Site icon আলাপী মন

বিশ্বাস

বিশ্বাস 
-মানিক দাক্ষিত

 

 

সন্ধ্যাবেলায় রতনের টি.ভি. সারাইয়ের দোকানে বসে গল্প করছি। হঠাত্‍ রায়বাবু রিক্সাতে কোলে একটা মাঝারি সাইজের কালার টিভি নিয়ে এসে হাজির। গলায় উদ্বিগ্ন আর দুশ্চিন্তার ছাপ।

“বাবা রতন, দেখোতো টিভিটা। চলতে চলতে হঠাত্‍ বন্ধ হয়ে গেল।”

রতনের ব্যবহার অমায়িক–যাকে বলে চমত্‍কার।চোখের নিমেষে গণশার চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা আনিয়ে রায়বাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“আপনি চা-টা খান, আমি দেখে নিচ্ছি। টিভিটা খুলে চোখ ছানা-বড়া করে রতন রায়বাবুর দিকে তাকাতেই রায়বাবু গভীর উত্‍কণ্ঠায় জিগ্যেস করেন, ‘কি হল রতন ?”
—“টিভিটার তো একেবারে দফা রফা হয়ে গেছে। অনেকগুলি পার্টস পুড়ে গেছে। অনেক টাকার ধাক্কা।”

আমতা আমতা করে রায়বাবু টাকার অঙ্কটা জানতে চাইলে রতন চোখ বন্ধ করে হিসেব কষে বলে,”ধরে রাখুন হাজার দেড়েক। —তার বেশীও হতে পারে।”

রায়বাবু রতনের হাতদুটো চেপে ধরে করুণ মিনতি করে বলে, “আর বেশীটা করো না। ঐ দেড়হাজারের মধ্যেই রেখে দাও। বুঝতেই তো পারছো, পেন-
শানের ঐ টাকা থেকেই আমায় দিতে হবে। আমি ঘণ্টাখানেক পরে এসে টিভিটা নিয়ে যাব।”

রতন লাফিয়ে ওঠে, বলেন কি –একঘণ্টা! আমার পাক্কা তিনটে দিন লেগে যাবে। আপনি তিনদিন পরে এসে নিয়ে যাবেন।”

রায়বাবু চলে গেলে রতন আমার দিকে তাকিয়ে কৌতুহল মিশিয়ে বলে, “কি রে, কিছু বুঝলি?”

আমি ঘাড় নেড়ে না বলতেই রতন মুচকি হেসে বলে, “টিভিটার কিচ্ছু হয়নি। একটা ঝাল খুলে গেছে—কানেকশান পাচ্ছে না—দেখ!” –বলে নিমেষে ঝালটা লাগিয়ে সুইচটা অন করে টিভিটা চালিয়ে দিল।

আমি অবাক বিস্ময়ে রতনকে বললাম, “তা’লে রায়বাবুকে তুই যে বললি, অনেকগুলো পার্টস পুড়ে গেছে। দেড় হাজার টাকা লাগবে?”

রতন হো হো করে হেসে উঠল—“ওসব তুই বুঝবি না, এ-সব ব্যবসায়িক চাল।’

মনটা ভারী হয়ে গেল। ব্যবসায়িক চাল! লোক ঠকিয়ে কায়দা করে টাকা আদায় করা একরকম চিট! সোজা কথায় চিটিংবাজী।

বিষণ্ন মনে রতনকে বলি, “ভদ্রলোককে না ঘুরিয়ে টিভিটা তো দিয়ে দিতে পারতিস ?”

এবার রতন রীতিমত রেগে গিয়ে ভর্ৎসনার সুরে আমাকে বলে, “বেটা, তুই শুধু বোকা নস, মস্ত বড় একটা গাধা। এইজন্যে লেখাপড়া শিখেও জীবনে কিছুই করতে পারলি না! আবে ঢেঁড়স, টিভিটা যদি এক্ষুণি দিয়ে দিতাম, তাহলে টাকাটা ট্যাঁক থেকে বার করতে গায়ে লাগতো। আমায় চোর ভাবতো। বিশ্বাসটাই চলে যেত। তিন দিন পরে দিলে কি ভাববে জানিস ? ভাববে, টিভিটার পিছনে অনেক সময় দিয়েছি.……অনেক খেটেছি।”

মাথাটা ঝিনঝিন করে উঠল। বোকা আমিটা গাধার মত আস্তে আস্তে পা ফেলে বাড়ীর দিকে রওনা দিলাম।

Exit mobile version