Site icon আলাপী মন

ভালোবাসার দিন

ভালোবাসার দিন
-রিতম কর

 

 

Whatsapp এ একগুচ্ছ শাড়ির ছবি পাঠিয়েছে দিতি।বিকেলের জন্য কোনটা পড়বে, অর্ঘকে বেছে দিতে হবে। বেচারা অর্ঘ! গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছে যেটাই বলবে, সেটাই খারিজ হবে। এদিকে না বেছে দিলে মহারানীর মুখ ভার! অতএব অর্ঘ’র জবাব লালটা পর।
মেসেজ সিন হলেও no reply. ঘন্টাদুয়েক পরে টুংটাং। লাল শাড়ি পরা ছবি ‘কী, খুশি তো?’
-পাগলী একটা….

পার্ক স্ট্রিটের এক নামী রেস্তোরা কর্মী কৌশিকের আজকে দম ফেলার ফুরসৎ নেই, বিকেল হলেই ভরে উঠবে সমস্ত রেস্তোরাঁ। তার আগেই সবকিছু সাজিয়ে, গুছিয়ে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁটিকে আরো মায়াবী করে তুলতে হবে। কিন্তু তাও তার মধ্যেই ম্যানেজারকে বলে দুপুরে ঘন্টা দেড়েকের ছুটি আদায় করেছে ও।প্ল্যানেটরিয়ামের গেটের কাছেই অপেক্ষা করবে রিয়া।তাই ও আগে ভাগেই মোড়ের মাথায় রতনের দোকানে দু’টো গোলাপের কথা বলে এসেছে,
রতনের আজকে মন খুব ভালো, সকাল থেকেই দু’হাতে বিকোচ্ছে ছোট, বড়ো হরেক রকম লাল গোলাপ, আজকে রতনও ঠিক করেছে রিমিকে নিয়ে রাতের দিকে বাইরে খাবে কোথাও, রিমির অনেকদিনের ইচ্ছে….

সকালে চায়ের কাপ হাতে টিভিটা খুলে বসতেই, গান শুরু হলো ‘পুরানো সেই দিনের কথা…’ মনোজবাবুর পাশেই এসে বসলো অনুরুপা….’হ্যাঁ, গো কীসব বলছে, আজ নাকি ভালোবাসার দিন! তোমার মনে আছে সেই আমাদের বাড়ির সামনের মাঠটায় খেলতে এসে তুমি কিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে! আর দাদাকে দেখলেই ভোকাট্টা!’….হালকা হেসে বোঝালেন সবটাই মনে আছে মনোজবাবুর, সেই জন্যই তো নাতির কাছে জানতে পেরে অনুরুপার জন্য তিনিও চুপি চুপি সুচিত্রা মিত্র’র একটা ক্যাসেট এনে রেখেছেন, ওর জন্য আজকের উপহার….

ভিক্টোরিয়ার সামনে দিয়ে বাসটা যেতেই বছর চল্লিশের অমিতের চোখে পড়লো কত যুবক, যুবতীর ভিড় আজকে এখানে, চারিদিকের দোকানগুলোও আজকে যেন একটু অন্যরকম সাজানো, সবাই হাসছে,ফটো তুলছে… চারিদিকে যেন এক না বলা উৎসব…এদের দেখে মনটা হঠাৎই বড্ড ভালো হয়ে গেল ওর। সকালেই বেরোনোর সময় স্বপ্না’র সাথে খানিক থটমট লেগেছে…রাতে ফিরেই মানাতে হবে, ম্যাডামকে. . আজকে রাগ করে থাকা যায় নাকি…!!

সবকিছুরই মূলে ওই যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ভালোবাসার দিন। নিন্দুকেরা বলে ভালোবাসার আবার আলাদা দিন লাগে নাকি! প্রত্যেকটা দিনই তো ভালোবাসা যায়…!! কিন্তু চারিদিকে যখন এত খারাপ, এত টানাপোড়েন তখন একটা দিনকে শুধু ভালোবাসার জন্য রাখলে ক্ষতি কি! শেষমেশ তো ভালো থাকা, ভালোবাসারই প্রচার করছি…
কত প্রত্যাখ্যাত হৃদয় অভিমানে স্টেটাস দেবে আজকে,
কিন্তু কিছুজন তো টিউশন এ পাশে বসা মেয়েটাকে বলতেও পারবে…
হয়তো সামনেই পরীক্ষার চিন্তা, কিন্তু তার মাঝেও একটু টাটকা হাওয়া হয়তো আসবে যুবক মনে….শেষ হবে কত মান, অভিমানের পালা…
দিনের শেষে কিছু বেশি রোজগারে রতনও হাসবে, মনোজবাবু ও চল্লিশ বছর আগের অনুরুপাকে আবার দেখতে পাবেন….কিছু মন ভাঙবে,আরো কিছু হারিয়ে যাওয়া কবিতা লেখা হবে…
কিন্তু তাতে কি, সবটাই তো সেই ভালোবাসাকে ঘিরেই নাকি…

ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে…

Exit mobile version