একান্ত আপন, আলাপ
– রীণা চ্যাটার্জী
একান্ত আপন, আলাপ,
কতো কথাই বলা হয়ে যায়, জানা-অজানার মাঝে, ছন্দে-সুরে সুললিত, ভঙ্গিমায় প্রত্যয়ী। অর্থ- অনর্থক কতো কথা জুড়ে তোমার আনাগোনা। আমি না হয় হলাম, ‘কথামালা’- তোমাকে ‘আলাপ’ নামে ডাকি? সই করবে আমায়? দু’জনে মিলেমিশে চারপাশে ছড়িয়ে যাবো অনেক কথা, চেনা-অচেনা, জানা-অজানা নানান আলাপনে।
কখনো শুধুই বলার জন্যই বলতে চাওয়া তোমাকে ঘিরে। কখনো বা নিভৃতে, নীরবে কিছুই না বলায়, দৃষ্টির বিনিময়ে মুর্ত হয়ে ওঠো তুমি। কখনো তুমি চার দেওয়ালে বন্দী ভীষণ সতর্ক ফিসফিসানি, কখনো আলগা কথামালার হুল্লোড়, কখনো বা অসতর্কতার বিতর্ক। কখনো তুমি ফল্গুধারা, জীবনকে নিয়ে বহমান সজীবতা। কখনো এক টুকরো বরফ, নৈঃশব্দের শীতলতা। কখনো তপ্ত অগ্নি পিন্ড, জ্বালাময়ী হুঙ্কার। কখনো খন্ডিত পাথর, হতাশায় স্তব্ধ করে দেওয়া– ‘আলাপ’।
গুরুদেবের ‘অবাক জলপান’ এ ভীষণ অদ্ভুত তোমার উপস্থাপনা। একদিকে তৃষ্ণার্ত পথিকের তৃষ্ণা নিবারণের অনুসন্ধান তো অপরদিকে অচেনা মানুষের শুধু বোঝা না বোঝার মাঝে মিলে হলো কতো কথামালা! দুই পক্ষের কথা বিনিময় তো শুধু মাত্র ‘আলাপ’ তোমারই জন্য।
শ্রদ্ধেয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নীরা’র জন্য মনের সাথে কতো কথা জুড়ে তো তুমিই ছিলে আলাপ- একান্তে নিভৃতের আলাপ।
‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’-এ বিদ্রোহী কবি আলাপ করলেন এক উচ্চকিত বিদ্রোহের সাবধান বাণী দিয়ে।
‘আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস,….. দীর্ঘ বরষ মাস’– ভালোবাসা জুড়ে তো শুধু তুমি আর তুমি। শেষই হতে চায় না যে ভালোবাসায় ‘আলাপ’।
দুই প্রতিবেশীর খেয়াল খুশির কুশল বিনিময়ের মাধ্যম তুমি, ভিড়ে উৎসুক জনতার চোখের চাহনির নীরব জিজ্ঞাসা বিনিময়ে তুমি, ব্যস্ত গৃহবধূর ক্ষণিকের অবসরে সাথী তুমি, কৈশোরের হুল্লোড় তুমি, যৌবনের উন্মাদনা তুমি, থমকে যাওয়া অবসর জীবনের ‘বার্ধক্যের বারাণসী’ ও বোধহয় তুমি– সব বাঁধার প্রাচীর ভেঙ্গে অচেনাকে বন্ধনে বাঁধো শুধুই তুমি।
কোনো ক্ষয়, লয় কোনোদিন আসতে পারবে না আমাদের মাঝে। তোমার আমার এই পথচলা অনন্ত, অসীম। ছড়িয়ে যাবো গলি থেকে রাজপথে, পাহাড়-নদী-সমুদ্রে, আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলে মনের আনাচে-কানাচে বাঁধবো বাসা সুখ, দুঃখে, ভালোবাসায়। ওই শোনো আবার কারা যেন ডাকে তোমায়… চলো শুরু করি মিলেমিশে আবার। “… এই পথচলাতে আনন্দ”