আমি সুভাষ বলছি
-পারমিতা চ্যাটার্জী
ভারতের অন্যতম জননায়ক হারিয়ে গিয়েছিলেন, হঠাৎ এতোদিন পর প্রকাশ পেলো, তিনি ছিলেন ভারতের প্রধম প্রধানমন্ত্রী। আজাদ হিন্দ সরকারের এই বীর যোদ্ধা কোথায় হারালেন, কে তাকে সরিয়ে দিলো কোন অন্ধকার কূপে? তা আজও অন্ধকারে। দ্বিখণ্ডিত স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্র নেতারা জানালেন
প্লেন ক্র্যাশে এই মহান জননেতার মৃত্যু হয়েছে, তা যে ভিত্তিহীন তা পরে প্রমাণিত হয়। সেদিনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল সেদিন আদৌ কোন প্লেন ক্র্যাশ হয়েইনি। তবে কোথায় গেলেন আমাদের সবার প্রিয় নেতাজী? এ প্রশ্ন আজও অজানা। হয়তো সাইবেরিয়ার কোন অন্ধকার জেলে তাঁর দিন কেটেছে, আমরা কেউ তা জানিনা। অপ্রকাশিত থেকেই গেলো মুখার্জী কমিশনের ফাইল, কিন্তু কেন? এর উত্তর পাওয়া যায়নি আমাদের তদানিন্তন রাষ্ট্র নেতাদের কাছ থেকে। আশ্চর্য দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষ –
যে নেতার বীরত্বে ত্যাগে আমাদের এই স্বাধীনতা তাঁর অন্তর্ধানের কোন প্রশ্ন কারও মনে জাগলনা?
না কি সত্য প্রমাণিত হবার ভয় ইচ্ছা করেই জাগানো হয়নি? নেতাজী ধরেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের হাল কে, তিনি বুঝেছিলেন অহিংস নীতি দিয়ে কোনদিন স্বাধীনতা আসবেনা আর ভারতবাসীকে থাকতে হবে ইংরাজ শাষকের জুতোর তলায় – তিনি প্রথম যুদ্ধের ডাক দিয়ে ভারতের যুবকদের তাজা রক্তকে উদ্বুদ্ধ করেন।কঠিন দৃপ্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান, ” তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো “।তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে হাজার হাজার যুবক বৃন্দ ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতার সশস্ত্র আন্দোলনে।
নিজের বাড়িতে নজরবন্দী থাকা অবস্থায় ছদ্মবেশে পালিয়ে যান সুদূর আফগানিস্তান হয়ে দুর্গম পথ অতিক্রম করে না খাওয়া না থাকার জায়গার কোন স্থিরতা, এক বিশাল পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান জার্মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্দী ভারতীয় সেনাদের উদ্বুদ্ধ করেন জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে। নেতাজি বিবেচনা করলেন তাঁকে পৌঁছাতে হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপানে যেখানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু,প্লেনে যাওয়া বিপদজনক তাই তিনি সাড়ে তিনমাস সমুদ গভীরে সাবমেরিনে যাত্রা করেছিলেন জাপানের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকেই শুরু হয় ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, যার সর্বাধিনায়ক ছিলেন নেতাজি। শুরু হয়ে গেলো আজাদ হিন্দ বাহিনীর সামরিক অভিযান। মাতৃভক্ত আজাদ হিন্দ সেনার দেশ মাতার শৃঙ্খল উন্মোচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল তাদের সর্বশক্তি দিয়ে। ১৯৪৩ শালেই স্বাধীন ভারতের হাতে চলে এলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শাসনভার । ১৯৪৩ শালে পোর্ট ব্লেয়ারের মাঠে সর্বপ্রথম স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন আমাদের ঘরের মানুষ তথা দেশ বরেণ্য জননায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতার জন্য তাঁর এই অদম্য সংগ্রামের কথা, সবই কি ভুলে যাবে ভারতবাসী?
নেতাজির এই অদ্যমতা কাঁপিয়ে দেয় ইংরাজ শাসনের ভিত কে।
অন্ন নেই, বস্ত্র নেই প্রবল শীতে একটা ভালো কম্বল পর্যন্ত নেই, ছিল শুধু স্বাধীন দেশের স্বধীন ভারতের পতাকা উত্তোলনের এক অদম্য প্রয়াস।আমাদের বাংলার ছেলে বীর সুভাষের সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, ” আমি সুভাষ বলছি ” আজও ভারত তথা বাঙালির হৃদয়ে কম্পন জাগিয়ে তোলে, এ কি ভুলে যাওয়ার কথা।
হ্যাঁ স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করেন আমাদের ঘরের ছেলে বীর সুভাষের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনী। হাতের বাইরে চলে যায় দেখে রাতারাতি গোল টেবিলের বৈঠক ডেকে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ শালের দ্বিখণ্ডিত ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সম্পূর্ণ আড়ালে সরিয়ে দেওয়া হয় বীর নেতা সুভাষকে প্লেন ক্র্যাশের মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে। যাঁর অদম্য বীরত্বে ত্যাগে সংগ্রামে আমাদের এই স্বাধীনতা, তাঁকেই সরিয়ে দেওয়া হয় কোন অজানা গন্তব্যে।
কি ভাবে কেটেছিল তাঁর জীবনের শেষ কটি দিন তা আজও প্রমাণ সাপেক্ষ, শুধু আমরা এটুকু জানি সুভাষ আর ঘরে ফেরে নি, কিন্তু কেন? এই কেনোর উত্তর আমরা কবে পাবো বা আদৌ পাবো কিনা তা আমাদের জানার বাইরে।
আজ এই বীর নেতার জন্মদিন, তাঁকে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম, মনে মনে বলি তুমি ফিরে এসো নতুন রূপে, নতুন নামে, তোমাকে যে আজ আমাদের বড়োই প্রয়োজন, এই স্বাধীন ভারতের দুর্দশা, তুমি আর একবার দেখে যাও, স্বাধীন হয়েও আমরা পরাধীনতার নাগপাশে বন্দী।
আর একবার শোনাও তোমার সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, ” আমি সুভাষ বলছি “।