প্রথম আলাপ
-রেহানা দেবনাথ
আজ ভ্যালেন্টাইনের দিনে পিংকি কফি হাউসে বসে আছে রোহিতের জন্য। একমাস আগে ওদের দু’জনের পরিবার ছবি পছন্দ করে কথা মোটামুটি ভাবে এগিয়ে রেখেছে।রোহিত লন্ডন থেকে এম.বি.বি.এস. করে এখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাকটিস করছে। ওর জেদ মেয়ের সঙ্গে আলাদা দেখা করে তারপর ফাইনাল জানাবে! পিংকির ও একই ইচ্ছে ছিল তারই ফল স্বরূপ ওদের আজ প্রথম আলাপের দিন। পিংকি মোবাইলে দেখল চারটে দশ ও একটু আগেই চলে এসেছে টেনশনের চোটে!সামনের টেবিলগুলোতে প্রেমিক প্রেমিকার দল ও তাদের হাতে গোলাপ দেখে ওর হারিয়ে যাওয়া কলেজের দিন আর নিশীতের সাথে প্রথম আলাপের কথা মনে পড়ে গেল।সেদিনও ছিল বাঙালির আরেকটি ভ্যালেন্টাইন ডে সরস্বতী পুজোর দিন। সেদিন ফার্স্ট ইয়ার এর ছাত্রী পিংকি, শম্পা,গার্গী আর চন্দ্রা মিলে প্রথম সিনেমা দেখতে যায় প্যারাডাইস হলে। সেখানে গিয়ে দেখে ওদের কলেজের পাঁচটি ছেলে ওখানে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা হলো শম্পা, গার্গী র বয়ফ্রেন্ড আর তাদের বন্ধুরা।সেদিন প্রথম নিশীতের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। আর প্রথম আলাপেই ওর প্রেমে পড়ে যায় পিংকি। তারপর থেকে পিংকি নিশীতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কিন্তু কোনদিন বলতে পারেনি যে ওকে ভালোবাসে! ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে গেলে পিংকি যেদিন ভাবলো এবার সে তার মনের কথা বলে দেবে সেদিনই জানতে পারে যে গত ছয়মাস ধরে ফার্স্ট ইয়ারের সুন্দরী তনিমার সঙ্গে নিশীতের প্রেম চলছে। সেই থেকে ভাঙ্গা হৃদয়ে আর কাউকে জায়গা দেয় নি পিংকি।
গত তিন মাস হলো পিংকির বাবা খুব অসুস্থ তার শেষ ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়া তাই পাত্র দেখার হিড়িক লেগে গেছে। পিংকিও বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারেনি। তার শুধু একটা শর্ত পাকা কথার আগে পাত্রের সঙ্গে সে প্রথম আলাপ করবে! এর মধ্যে একজন উকিল ও একজন ব্যবসায়ী পাত্রকে প্রথম আলাপেই বাতিল করেছে পিংকি।পিংকি এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে পড়ে ছিল রোহিতের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায়।প্রথম আলাপেই রোহিত এত মন খুলে কথা বলে আর নিজের জীবনের প্রতিটি পাতা পিংকির সামনে মেলে ধরে তাতে পিংকি নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা অনায়াসে বলে দেয়।রোহিত জানায় তাদের প্রথম আলাপ বছর খানেক আগে বনহুগলিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হয়েছিল যেখানে পিংকি তাকে সেভাবে পাত্তা দেয় নি বলেই হয়তো তার মনে নেই!পিংকি তখন বলে সেই জন্যই রোহিতকে এত চেনা চেনা লাগছে।পিংকি ফেরার জন্য প্রস্তুত হলে রোহিত উঠে দাড়িয়ে বলে এই আলাপই শেষ আলাপ নয় তো?
পিংকি মিষ্টি হেসে জনায়..না। আবার দেখা হবে আপনার বিয়েতে যেখানে প্রথম আলাপ হবে নন্দিনীর সঙ্গে যার জন্য আপনি দশ বছর অপেক্ষা করেছিলেন। সেখানে তো আলাপের জন্য যেতেই হবে।পিংকি বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে বাড়াতে নিজের মনে মনে বলতে থাকে এরপর কার সঙ্গে কখন কোথায় প্রথম আলাপ হবে বিধাতাই জানে!
ধন্যবাদ