কবিতা,  প্রথম বর্ষ - ২০১৯,  বর্ষপূর্তি কলম

চেনা দুঃখ চেনা সুখ

চেনা দুঃখ চেনা সুখ

-কাজল দাস 

 

আমি তখন আঠেরো বোধহয়, না হয় একটু কম,
লোকাল ট্রেনে দেখা হলো দু’জনার দমদম।
ভীরু চোখে চোখ পড়তেই অশান্ত এই মনে,
কুসুম কলির ঘুম ভাঙ্গলো অলির গুঞ্জরণে।
আমি তখন দিশেহারা পাগল হাওয়ায় মত,
বোকার মতই প্রশ্ন করি- বয়স তোমার কত?
“আইমিন- তোমার নামটা যদি বল”
-“এক্সকিউজ মি”- বলে দূরে সরে গেল।

আনমনা এক সন্ধ্যে বেলায় গড়িয়াহাটের মোড়ে,
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো একপশলা- জোরে।
আমি তখন কাক ভেজা প্রায়-
বাজ পড়া ওই রাতে।
হঠাৎ করেই চোখ পড়লো রঙিন ছাতা হাতে-
নীল সালোয়ার বুকের ওপর লাল ওড়না ঢাকা।
মেঘ সরিয়ে আমার মনে নতুন মেঘের ডাকা!
ছুটে গেলাম জল পেরিয়ে দ্বিধার বাঁধন যত
-আজকে তোমায় বলতে হবে বয়স তোমার কত?
তাকিয়ে ক্ষণিক আমার পানে আলুথালু বেশে,
চলে গেলো মিষ্টি মেয়ে দুষ্টুমিতে হেসে।

হাড়কাঁপা এক শীতের রাতে হঠাৎ মনে হল,
চেনা চেনা গন্ধে বাতাস আমায় ছুঁয়ে গেল।
চোখের ওপর চোখ পড়তেই অলীক শিহরণে-
বাঁশের বাঁশীর বোল উঠলো বাসের বৃন্দাবনে।
আমি তখন স্তব্ধ নেশায় এক কোণেতে বসে,
ভীড় ঠেলে সে আসলো কাছে,
বসলো আমার পাশে।
বুকের ভেতর উঠলো বেজে বিসমিল্লার সানাই,
মেঘ জমেছে অনন্ত কাল কেমনে তারে জানাই।
কেমন করে বলি তাকে আমার মনের কথা,
হাজার কথার মৃত্যু ডেকে আনলো নীরবতা।
মেঘলা চোখে চেয়ে ছিলাম চাতক পাখির মতো,
সেদিনও আমার হয় নি জানা-
বয়স যে তার কত!

আরও বোধহয় বছর দশেক,
কম হলেও আট-নয়।
দীঘার এক ভোরের আলোয় আবার দেখা হয়।
পরনে তার নীলাম্বরী মেঘ জড়ানো শাড়ি,
দাঁড়িয়ে আছে রূপসাগরে অপরূপ সেই নারী।
চুলের ভাঁজে এক সমুদ্র বাতাস খেলা করে,
হাতখানা তার বারেবারেই মুখের ওপর পড়ে।
আমি তখন ঝড়ের বেগে গেলাম তার কাছে,
দেখতে পেলাম সিঁথিতে তার সোহাগ জেগে আছে।
আমায় দেখে অবাক চোখে করল মাথা নত,
জানতে আমি চাইনি সেদিন-
বয়স যে তার কত!

মন-ভেজা এক সন্ধ্যে বেলায় ফিরছি বাড়ির পথে,
দেখা হলো সিঁথির মোড়ে ছোট্ট মেয়ে সাথে।
“ও মেয়ে তোমার নামটা কিগো, কি সুন্দর হাসি।”
-“আমরা এখন এই পাড়াতে গান শিখতে আসি।”
“ভালো আছ?”
-বললে আমার ক্লান্ত মলিন সুরে,
এক পশলা বৃষ্টি এলো তপ্ত আকাশ জুড়ে।
ফুল বসন্তে আগুন লেগে ফাগুন হল সারা,
“বেঁচে আছি শশ্মানে ছুঁয়ে, যাইনি আজো মারা।
তুমি বল কেমন আছো, মেয়ের কোন ক্লাস হলো?”
“ভালো আছি, ক্লাস টু, তোমার কথা বলো।”
“এখনো কি তুমি ব্যাচেলর’ই আছো?

-বিয়ে করনি বুঝি!”

সত্যি বলছি লোকাল ট্রেনে আজও তোমায় খুঁজি
মনের ভেতর প্রশ্ন আজো ঘুরছে অবিরত,
নাম না জানা 

আই মেয়েটির বয়স হল কত।

আরও প্রায় বছর তিনেক, ছিলাম সবই ভুলে,
দেখা হলো বেলেঘাটায় মন্তেসরী স্কুলে।
পরনে তার সাদা শাড়ি, রঙের ছোঁয়া নাই,
বলল আমায়- “এখন আমি এই স্কুলে পড়াই।”
অবাক চোখে দাঁড়িয়ে ছিলাম চৌরাস্তার মোড়ে,
বৃষ্টি এলো নিঃশব্দে শুভ্র আঁচল ভরে।
বৃষ্টি এখন ঘরে বাইরে দু’কুল ছাপা নদী,
ভাসিয়ে দেবে চৌরাস্তা সান্তনা দেই যদি।
সামলে নিয়ে বললাম তাই- মেয়ে কেমন আছে?
‘ভালো’, ও তো এখন থাকে মায়ের কাছে।
তাহলে কি এই শহরে তুমি- একাই এখন থাকো?
“চল একটু চা খাওয়া যাক, এসব কথা রাখ।”
প্রথম যেদিন তোমায় দেখি, মনে আছে তোমার?
দিনটা ছিল তেরো তারিখ বারটা….… শনিবার।
এখনও আমি আগের মতই তোমায় পেতে চাই।
-“ক্লাস নেবার সময় হলো, এখন আমি যাই?”
আবার কবে দেখা হবে এই দিনটার মত?
“এখনও কি জানার ইচ্ছে বয়স আমার কত?”

রাত্রি তখন গভীর অনেক দেখি আমার পাশে,
অনামিকা বৌ-এর সাজে চুপটি করে বসে।
বলল আমায়- “তোমার জন‍্যে পড়েছি লাল শাড়ি,
অনেক খানি জল পেড়িয়ে এসেছি তোমার বাড়ি।
আমার কাছে কি আর পাবে মন খারাপের রাতে,
সব হারিয়ে এসেছি আমি কেবলই শূন্য হাতে।”
আমি বললাম- তেমন কিছু চাইনে তোমার কাছে,
তোমার জন্য এক পৃথিবী প্রশ্ন জমে আছে।
আগে বল এখন তোমার বয়স কত হলো?
ঘুম ভাঙিয়ে বলল আমায়-
বয়স আমার ষোলো,
বয়স আমার ষোলো,
বয়স আমার ষোলো…

Loading

2 Comments

Leave A Comment

You cannot copy content of this page