আইস ক্রিম
– বিশ্বদীপ মুখার্জি
স্টেশান- এর বাইরে বসে আছি। রৌদ্রের প্রচন্ড তাপে সমস্ত শরীর যেন ঝলসে যাচ্ছে। মন আর শরীর কোনোটাই ভাল নেই আজ। সকাল থেকে দুপুর হয় গেল, আয় তেমন কিছুই হলো না। মানুষের কৃপণতার বিষয় চিন্তা করে হাসিও পায় এবং কান্নাও পায়। তাঁদের আর দোষ দিয়ে লাভ কী? তাঁদের টাকা। কী ভাবে, কোথায় খরচ করবে, তাঁদের ব্যাপার। খারাপ তো আমার কপাল। নাতো ভাঙ্গা একটা বাটি হাতে নিয়ে বসে থাকতে হয়?
যাই হোক। দেখলাম, একটা ট্যাক্সি থেকে তিন জন নামলো। স্বামী, স্ত্রী এবং একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে। ট্যাক্সির ভাড়া চুকিয়ে, জিনিস- পত্র নিয়ে তাঁরা আমার থেকে কিছু দূরে দাঁড়ালো। কিছু পাওয়ার আশায় আমি বাটি ঝাঁকালম।
‘গরীবকে কিছু দাও, বাবু।’
স্বামী-স্ত্রী দু’ জনেই এমন ভাবে তাকালো যেন সাহায্য চেয়ে আমি বড় কোনো পাপ করে ফেলেছি। আমি বুঝে গেলাম, আশা করা বেকার। চুপচাপ বসে রইলাম। সামনে একটা আইসক্রিমের দোকান দেখে ছোট্ট মেয়েটা আইসক্রিম খাওয়ার জেদ ধরলো। মা, বাবার কাছে প্রচুর অনুরোধ করেও লাভ হল না। আমার হাসি কিম্বা কান্না পায়নি। হলো রাগ। কৃপণতার শেষ সীমা তাহলে উলঙ্ঘন করলো তাঁরা? এমন কৃপণতা কোন কাজের, যেটা নিজের সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে পারে না? ছিঃ , এহেন মানুষের মুখ দেখলে হয়তো সারা দিনটাই খারাপ যাবে ।
বাচ্চা মেয়ে টার কাঁদো-কাঁদো মুখ দেখে মায়া হল আমার। উঠে গেলাম নিজের স্থান ত্যাগ করে। ভাঙ্গা বাটি থেকে দশ টাকার একটা নোট বার করে বাচ্চা মেয়েটার হাতে দিয়ে বললাম, ‘এতে যা হয় নিয়ে নাও মা। এর থেকে বেশি সামর্থ্য তো আমার নেই।’
স্বামী-স্ত্রী দু’ জনেই হতবুদ্ধির মত তাকিয়ে রইল আমার দিকে। হয়তো কন্ঠরোধ হয় গিয়েছিল তাঁদের। সারা দিনের মন খারাপটা চকিতে ভালোলাগাতে বদলে গেল। হৃদয়ে এক অদ্ভুত শান্তি পেলাম।
আমি ভিখারী হতে পারি, কিন্তু কৃপণ নয়।
সমাপ্ত ।