা ক’জন এক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুচ্ছের যুক্তিসংগত উত্তর দিতে অক্ষমতার পরিচয় বহন করবেন না! অকারণে নির্বিচারে ও নির্দ্বিধায় অগুনিতবার দেখেছি কুকুরকে অত্যাচার করতে, দেখেছি অমানবিক ও আফসোসহীনভাবে মেরে ফেলতে কিন্তু অকারণে একটা মানুষকে কামড়াতে, আঁচড়াতে বা সিং উঁচিয়ে তেড়ে আসতে সাধারণত কোনো কুকুর বা গরুকে আমি দেখিনি। একজন মানুষ আ-মৃত্যু এই পৃথিবীর যতটুকুই ক্ষতিসাধন করে একটা কুকুর তা করে কি-না আমার ঠিক জানা নেই আর বিশ্ব উষ্ণায়ন ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণ কোনো কুকুর, গরু/গাছ বোধ হয় নয়। জিরো ডিগ্রী না হলেও মস্তিষ্কের ভিতরের তাপমাত্রা পাঁচ থেকে দশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড করলেই বোঝা যায় যে আমাদের ভাগ্যটা কতটা পরিমাণে সৌ যে কুকুর,গরু, গাছ প্রভৃতিরা বাকশক্তিহীন। আমরা বারে বারে হিটলার হয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছি নিরীহ প্রাণী ও উদ্ভিদগুলোর উপরে আর দুর্নীতির গন্ধ পেলেই নিজেদের প্রমাণিত করেছি সাপে তাড়া লেংটি ইঁদুর/গোলাপের সুবাসরুপে গভীর নিঃশ্বাসে নিস্তব্ধে সংযোজন করেছি সেই দুর্নীতির গন্ধ। আমরা গরুকে নিয়ে রাজনীতি করেছি কিন্তু একটা গরু তা করেনি। আমরা কচ্ছপ ও হরিণকে লুপ্তপ্রায় করতে চলেছি আর গর্বে ভরা বুক উঁচিয়ে বলছি ‘আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব।’ আমরা লোভী, ওরা প্রয়োজনটুকু মেটায়, আমরা স্বার্থপর, ওরা আমাদের স্বার্থে কাজে লাগে। ক্ষমতার অপব্যবহারে আমরা প্রায় অধিকাংশই সারাজীবনে আমিষ ভক্ষণকারীর ধর্ম পালনের তাগিদ ছাড়াই কত নিরীহ জীব হত্যা করেছি তা হিসাব বহির্ভূত, শুধু হত্যা করতে পারিনি নিজের ভিতরে থাকা মনুষ্যত্বহীনতাকে। এ জীবেরা সংঘবদ্ধ হতে শেখেনি তাই আমাদের এ যাত্রায় রক্ষে! প্রশ্নের তিক্ষ্ণ ফলায় এরা হিমোগ্লোবিনপূর্ণ তরল নিঃসরণ করেনি তাই ভাগ্য আমাদের প্রসন্ন যে ‘এ সুন্দর পৃথিবীতে সুষ্ঠ, সাবলীল ও পূর্ণ মর্যাদার সহিত বাঁচার অধিকার সবার। এ পৃথিবী আমাদের (গাছ, কুকুর ইত্যাদি) বাসযোগ্য গৃহ, তাকে তিলে তিলে যীশুখৃষ্টের ন্যায় (তোমাদের খৃষ্টান ধর্মানুযায়ী) শেষ করার অধিকার তোমাদের কে দিয়েছে?? কেন শেষ করে ছাড়লে এ পৃথিবীর স্বাভাবিকত্ব?? কেন নির্দ্বিধায় ও নির্বিচারে হত্যা করো আমাদের?? কতটা পরিমাণ অনুভব করো আমাদের অব্যক্ত, অসহনীয় যন্ত্রণা?? কতটাই বা সমব্যাথী হও/আদৌ হও কিনা!’ (ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য।)