শ্রীলেখার ভালোবাসা
– অঞ্জনা গোড়িয়া
আজ শ্রীলেখার বিয়ে! সানাই বাজছে, আর একটু পরেই বিয়ের আসরে টুকটুকে শাড়ি পড়ে রাঙা হয়ে বসবে। নিশ্চয়ই লাল বেনারসী পড়বে, খুব সুন্দর দেখতে হবে আমার শ্রীলেখাকে। নীলয় একাকী বসে ভাবছে আর উদাসী হয়ে দেখছে নীল আকাশ। সারা দিন বাড়ি ফেরে নি। নীলয়ের মা খুঁজে খুঁজে পাগল।আমায় বললে, একবার দেখ্ না রে, ছেলেটা না খেয়ে একা কোথায় বসে আছে?
আমি ও চললাম খুঁজতে, হঠাৎ মনে হল, দেখি তো সেই জায়গায় যেখানে শ্রীলেখা আর আমার দাদা একসঙ্গে বসে কত সময় কাটিয়েছে, সেই কৃষ্ণচূড়ার তলায়। আমাকে একবার নিয়ে গিয়েছিল,বলেছিল, দেখ তো বোন, তোর বৌদিকে কেমন পছন্দ হয় কি না?
শ্রীলেখা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছিল, আমার তো ভারী পছন্দ, বললাম কবে আসছ বৌদি আমাদের বাড়ি? খুব মজা হবে তুমি এলে?
শ্রীলেখা বলেছিল, তোমার দাদা যেদিন নিয়ে যাবে সেদিনই আসব, সব কিছু ছেড়ে এক কাপড়ে।
দিব্যি চলছিল দু’জনার ভালোবাসা ভালোলাগার দিনগুলি।
হঠাৎ কালবৈশাখীর ঝড়ের হাওয়ায় সব স্বপ্ন আশা ভালোবাসা তছনছ হয়ে গেল।
আমার নীলয়দার মা জানতে পেরেই দাদাকে কড়া আদেশ, ঐ ছোটজাতের মেয়ে যদি বাড়ি আনিস তো, আমার মরা মুখ দেখবি, হয় তুই থাকবি নয় তো আমিই চলে যাবো কোথাও। অনেক বুঝিয়ে ও রাজী করাতে পারল না। আসলে পুরানো একটা অশান্তি ছিল শ্রীরাধার বাবার সঙ্গে।
এদিকে শ্রীলেখার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল, হার্ট এ্যাটাক। কোনক্রমে সে যাত্রায় বেঁচে ফিরল বটে, মেয়েকে দিয়ে প্রতীজ্ঞা করিয়ে নিল, বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে। শ্রীলেখা নীরবে ভালোবাসার বলি দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে। দু’জন আজ দু’প্রান্তে। দাদাকে বুঝিয়ে কোনমতে বাড়ি নিয়ে এলাম। তারপর কেমন যেন চুপচাপ, মুখে সেই হাসি নেই, দাড়ি গোঁফ কাটে না সময়ে।
এদিকে বিদায়কালে শ্রীলেখার চোখেও এক ফোঁটা জল নেই, থমথমে মুখে নিষ্ঠুর একটা দুরত্ব টেনে নিয়েছে সবার সঙ্গে। চলে গেল গাড়ি, সানাই স্তব্ধ।
তারপর —
অষ্টমঙ্গলায় ফিরল শ্রীলেখা। হলুদতত্ত্বের মিষ্টি আর একটা লাল গোলাপ হাতে দিয়ে বলল, আমাকে, এটা তোমার দাদাকে দিও, আমার সুখের ঘরের সুখ মিষ্টি আর এই গোলাপটা ।
চোখদু’টি ছলছল করে উঠল, দাদাকে দেখাতেই আর চুপ থাকতে পারলনা দাদা। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল, চিৎকার করে বলল, তুমি যখনই ফিরে আসবে আমার কাছে, আমি থাকব অপেক্ষা করে, তোমারই জন্য শুধু তোমারই জন্য। আমি ও বোকার মত শ্রীলেখাদিকে জানাতেই অট্টহাস্যে হেসে উঠল, আর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমার দাদাটা এখনও বড্ড বোকা। পাগল একটা!