Site icon আলাপী মন

প্রেমের খেলা

প্রেমের খেলা
-রেহানা দেবনাথ

 

 

সোনি হাওড়া ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।পাশ দিয়ে গাড়ি ব্যস্ত মানুষজন ছুটে চলেছে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই!উদভ্রান্তের মত ছুটে চলে এসেছিল জীবনটাকে শেষ করে দেবার জন্য!কিন্তু এখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।পেটের মধ্যে তার সন্তান যে প্রথম বার লাথি মারছে।যেন বলতে চাইছে “মা আমাকে মেরো না,আমি পৃথিবীর আলো দেখতে চাই”।
সোনির অশান্ত মন কিছুটা শান্ত হয়।সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে!
তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে চার বছর আগে সে বড় একটা ভুল করেছে আজ আর তা করতে চায় 💐না!
গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে দিদির বাড়িতে ঘুরতে এসে আলাপ হয় আসাদের সঙ্গে তারপর ফোন নাম্বার বিনিময় আর প্রেমের শুরু।ছয় মাস পর যখন সোনির বাড়িতে জেনে যায় ব্যাপারটা তখন অন্য একজনের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।তিনদিন পর বাপের বাড়ি ফিরে লুকিয়ে ফোনে আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।প্রেমের টানে সব ছেড়ে পালিয়ে আসে আসাদের কাছে ।তারপর বিয়ে করে দুজনে ভাড়াবাড়িতে থাকে।আসাদ কথা দেয় সুন্দরবনে গ্রামের বাড়িতে বাবা মাকে পরে বুঝিয়ে বলে দেবে!বছরের পর বছর চলে যায় সেই কথা রাখে না।সোনির বাড়ির সবাই ওদের মেনে নিয়েছে।তাদেরকেও আসাদ নিজের বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেয় না।তিন বছরের মধ্যে দুবার জোর করে সোনির এবরশন করিয়ে দিয়েছে।সোনি শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য জোরাজুরি করলে অশান্তি শুরু হয়ে যায়।আসাদ বিগত চার পাঁচ মাস ধরে মাঝে মাঝে তিন চারদিনের জন্য উধাও হয়ে যায় কারখানায় কাজের চাপ আছে বলে।দিনদশেক আগে যখন এক সপ্তাহের বেশি হয়ে যায় বাড়ি ফেরে না তখন সোনি কারখানায় গিয়ে জানতে পারে এক সপ্তাহ ধরে আসাদ ছুটিতে আছে আর এখন মাঝে মধ্যেই এমন ছুটি নেই ।কথাটা শুনে সোনির কেমন সন্দেহ হয় ওখান থেকে গ্রামের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সেখানে হাজির হয় সন্ধ্যে বেলায়।বাড়ির সবাই অবাক তাদের চেয়ে সোনি আরও অবাক হয় যখন জানতে পারে এক সপ্তাহ আগে আসাদের বিয়ে হয়েছে তার নিজের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে।অনেকদিন ধরে ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসাদ এখন নতুন বৌয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি গেছে।সোনি কান্না জুড়ে দেয়।লোক জানাজানি হয়ে গেলে মানসম্মান যাওয়ার ভয়ে আসাদের বাবা সেই রাত্রে ছেলেকে ফোন করে ডেকে নেয় আর সোনিকে বোঝায় পরে তাকে ঘরের বউ হিসেবে নিয়ে আসবে বলে পরের দিন ভোরবেলায় কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে এসে যখন সোনি তাকে ঠকানোর কারণ জিগ্যেস করে তখন খুব মারধোর করে।সোনি যখন জানায় যে সে পাঁচ মাসের গর্ভবতী আসাদকে জানায়নি কারণ সে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল! তখন অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করে।সোনিকে দুষ্চরিত্রের বদনাম দিয়ে ছেড়ে চলে যায় আর হুমকি দিয়ে যায় যদি গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয়বার যায় অথবা লোকজনকে জানায় তাহলে গুন্ডা দিয়ে খুন করে দেবে।সোনি আসাদের পায়ে পড়ে তার সঙ্গে থাকার জন্য কিন্তু আসাদ কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে চলে যায়।সোনি চোখে অন্ধকার দেখে।যাকে সে এত ভালোবাসে সে তার সঙ্গে প্রেমের নামে ঠকালো।সে আর বাঁচতে চায় না তাই চলে আসে এখানে। সোনির দুচোখের জল শুকিয়ে গেছে।
সে অনুভব করছে পেটের ভিতর তার সন্তানের লাথি।সে কিছু বলছে!সোনি ঘুরে দাঁড়ায়,নাহ! সে এভাবে দুটো জীবনকে শেষ করে দেবে না।নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করবে আর আসাদকে শাস্তি দেবে যাতে আর কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন প্রেমের খেলা খেলতে না পারে।

Exit mobile version