“উলঙ্গ মনুষ্যত্ব “

“উলঙ্গ মনুষ্যত্ব “
-তন্ময় সিংহ রায়

 

 

ব্যতিক্রম স্বীকার করেই বিশ্লেষণ… কয়েনগুলোর ভরের যোগফল পাঁচশো-আশি গ্রাম। পাঁচশো-আশি গ্রামের বাজারি পাল্লাটার ঠিক নিচে মাধ্যাকর্ষণ টান’টা আজ মাত্রাতিরিক্ত! অপর পাল্লায় দু-কিলো মনুষ্যত্ব, গ্যাস বেলুনের ভূমিকায়। খোলা বাজারে দু’আঁটি মনুষ্যত্ব আর লাল শাক আজ দাম প্রায় একই । জিলেটিনের প্রলেপযুক্ত কাগজের টুকরোটার বিনিময়ে নিঃস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে ও দিনে বিক্রি হতে দেখেছি কত-শত টাটকা মনুষ্যত্ব!.. তা সে বাধ্য হয়েই হোক বা অর্থলালসায়। মনুষ্যত্বহীনতা একবিংশেই ধারণ করেছে সংক্রামক মহামারী আকার, দ্বা’বিংশে এই সংক্রামণ পৌঁছাবে বিভিন্ন গাছ-গাছালি ও অনুজীবেদের দেহে। পোষাকি বৈচিত্রে ঢাকা যায় একটা সম্পূর্ণ শরীরের লজ্জাকে কিন্তু মনুষ্যত্বহীনতার লজ্জাকে ঢাকার পোষাক আজও অনাবিষ্কৃত।… ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়না’- জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্যটার অক্সিজেনদাতা আমরাই ও মনুষ্যত্বহীনদের একপ্রকার উলঙ্গ বলাটাই যুক্তিসংগত অর্থাৎ ‘উলঙ্গ মনুষ্যত্ব।’ মনুষ্যত্ববিহীন সমাজটা আজ পিতৃহারা যন্ত্রণায় কাতর আর্তনাদ করছে… ‘বাঁচাও বাঁচাও, আমায় মেরে ফেলো না, আমি বাঁচতে চাই তোমাদেরই নিয়ে’..সে আর্তনাদ আমাদের অভিনয়ী কর্ণকুহরে আর উঁকিও মারেনা, প্রবেশ তো দূর! আত্মকেন্দ্রিকতায় ডুবে আমরা আজ অতি যত্নে বিস্তার করে চলেছি নিজেদের আত্মকেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, তবুও আমরা সামাজিক সর্বশ্রেষ্ঠ জীব!….আসলেই আমরা সবাই অবচেতনভাবে পরিণত হয়েছি বুদ্ধিজীবী মূর্খতে। নিজেদের আখেরটা গোছাতেই আমরা আজ ব্যস্ত… সমাজ-টমাজ?… ওসব নিয়ে ভাবে আবেগিরা…(যেমন ছিলেন:- রাজা রামমোহন রায়, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর) অথবা নিজেদের পাওনাগণ্ডা গোছাতে হবো কৃত্রিম সামাজিক আবেগি….. বি প্র‍্যাক্টিকাল! আবেগের এখন কোনো জায়গাই নেই… অধিকাংশের মুখ্য মন্ত্র আজ ভালো খাওয়া, ভালো পরা, নিজেদের ও পরবর্তী বংশধারকদের সুখের জন্যে একনিষ্ঠ মনে অর্থকে(যথাসাধ্য)ফুলের মালা ও চন্দনের ফোটায় বরণ করে ঘরে আমন্ত্রণ জানিয়ে অত্যাধিক খাতির যত্ন করা …. ব্যাস! চুলে ক্লোরোফিলের অভাবে ষাটে পদার্পণ করেই জীবনের সব দায়িত্বে দাঁড়ি টানা, আর সমাজ সচেতনতার জন্যে প্রয়োজনে বোধকরি আছে সরকার…তাতে আমাদের কি দরকার? আমরা শুধু বিশেষ বিশেষ দিনে একটু আদর্শের গন্ধ-টন্ধ ছড়িয়ে ভাষণ-টাষন দিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পূর্ণ করে মহানুভবতার জীবাশ্মের নিদর্শন রাখবো/বুদ্ধিদীপ্ত চিৎকার করে গলায় গীটারের ঘুমন্ত তারগুলোকে জাগিয়ে বলবো “জয় হিন্দ! “, “বন্দেমাতরম!” অথবা “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!”….শেষে আত্মতুষ্টিতে ভুগবো…
মনে জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই পরিচিত অর্থপূর্ণ শব্দগুচ্ছের সমষ্টি …….. “সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!” (ভূল ত্রুটি মার্জনীয়)

Loading

Leave A Comment