অন্য ফুলশয্যা
-রাখী চক্রবর্তী
“-রুপাকে আজ রুপকথার রানীর মতো সাজাব। রুপার গলায় রজনীগন্ধার মালা সবসময় আমি দেখতে চাই।” অফিসে বসে শুভময় সারাক্ষণ রুপার কথাই ভেবে চলেছে। ভাববে বাই না কেন। আজ যে ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।
রুপার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে শুভময় নির্বাক হয়ে যায়। যত ভালোলাগা যতো ভালোবাসা সব রুপাকে ঘিরেই তো। রুপা ছাড়া আর যে কেউ নেই শুভময়ের।
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে শুভময় বাড়ি এল।রুপাকে ঘণ্টার পর ঘন্টা সাজিয়ে যাচ্ছে শুভময়। খোঁপা করা, কাজল পড়ানো, পাউডার লাগানো এ সব তো আছেই। তার থেকে ও বেশি যেটা শুভময় রুপাকে প্রাণ ভরে দেখে যাচ্ছে। বেনারসি শাড়ি পড়ে রুপাকে যেন রুপকথার রানীর মতো লাগছে। এই রুপই তো দেখতে চেয়েছিল শুভময়। শুভময় রুপার নরম গালে আদর করতে করতে রুপার গলায় আলতো করে দু’টো হাত চেপে ধরল। রুপা এখন নির্বাক। শুধু চোখের ভাষায় বুঝাতে লাগল,”কি করছ!” শুভময়ের হাতের জোর বাড়তে লাগল আর বলতে থাকল,”রোজ দুপুরে কে পাঁচিল টপকে আসে? তুমি শুধু আমার।” এখন রুপা বুঝল কি হতে চলেছে। রুপার চোখ বেয়ে আসা জল শুভময়ের হাত দু’টোকে ভেজাতে পারল না।রুপার নিথর দেহ পড়ে আছে ফুলে ফুলে ঢাকা।
শুভময়ের প্রাণ ছিল রুপা, কয়েক বছর পর জেল থেকে ফিরে শুভময় এক অন্য মানুষে পরিণত হয়েছে।না খিদে না তৃষ্ণা আছে তার। ভালোবাসা, ভালোলাগা তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেনা। রুপার ছবি দেখেই তার দিন রাত কেটে যায়। এইরকম এক দুপুর বেলায় ঝুপ করে একটা শব্দ শুনতে পেল শুভময়। বাইরে বেরিয়ে দেখে, একটা ছেলে পাঁচিল টপকে রুপার ঘরের দিকে আসছে। এই ছেলেটা, এই ছেলেটাকেই তো সে দেখেছিল।
—দিদি, দিদি কোথায় তুমি বলতে বলতে ছেলেটি রুপার ছবিতে ফুলের মালা দেখতে পেয়ে চমকে গেল।ছেলেটি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না আর শুভময় নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
একি শুনছে শুভময়। অতনু রুপার পিসির ছেলে। রোজ দুপুরে খাবার খেতে আসত দিদির কাছে।নকশাল পার্টি করত সে, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিদির কাছে আসত। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরেই ছাড়ল।দিদির মৃত্যুর খবর সে জানল না।
শুভময় ফুলশয্যার খাট সাজাচ্ছে। অনেক ফুল দিয়ে। নিজে পড়ল বিয়ের ধূতি। বিছানায় রাখা আছে রুপার ছবি। যে হাত দিয়ে রুপাকে সে শেষ করেছিল সেই হাত দিয়ে সে নিজেকে শেষ করল। ফুলশয্যার খাট সেদিন ও সাজানো ছিল।আজ ও সাজানো আছে, শুধু একটি ছবির ব্যাবধান।
খুবই সুন্দর
কবিতা প্রেমীও চেয়ে থাকে
নতুন নতুন আশার আশায়
এর বেশি প্রত্যাশা করিনা
এইটুকু যেন পাই।