আমি যে কন্যা ভ্রুণ
– অঞ্জনা গোড়িয়া
আমি এক রক্ত মাংসে গড়া ভ্রুণ
এখনও মাতৃ ক্রোড়ে লুকিয়ে আছি,
আমি দুই মানবের ভালোবাসার মূল।
তবু আতঙ্কে মাঝে মধ্যে কেঁদে উঠি।
প্রতি মুহুর্তে ভয় ,আমি থাকছি কি?
আমাকে ওরা বাঁচিয়ে রাখবে তো?
দুর্ভেদ্য দেওয়াল ভেদে কি শুনি?
মানুষের নিষ্ঠুর আলোচনা কত?
পুরুষকন্ঠে কেউ বলছে চলো চলো,
ডাক্তারে কাছে,জেনে আসি” ও ” কে?
কেন এমন কথা শুনি,বলো মা বলো?
ছেলে না মেয়ে,তবেই রাখবে বাঁচিয়ে?
ভয় করে মা,ভীষন ভয়ে জড়োসড়ো,
আমি আলো দেখব না ,যাবো কি হারিয়ে?
আমাকে কাছে ডাকবে না?বাঁচাবে না?
আমার উৎকন্ঠা তুমি কি বোঝো না মা?
আমি যে বাঁচতে চাই, তোমার কোলেতে,
আমি তোমারই ভালোবাসায় এসেছি যে,
আজ তবে কেন দ্বিধা সংকোচ মেয়ে হলে,
হ্যাঁ আমি ভ্রুণ কন্যা, তোমার ই মতো
আমি ও মেয়ে ,আজ আমি অসহায় বটে,
দূর করো মনের এসব কুচিন্তা যতো।
এক বার তুমি আসতে দাও মা, গর্ভ হতে
দেখো সব দুঃখ ভুলিয়ে ,ফুটে উঠব ফুলে
সব সুখ আলোতে ভরিয়ে তুলবো তোমাকে।
হ্যাঁ ,আমি একটা রক্ত মাংসের কন্যা ভ্রুণ
তবে কি আমার ছোট্ট দেহ টা কাঁচি ছুরিতে,
মায়ের নারীচ্ছেদ করে, করবে আমাকে খুন?
আর পারি না সয়তে তোমাদের আলোচনা
বড্ড বুকে বাজে যে,মেয়ে হওয়া কি দোষ?
তোমার ভালোবাসায় সৃষ্টি আমি,জানো না?
আমাকে পরীক্ষা করতে ডাক্তারে দিচ্ছ ঘুষ।
বাঃ মা,তুমি পারো না করতে প্রতিবাদ?
চিৎকার করতে পারো না, এ আমার সন্তান
বলতে পারো ,আমার কি আছে অপরাধ?
আলো দেখাও,ফিরিয়ে আনব সম্মান।
ভীতু হও না ,আমি আসছি সব কষ্ট মুছতে
আমি আসছি পুরুষের মুখোশ খুলতে ।
একবার শুধু আসতে দাও এই ধরাতে,
আমি যে এক রক্ত মাংসে গড়া কন্যা ভ্রুণ।
আমাকে বাঁচাও মেরো না,করো না খুন।