মেয়েটা ছুটছে
– অঞ্জনা গোড়িয়া
মেয়েটা ছুটছে,আরো জোরে ছুটছে,
আর একটু জোরে, তারা যে খুঁজছে।
পিছন থেকে ধাওয়া করেছে ওরা,
একদল বুভুক্ষু শোষক ধর্ষকের দল।
মেয়েটাকে শীঘ্র যেতে হবে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে।
বাঁচাতেই হবে ইজ্জতটাকে।
না আর পারছে না, ধরে ফেলল, মুহুর্তে ওরা যে পাঁচজন।
টানতে টানতে ঝোপটার আড়ালে নিয়ে গেল।
একজন খুলে নিল সাধের শাড়িটা
অন্যজনে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ল ব্লাউজটা।
মুখটা বেঁধেছে শক্ত কাপড়ে।
চিৎকারকরার ক্ষমতাটুকু নেই ।
দু’চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে ।
প্রতিবাদী ভাষা আজ নিস্তব্ধ।
হাত দু’টো শক্ত বাঁধনে বেঁধে রেখেছে ।
ডুঁকরে ডুঁকড়ে অন্তরাত্মা কেঁদে উঠছে ।
নড়াচড়ার উপায় নেয় যে মেয়েটার।
চোখদুটি জলে ছলছল করছে। অসহ্য যন্ত্রনায় ।
ওরা যে পাঁচ জন, মেয়েটা বড় অসহায়!
সর্ব শক্তি দিয়ে মেয়েটা শেষ চেষ্টা করল।
ওদের বিষাক্ত থাবা, শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।
দাঁতের কাঁমড় আর সিগারেটের ছ্যাঁকায়।
সব শেষ, ক্ষুধার্ত পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল নরম দেহের ওপর।
বিজয়ীর হাসি হেসে মিশে গেল সমাজের বুকে ।
অফিস থেকে ফিরছিল,নিশ্চিন্তে ঘরে।
পিছন থেকে ওরা পাঁচজন ধেয়ে এল ।
পুলিশ স্টেশনের দিকেই মেয়েটা ছুটছিল জোরে।
পারল না যেতে। পথেই ধরে ফেলল তাকে।
মেয়েটি আজ অপিবত্র ধর্ষিত শোষিত কলঙ্কিত ।
যখন জ্ঞান ফিরল,চেয়ে দেখে হসপিটালের বেডে শুয়ে।
কিছু মনে করার আগেই
শুরু হল পুলিশী উপদ্রপ। শুরু হলো তদন্ত।
ঠিক কি ঘটে ছিল? কতখানি ঘটে ছিল? হাজারপ্রশ্ন ।
আরো আছে পরীক্ষা রিপোর্ট টেষ্ট। মেয়ে যে ক্লান্ত।
মুখ চোখ আর শরীর যে বড় দুর্বল ।
একটু সুস্থ হতেই আবার অফিসে চলল।
কতগুলি কৌতূহলী দৃষ্টি মেয়েটাকে আরো যন্ত্রনা দিল ।
আজ সে ঠিক করল, ওদের কোন মতেই ছাড়বে না ।
এক সন্ধ্যায় মেয়েটা চলল, সেই চেনা মদের ডেরায় ।
যেখান থেকেই ওরা পাঁচজন তাড়া করেছিল ।
ছেলেগুলি দেখেই ওকে চিনতে পারল। মেয়েটা এগিয়ে গেল।
একদম সামনে থেকে ছুঁড়ে দিল একটা বোতল।
ওরা ছটপট করতে করতে এগিয়ে এল।
আজ আর পারল না। মেয়েটা এগিয়ে গেল থানার দিকে।
দু’টো হাত বাঁড়িয়ে দিল পুলিশের দিকে। অ্যারেষ্ট করুন এবার ।
“আমি বড় ক্লান্ত”।
মেয়েরা এভাবেই ছুটবে প্রতিবাদে ।
বিচার তবু অসমাপ্ত।