গেষ্টহাউসের সেই রাত
-পার্থসারথি
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যখন নামলাম তখন সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। পশ্চিম দিগন্তে তাকিয়ে বুঝলাম সূর্যদেব অনেক আগেই বিশ্রাম নিতে চলে গেছেন তাঁর নিজের ডেরায়। মাঘমাসের শীতেমোড়া সন্ধ্যা। আমি যে জায়গায় এসে পৌছেছি তার চারপাশটা দেখে মনে হচ্ছে সবত্র যেন কয়েক শতাব্দীর প্রাচীনতা দাঁত কিড়মিড় করছে। ট্রেন থেকে নেমে শরীরের জড়তা কাটিয়ে উঠতে একটু আড়মোড়া ভাঙার মতো করে পেশীগুলোকে একটু চনমনে করে নিচ্ছি এমন সময় কে যেন পেছন থেকে ডাকলো-
“এই যে ও মশাই? শুনছেন? ঘড়িতে এখন কটা বাজে বলুন তো?” দেখলাম প্ল্যাটফর্মের রেলিংয়ের ধারে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একটি লোক।
আমি বললাম,”সাতটা।”
লোকটা বললো,”অনেক দেরী হয়ে গেল মনে হচ্ছে।”
আমি বললাম, “আপনি?”
“আপনি তো বলরামপুরে যাবেন?” বললো লোকটি।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম প্রথমে, তারপর ভাবলাম হয়তো এখানে যেসব যাত্রীরা নামে তাদের অধিকাংশের গন্তব্য বলরামপুরই হয়ে থাকে।
“আমি জানি আপনি বলরামপুরে কোথায় উঠবেন?গেষ্টহাউসে, তাই না?” বলতে বলতে লোকটা উঠে এলো প্ল্যাটফর্মে।
এবার কিন্তু অবাক হলাম যেন একটু বেশী। মনে মনে ভাবলাম,”এই লোকটা এতকথা জানলো কি করে?” পরমুহুর্তেই আবার ভাবলাম, “লোকটা গেষ্টহাউসের কোনো কর্মচারী টর্মচারী হবে হয়ত! যাক গে-! “আমি লোকটাকে প্ল্যাটফর্মের আলোতে দেখতে লাগলাম।
লোকটার পরনে ছিলো একটা ময়লায় কালচে হয়ে যাওয়া কাপড়, খদ্দরের শার্ট ও সারা গায়ে একটা কালো চাদর জড়ানো, মুখটা বেরিয়ে আছে শিয়ালের মুখের মতো; চাদরের নীচে শার্টটা দেখা যাচ্ছে, তার চেহারায় লক্ষ্য করলাম যেন একটা পারলৌকিক ছলনা ছায়ার মতো ঘিরে রয়েছে, কঙ্কালসার শরীরের উপরে সৃষ্টিকর্তা যেন নিতান্ত অনীহার সঙ্গে একটা প্রকান্ড মাথা বসিয়ে দিয়েছে, চোয়াল দু’টোতে পতনোন্মুখীনতার অনিশ্চয়তা পোড়োবাড়ির ঝুলে পড়া কার্নিশের মতো, চোখগুলোতে যেন পাতালরহস্যের ইতিকথা। লোকটাকে দেখে আমার যেন কেমন একটা মনে হলো, মনের ভেতর একটা জমাট রহস্য যেন ফোঁস ফোঁস করছে। তবু আমি মনের ভাব চেপে রেখে বললাম,”তা আপনিও কি বলরামপুরে যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ ওখানেই যেতে হবে” চাপাগলায় লোকটা বললো।
বললাম, “তাহলে তো ভালোই হলো, একজন সঙ্গী পেলুম!- চলুন এখন একটু চা খাওয়া যাক। পরে রওনা হওয়া যাবে”
“আজ্ঞে, আমি চা খাই না।আপনি চাইলে খেতে পারেন,আমি এখানেই রয়েছি –আপনি খেয়ে আসুন।”
মনে মনে ভাবলাম,”কলিযুগের অবতার নাকি অপরের দয়া গ্রহণ করেন না।যাক্ গে—“ততক্ষণে ঠান্ডাও বেশ জাঁকিয়ে পুরো এলাকাটাকে কবজা করেছে,ইতিমধ্যে সময়ও গড়িয়ে গেছে অনেকখানি। চারদিকে যেন একটা অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা ,আমার সঙ্গে যে দুচারজন যাত্রী নেমেছিল এখানে তারা অনেক আগেই যে যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিয়েছে। মাঘমাস উত্তুরে ঠান্ডা হাওয়া পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেন বরফ ঢেলে চলেছে।শুক্লাচতুর্থীর ফ্যাকাশে জ্যোৎস্নায় চারদিক যেন মোহময়ী হয়ে উঠেছে।
আমি পায়ে পায়ে স্টেশন চত্বরে একটা টি স্টলের দিকে এগিয়ে গেলাম।বেঞ্চে বসে চায়ের অর্ডার করতেই একটা ছেলে আমার হাতে মাটির ভাঁড় ধরিয়ে দিলো।চায়ে চুমুক দিতে দিতে লক্ষ্য করছিলাম আমার জন্য প্রতীক্ষিত লোকটি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে,মনে হচ্ছে তার মনের গভীরে যেন একটা কুটিল ইচ্ছা ক্রমশঃ জমাট বাঁধছে–অবশ্য এটা আমার বোঝার ভুলও হতে পারে।
প্ল্যাটফর্মের পেছনে দেখলাম তখনও একজন রিক্সাওয়ালা চাদরমুড়ি দিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে,যাইহোক তারসঙ্গে কথাবার্তা বলে আমি এবং প্ল্যাটফর্মে দেখা হওয়া লোকটি আরও আধঘন্টার মধ্যে ঐ ভ্যান রিক্সায় চড়ে স্টেশন ছাড়িয়ে বলরামপুর অভিমুখে রওনা হয়ে গেলাম। দুধারে সোনাঝুড়ির জঙ্গল–চারদিকে একটা রহস্যময়তা যেন থাবা পেতে বসে আছে,তার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছে যেন আমার সঙ্গের এই লোকটির পান্ডুর ভাবলেশহীন নিরবতা—-যাইহোক এখানে বলে রাখা ভালো আমার বলরাম পুরে আগমনের কারণটা–আমি কোলকাতায় একটি অডিট আফিসে চাকরি করি বলরামপুর যাচ্ছি অডিটের কাজে ওখানে একটা ইউকো ব্যাঙ্ক আছে সেখানেই আগামী পরশু থেকে অডিটের কাজ শুরু করতে হবে।ওখানকার ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কৌশিক রায় আমার থাকার ব্যবস্থা ওখানেই করেছেন অবশ্য কালকে আমার আর একজন সহকারীও এসে পৌঁছে যাবে।কৌশিক বাবুর নির্দেশ মতোই হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে নেমেছি এই জনমানব শুন্য স্টেশনে।
রিক্সা ভ্যান একটা একটানা ক্যাঁচড়,ক্যাঁচড় শব্দ তুলে চলছে তো চলছেই অবশেষে ঘন্টাখানেক পর আমরা আমাদের গন্তব্যের কাছাকাছি এসে পৌঁছলাম অর্থাৎ ভ্যান ওয়ালার পুর্ব কথা মতো– নন্দীপুরের আমবাগান। এখান থেকে বড়রাস্তার ডানদিকে আমবাগানের ভেতর হয়ে আরও ঘন্টাখানেকের হাঁটা পথে আমাদের অভীষ্ট সেই গেষ্টহাউস-এ পৌঁছে যেতে পারবো।
ভ্যান ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমি এবং স্টেশনের সেই লোকটি হাঁটা লাগালাম বাগানের ভেতরে রুক্ষ মাটির রাস্তা ধরে।আমার ডানহাতে ছিলো একটা অ্যাটার্চিকেশ ও কাঁধে লম্বা হাতলওয়ালা চামড়ার ব্যাগ।
চারদিকে শুধু ঝিঁঝিঁ র ডাক আর নিশাচর পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসছেনা।কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমিই নিস্তব্ধতা ভেঙে লোকটিকে প্রশ্ন করলাম,”আপনার বাড়ি কি বলরামপুরেই ,না?–“
সে বললো,”না”।আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম,”তবে?”লোকটা আর কোনো উত্তর দিলো না।
ঐটুকুই যা কথা হলো তার সঙ্গে ।আবার একটা জমাট নিস্তব্ধতা।আমি হাঁটছিলাম লোকটার পিছু পিছু কারণ লোকটাকে কেমন যেন আমার একটু একটু সন্দেহ হয়েছে প্রথম থেকেই তাই তার পেছনে পেছনে হ়াঁটাই সমীচীন বলে মনে হয়েছিল আমার।
এবার লোকটাই হঠাৎ আমাকে বললো ,” আপনিতো ঐ গেষ্টহাউস এ থাকবেন?নাকি?
আমি বললাম,”হ্যাঁ ওখানেই তো থাকার ব্যবস্থা হয়েছে,কেন বলুন তো?’মনে মনে ভাবলাম,”লোকটার আবার কোনো কুমতলব টতলব নেইতো!”
লোকটি বললো,”জায়গাটা খুব একটা ভালো নয়,আপনার মতো অনেক সাহেব ও বাড়িতে এর আগে উঠেছিলেন কিন্তু একরাতের বেশী টিকতে পারেনি।”মনে মনে ভাবলাম ,”কৌশিক বাবুর কাছেতো তেমন কিছুই শুনিনি–গেষ্টহাউসের যে এমন একটা বদনাম আছে!—-অবশ্য কৌশিকবাবু তো মাসখানেক হলো বদলি হয়ে এখানে এসেছেন তারপক্ষে এতো ঘটনা জানাও বোধহয় সম্ভব নয়।”
যাইহোক আমি একটা সিগারেট ধরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম একটু, ততক্ষণে দেখি লোকটা বাঁদিকে ঝোপের মধ্যে নেমে যাচ্ছে, আমিতো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম এবং চিৎকার করে বলে উঠলাম,”ও মশাই!করছেন কি?ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?ওদিকে তো কোনো রাস্তা নেই,তবে?”
লোকটা চাপা গলায় বললো,”এখান থেকে একটু আগেই গেষ্টহাউস পেয়ে যাবেন, চিন্তা নেই,চলে যান!আমি এ পর্যন্তই -তার বেশী যাওয়ার আমার উপায় নেই।”
তারপর যা ঘটলো তা মোটেই কোনো প্রাকৃত ঘটনা নয়,দেখলাম ঐ ঝোপের মধ্যে একটা গাছের খ্যাংড়া ডালে একটা কাপড় মৃদু বাতাসে দুলছে।ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে একটু এগিয়ে গিয়ে ঝোপের উপর ফেলতেই যা দেখলাম তাতে আমার ভেতরটা যেন একটা অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠলো– দেখলাম যে কাপড়টা দুলছে ওটা ঐ লোকটার আর মাটিতে যে শার্ট ও কালো চাদরটা পড়ে আছে সেগুলোও তারই ,কিন্তু লোকটা কোথায়?কৌতূহল বশে ঝোপের এদিক ওদিক টর্চ নিয়ে দেখতেই যা দেখলাম তাতে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমস্রোত বয়ে যেতে লাগলো।দেখলাম একটা মরার মাথার খুলি ও তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কতকগুলো হাড় ।ব্যাপারটা এতক্ষণে আমার মাথায় ঢুকলো আমি সেখানে আর একটুও অপেক্ষা না করে হনহন করে এগিয়ে গেলাম গেষ্টহাউসের দিকে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম একদম গেষ্টহাউসের গেটে।
গেটের এপার থেকে একবার হাঁক পারলাম,”ভে-ত-রে কে-উ আ-ছেন?আ-মি অ-ডি-ট-বা–বু!”
দেখলাম ভেতরবাড়ির দরজা খুলে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটা লোক –এই গেষ্টহাউসের কেয়ারটেকারই হবে বোধহয়! হ্যারিকেন হাতে এগিয়ে আসছে। গেটের কাছে এসে ডানহাতটা কপালে ঠেকিয়ে নমস্কার জানিয়ে বললো,”আসুন সার্।”বলে গেটের তালা খুলে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল।
বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখলাম ভেতরটা বেশ সাজানো তবে আলোর অভাব ।একটা হ্যাজাক জ্বলছে বটে, তবে এই পেল্লাই সাইজের রুমের পক্ষে যথেষ্ট নয় ।সামনেই সোফার উপর বসে চারদিকটা বেশ ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলাম।ঘরের মধ্যে আসবাব পত্রের প্রাচুর্য চোখে পড়ার মতো।সামনে একটা ছোট টি-টেবিলের উপর আমার ব্যাগ ও অ্যাটার্চিকেশটা নামিয়ে রাখলাম।একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বাইরে বেরিয়ে এলাম,পুরো গেষ্টহাউসটা ভালো করে একনজর দেখে নিলাম।গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই মাঝের বড় রুমটা ছাড়াও রয়েছে আরও পাঁচ পাঁচটা রুম, সবগুলোই তালাবন্ধ, লম্বা একটানা বারান্দা,বারান্দার দেওয়াল প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু তার উপর দুফুট আন্দাজ ব্যবধানে লোহার গ্রিল বসানো।একদম মাঝখানে প্রধান দরজা,তারসামনে গাড়ি বারান্দা। কিছুক্ষণ পর আবার ভেতরে এসে সোফাটায় বসলাম এবং লক্ষ্য করলাম এই বড় রুমটার একপাশে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির গ্রিলের দরজা।সবকিছুই ঠিকঠাক, একটা জিনিস চোখে পড়তেই একটু আশ্চর্য হলাম,দেখলাম সমগ্র বাড়িটায় ইলেক্ট্রিফিকেশনের সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তার ফল থেকে বাড়িটা যেন বঞ্চিত–গেটের বাইড়েও দেখলাম বৈদ্যুতিক তারের পোল তবে এ বাড়িতে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছে না।মনে মনে একটা সদুত্তর পাবার চেষ্টা করছি এমন সময় দেখি এই গেষ্টহাউসের কেয়ারটেকার এসে হাজির।তাকে দেখেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম,”আচ্ছা এখানে বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয়না?সবই তো ব্যবস্থা রয়েছে দেখছি, তাহলে?”
কেয়ারটেকার বললো,”এখানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সংযোগ নেই বাবু, তার চুরি গেছে বহু এলাকায় তাই।”
বললাম ,”এরজন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ?”
সে বললো,”বহুবার সংযোগ ঠিক করা সত্ত্বেও কোনো সুরাহা হয়নি বাবু,তার-চোরেরা বার বার তার চুরি করে নিয়ে চলে যায়।”
কথায় কথায় জানতে পারলাম লোকটির নাম দ্বিজেন দাস, পাশের গ্রাম বিষ্ণুপুরে তার বাড়ি, আজ দশ পনেরো বছর সে এখানে কেয়ারটেকার গিরি করছে।বললাম,”দ্বিজেন একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে পারবে?”
সে তৎক্ষণাৎ সম্মতি জানিয়ে বাইরে চলে গেলো।আমি ততক্ষণে আমার অ্যাটার্চিকেশ থেকে ট্র্যাকস্যুট ,সাবান,হ্যান্ডওয়াশ ও টাওয়েল বার করে সামনের টি-টেবিলের উপর রাখলাম ।এটা অবশ্য আমার থাকবার রুম নয়,এটা সভাকক্ষ অর্থাৎ অনেকটা বৈঠক খানার মতো,বাইরে থেকে সরকারী আমলারা এলে এখানেই তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। ঘরটা বেশ বড় ।মাঝখানে বড়মাপের একটা গোলাকার দামীকাঠের টেবিল তার চারপাশে খান পঁচিশ গদিআঁটা চেয়ার সুন্দর ভাবে সাজানো,তাছাড়াও রয়েছে দেওয়াল ঘেঁষে একটা বড় সোফা ও ছোট ছোটো দুটো টি-টেবিল।
একটু পরেই দেখলাম দ্বিজেন চায়ের ট্রেতে চা ও কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে এসে হাজির হলো।
চা টা খেয়ে টেবিলের উপর জিনিসপত্র তুলে নিয়ে আমি দোতলায় স়িঁড়ি বেয়ে উঠে দেখলাম ডানদিকের একেবারে শেষ রুমটার আগের রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ হয়েছে।দোতালার ঝোলাবারান্দায় দামীকাচের বড় বড় চার পাঁচটা জানালা।এককথায় গেষ্টহাউসের পুরো বিল্ডিংটা খুব সফিস্টিকেটেড্ ।আমার জন্য বরাদ্দ রুমটায় ঢুকে চারদিক বেশ ভালো করে দেখে নিলাম এবং জিনিস গুলি যথাস্থানে গুছিয়ে রাখলাম। দশ বাই দশ রুম ।রুমের পেছনে দুটো মাঝারি সাইজের জানালা তাতেও দামীকাচ লাগানো পাল্লা এবং ঝোলাবারান্দার দিকটায় একটা দামী কাঠের কারুকার্য করা দরজা, এই দরজা হয়েই সিঁড়ি বেয়ে একটু আগে ঢুকেছি আমার রুমে।দোতালায় ওঠার সিঁড়ির দরজা ঝোলাবারান্দার ঠিক মাঝের অংশে উন্মুক্ত। ঝোলাবারান্দার এই অংশটি বাইরের দিকে আরও একটু প্রশস্ত হয়ে একেবারে ঠিক গাড়িবারান্দার মাথায় চূড়ার মতো শোভা পাচ্ছে।আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম দোতলায় ঝোলাবারান্দার দুইপ্রান্তে অত্যাধুনিক কারিগরীবিদ্যার দৌলতে তৈরীকৃত দুটি টয়লেট।
আমার জন্য বরাদ্দ রুমটির একধারে একটা লোহার খাট,পূর্ব থেকে পশ্চিমে সাজানো ,একটা আলমারী ও খান কতক ফাইবারের চেয়ার এবং ঘরের এককোনে একটা ছোটো টেবিল।এবং ঘরের দরজার ডান দিকের কোণে একটা কারুকার্য করা পাথরের কুঁজো।
সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো যে জিনিসটা তা হলো ঘরটার নিট্ অ্যান্ড ক্লিন এমবিয়েন্স মানে একেবারে ঝকঝকে চেহারা।যে কোনো লোকের কাছেই ব্যাপারটা চোখে ধরার মতো।হঠাৎ দ্বিজেন ঘরে ঢুকে জানালো সে নন্দীপুরের বাসস্ট্যান্ড থেকে আমার রাতের খাবার নিয়ে এসেছে সাতটার সময়।
আমি দ্বিজেনকে কাছে ডেকে স্টেশন থেকে আসার সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে জানাতেই দ্বিজেনের চোখে মুখে দেখলাম একটা ভয়ের আস্তরণ।
একটু আসস্ত হয়ে দ্বিজেন বলতে লাগলো,”তবে শুনুন ঘটনাটা খুলেই বলি আপনাকে।আজ থেকে প্রায় ষোলো সতেরো বছর আগে এখানে এক ভদ্রলোক শহর থেকে জরিপের কাজে এসেছিলেন এই বলরামপুর অঞ্চলে এবং তিনি এই গেষ্টহাউসেই আস্তানা গেড়েছিলেন প্রায় দিন দশেকের জন্যে তার সঙ্গে আরও দুজন তার সহকর্মীও ছিলো। তারাও তার সঙ্গে এই গেষ্টহাউসেই থাকতো ।সারাদিন ধরে এ অঞ্চলের এখানে ওখানে জরিপের কাজ শেষে সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসতেন এখানে।এইভাবেই বেশ কয়েকটাদিন পার হলে তার সঙ্গের সহকর্মী দুজন কি একটা জরুরী কাজে কোলকাতা ফিরে গিয়েছিল।এবং দিন দুয়েকের মধ্যে তারা আবার যখন এখানে ফিরে আসে দেখে সেই ভদ্রলোক উধাও—তারা তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার কোনো হদিশ পায়নি।”
আমি মাঝে দ্বিজেনকে থামিয়ে বললাম ,”পুলিশে খবর দেওয়া হয়নি?”
“পুলিশ কে খবর দেওয়া হয়েছিল এবং তারা সেই ঘটনার প্রায় দিনকুড়ি পড়ে ঐ ভদ্রলোকের ধূতি ,চাদর ও শার্ট অক্ষত অবস্থায় আবিস্কার করে নন্দী পুরের আমবাগানের একটি ঝোপের ধার থেকে এবং তার কিছুটা দূরেই পাওয়া গিয়েছিল তার পচাগলা লাশ ,পুলিশি তদন্তে জানা যায় তার মৃত্যু হয়েছে কোনো বন্যজন্তুর আক্রমনে।সেই থেকে রাতের বেলা আপনার মতো সাহেব সুবো লোক এই গেষ্টহাউসে যারাই এসেছে তারা ঐ একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে।”
ঘটনাটা শুনে ভয় যে পেলাম না তা ঠিক নয় কিন্তু ভেতরে ভেতরে যেন একটা রহস্যের গন্ধ পেয়ে মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো।
ভদ্রলোকের মৃত্যু যে বন্যজন্তুর আক্রমনে ঘটেনি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কারণ বন্য জন্তু আক্রমন করলে তার জামা ,কাপড় ও চাদর অক্ষত অবস্থায় থাকতো না ।পুলিশ মনে হয় ব্যাপারটা নিয়ে আর বেশী ঘাঁটাতে চাইনি।আর তাছাড়া আজ থেকে ষোলো সতেরো বছর আগে পুলিশি তদন্তের ধরণ-ধারণও আজকের মতো এতটা কমপ্যাক্ট ছিলো না। তবে?তবে কি–!!
যাহোক দ্বিজেন বললো ,”বাবু খাওয়া দাওয়া সেরে ভালো ভাবে দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন ,অনেকটা রাস্তা জার্ণি করে এসেছেন। আমি কাল সকাল ছটাতেই এসে হাজির হবো কোনো ভয় নেই।” আমি দ্বিজেনকে জিজ্ঞাসা করলাম ,”আচ্ছা দ্বিজেন এখান থেকে মাইল টেকের মধ্যে কোনো জনবসতি নেই?”দ্বিজেন বললো এই গেষ্টহাউসের পূর্বদিকে একটা কুমোরপাড়া রয়েছে, ব্যাপারটা জেনে একটু আস্বস্ত হয়ে আবার বললাম,”তুমি এতো রাত্রে বিষ্ণুপুর যাবে?তোমার ভয় করবে না ?’
দ্বিজেন জানালো যে সে আজ আর বিষ্ণুপুর যাবে না বলরামপুরেই থাকবে তবে এখানে নয় দাস পাড়ায় সেখানে তার শ্বশুর বাড়ি।তার স্ত্রী নাকি আসন্ন প্রসবা কখন যে পেন উঠবে বলা যায়! তাই তাকে সেখানে থাকতেই হবে।আমি দ্বিজেনকে বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে যেতে বললাম।যাইহোক দ্বিজেন আমার কথামতো যথারীতি গেটে তালা লাগিয়ে তার সাইকেলের বেল বাজাতে বাজাতে রওনা হয়ে গেলো তার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।আমি ও গেষ্টহাউসের অভ্যন্তর ভাগের প্রধান দরজায় তালা লাগিয়ে আমার রুমে ফিরে এলাম এবং রুমের দরজা ভালো ভাবে বন্ধ করলাম।বলরামপুর গ্রামটা বেশ বড় গ্রাম এখান থেকে বর্দ্ধমান নাকি বেশ কাছেই কৌশিকবাবু ফোনে সেই রকমই জানিয়েছিলেন।
রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারটা ,আমি যথারীতি খাওয়া দাওয়া শেষ করে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম নিশীথিনীর সেই রহস্যময় রূপ।
চারদিকে একটা জমাট নিস্তব্ধতা যেন নিশ্বাস ফেলছে। সমগ্র প্রকৃতি যেন হয়ে উঠেছে রূপকথার সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের কোনো অজানা অচেনা দেশ।সিগারেট খাওয়া শেষ করে বোতল থেকে একটু জল খেয়ে নিলাম।ঘুমানোর আগে আমার একটু গল্পবই পড়া অভ্যাস ,তাই একখানা বড় মোমবাতি জ্বালিয়ে টেবিলের উপরে রেখে বইটা পড়তে লাগলাম।কিছুক্ষণ পড়ার পর ঘুমে জড়িয়ে আসতে লাগলো দুচোখ তাই আর জেগে থাকতে পারলাম না শুয়ে পড়লাম খাটে লেপমুড়ি দিয়ে।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই হঠাৎ একটাশব্দে ঘুমটা ভেঙে যেতেই শুনতে পেলাম একটা চাপা গর্জনের মতো কিছু শব্দ।ধরমরিয়ে উঠে বসলাম বিছানার উপরে ভালোভাবে শুনতে লাগলাম এবং অনুধাবন করতে লাগলাম শব্দটার প্রকৃতি।শব্দের মাত্রা যেন ক্রমশঃ বাড়ছে।শব্দটা আর যাইহোক কোনো মানুষের বা বন্যজন্তুর হতে পারেনা।এ শব্দ যে করছে সে মানুষ বা জন্তুর মতো নয়,কারণ শব্দের মধ্যে একটা অতিপ্রাকৃতিক প্রভাব রয়েছে মনে হলো একসঙ্গে অনেক গুলো সিংহ ও হায়েনা চিৎকার করলে যেমন শব্দ হবে শব্দটা ঠিক তেমনই।এই অঞ্চলে সিংহ বা হায়েনার বাস যে থাকতে পারেনা তা দেখলেই বোঝা যায়।তাহলে এটা কোন জন্তুর গর্জন–আরো ভালো করে শুনতে লাগলাম এবং একসময় যা শুনলাম তাতে আমি শুধু অবাকই হলাম না ,ভয় ও পেয়ে গেলাম কিছুটা।আমি পরিস্কার শুনতে পেলাম ঐ গর্জনের মধ্যে জেগে উঠছে একটি নারীকন্ঠস্বর।কি ভয়ংকর সেই কন্ঠস্বর! সে যেন বলছে ,”বি-বি-বি-ব-ব-ব-স-স-স-ন-ন-ন হ-হ-হ আ-মি-শো-ষ-ণ-কা-রি-ণী-পি-শা-চি-নী।”
যার মর্মার্থ হলো–“বিবসন হ আমি শোষণকারিণী পিশাচিনী।”এবার ঐ জরিপের কাজে এখানে আশ্রয় নেওয়া ভদ্রলোকের মৃত্যুর কারণ আমর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল।
আরো ঘন্টা খানেক কেটে যেতেই আর কোনো শব্দ শুনতে পেলাম না,চারদিকে নরকের নিস্তব্ধতা।চাঁদ ডূবে গেছে প্রথম প্রহরেই; তাই চারদিকে প্রকৃতি যেন জমাট অন্ধকারে ডুবে আছে।জানালাটা একটু ফাঁক করতেই বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড়ে মধ্যে লক্ষ্য করলাম একটা মস্ মস্ আওয়াজ কেউ যেন হেঁটে চলেছে ভারী ভারী পা ফেলে–কতকগুলো কুকুর হঠাৎ ডেকে উঠেই আবার চুপ করে গেলো।ব্যাপারটা কি আরো ভালোভাবে জানতেই টর্চটা হাতে নিয়ে আমার রুমের দরজাটা খুলে বাইরে এলাম এবং অবশেষে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে এসে দাঁড়ালাম একেবারে বারান্দার প্রধান দরজার সামনে।এবং সেখানে কান পেতে রইলাম।হঠাৎ গেট খোলার শব্দে সত্যিই আমি ভয় পেয়ে গেলাম।তারপর শুনলাম গেষ্টহাউসের খোলা লনে কে যেন হেঁটে বেড়াচ্ছে।প্রথমটায় দরজা খোলার আমার সাহস হলনা।বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম এখন আমার কর্তব্য কি?মানুষের মন বলে ষষ্ঠ জ্ঞানেন্দ্রিয়টি বড় অদ্ভুত যখন সে অবশ্যম্ভাবী কোনোকিছুর টের পায় তখন মরিয়া হয়ে ওঠে–আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হলোনা।টর্চ হাতে দরজাটা খুলেই সোজা গেটের বাইরে চলে এলাম,আবার যখন টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করছি– দেখলাম টর্চটা আর জ্বলছে না।টর্চটা জ্যাকেটের পকেটে ভরে ক্ষীণ নক্ষত্রালোকে যা দেখলাম তা অত্যন্ত ভয়ংকর,দেখলাম একটা উলঙ্গ নারীমূর্তি একটা কুকুরের শরীর দাঁতে চেপে ধরে আছে তখনও কুকুরটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে।আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না মনে মনে ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করতেই মনের ভেতর জেগে উঠলো একটা অসীম সাহস আর সেই সাহসের বলেই আমি বাঘের মতো চিৎকার করে উঠলাম,”কে তুই?”
উলঙ্গ ঐ নারীমূর্তি ভয়ংকর এক নাকিসুরে বলে উঠলো,”হুঁ—আঁ—আঁ আ-মি-শোষণকারি পিশাচিনী ,আমাকে সৃষ্টি করেছে এক তান্ত্রিক ,পালা এখান থেকে।”
আমার গলায় ছিলো মক্ষম মৃত্যুঞ্জয় কবচ ,আমি জানি এ কবচ যতক্ষণ আমার গলায় থাকবে ভুত-প্রেত-দানা-দৈত্য-পিশাচ আমার কুশপ্রমাণ বিঘ্নও ঘটাতে পারবে না।
দেখলাম কি ভয়ংকর সেই পিশাচিনীর মূর্তি
চুলগুলো সাপের মতো,সুতীক্ষ্ম স্তনবৃন্ত ,হাতের নখ গুলো যেন এক একটা ধারালো ছুরি আর মুখটা শিয়ালের মুখের মতো তাতে লকলক করছে একহাত প্রমাণ একটা জিভ আর দাঁত গুলো বেরিয়ে আছে তীরের ফলার মতো।চোখগুলো যেন আগুনের ভাঁটা।চারদিকে একটা পচা মাংসের গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম ,”কে সেই তান্ত্রিক যে তোকে সৃষ্টি করেছে?কি নাম তার?”
পিশাচিনী হুংকার ছেড়ে বললো,”ধনানন্দ তান্ত্রিক।কিন্তু সে আর বেঁচে নেই ,হা-হা–হা–আমিই তার রক্ত শুষে মেরে ফেলেছি হা-হা–হা”
কি ভয়ংকর সেই অট্টহাসি শুনলেই গায়ের রক্ত হিম হয়ে ওঠে।
আমি আবার বললাম ,”কেন তুই এভাবে এই অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিস আর নিরীহ জীব হত্যা করে নিজের রক্তপিপাসা মেটাচ্ছিস।তুই কি কোনো দিনই মুক্তি পাবিনা?”
এবার সে আমার উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হতেই আমি গলার মৃত্যুঞ্জয় কবচ খানা ছিঁড়ে হাতের মুঠোতে পুরে সামনে ধরতেই পিশাচিনী ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।আমি যত এগোতে থাকি পিশাচিনী ততই পিছতে থাকে এভাবে কতটা পথ যে অতিক্রম করেছি মনে নেই একসময় দেখলাম একটা সূড়ঙ্গের মুখে দাঁড়িয়ে আছে ঐ পিশাচিনী আর আমি তার সামনে। আমি আরও এগিয়ে গেলাম তার দিকে সেও ঐ মৃত্যুঞ্জয় কবচকে ভয় পেয়ে ঢুকে পড়লো সূড়ঙ্গের ভেতরে ,সঙ্গে সঙ্গে যেন দৈববাণীর মতো কিছূ একটা শুনলাম এবং বুঝতে পারলাম সুরঙ্গের মুখে পাশের ঐ বড় পাথরখানা চাপা দিয়ে তার সামনে একটা ত্রিশূল মাটিতে পুঁতে দিলে ঐ পিশাচিনী আর কোনোদিনই বেরিয়ে আসতে পারবে না। দেখলাম সত্যি সত্যিই একখানা বড় পাথর রয়েছে সুড়ঙ্গের ঠিক ডানদিকে এবং পাথরের নীচেই পড়ে রয়েছে একখানা মরচে ধরা ত্রিশূল।আমি দৈববাণীর নির্দেশমতো পাথরটা অত্যন্ত কষ্ট করে সুড়ঙ্গের মুখে চাপা দিয়ে তার ঠিক সামনে ত্রিশূলটা মাটিতে পুঁতে ফেললাম।
হঠাৎ একটা ঝড়ের সোঁ সোঁ আওয়াজ আমার কানে আসতে লাগলো। আমি সামনের একটা কি যেন গাছের দিকে তাকাতেই স্তম্ভিত হয়ে দেখলাম সত্যিই এক তান্ত্রিকের আবক্ষ মূর্তি যেন জ্বলজ্বল করছে।হঠাৎ ঐ তান্ত্রিকের জলদগম্ভীর কন্ঠস্বর শুনতে পেলুম –“আ–জ–থে–কে–স–ব–শা–ন্–তি,আ–র–ঐ–পি–শা–চি–নী–কা–র—ও–কো–নো–ক্ষ–তি–ক–র–তে–পা–র–বে–না–না–না।”কথাগুলো ঐ উন্মুক্ত বনপ্রান্তরে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে হতে অবশেষে মিলিয়ে গেলো দূরদিগন্তে।তারপর আবার সেই জমাট অন্ধকার আর অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা।কতক্ষণ যে সেখানে স্থানুর মতো দাঁড়িয়েছিলাম বলতে পারবো না,হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেলাম একটা পাখির একটানা কর্কশ আওয়াজে।চারদিক ভালোকরে আর একবার চেয়ে দেখলাম–আঃ কি প্রশান্তি! বুকভরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম বারবার।দেখতে দেখতে ভোর হয়ে এলো,আমি ক্লান্ত পায়ে ফিরে এলাম গেষ্টহাউসে।এসে দেখি গেট যথারীতি তালাবন্ধ, এবার বুঝতে আমার একটুও অসুবিধা হল না যে–কাল রাত্রে আমি কোনো এক অতিপ্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে সম্মোহিত অবস্থায় গেট পেরিয়েছি বিনা বাধায়। অতএব বাধ্য হয়ে গেট পেরলাম ডিঙিয়ে এবং গেষ্টহাউসের ভেতরে প্রবেশ করলাম। এবং বুঝতে পারলাম কাল রাত্রে প্রায় মাইল চারেক পথ হেঁটে পিশাচিনী কে চিরবন্দিনী করে এসেছি।
চারদিক একদম ফরসা হয়ে গেলো সকাল ছটার সময় দ্বিজেন যথারীতি এসে পৌছালো এবং বললো ,”রাত্রে ভয়টয় করেনিতো বাবু?ঘুম হয়েছিলো তো ঠিক?”
আমি গতরাত্রির সমস্ত ঘটনা চিরদিনের জন্য হৃদয়বন্দী করে রেখে বললাম,”খুব ভালো ঘুম হয়েছিলো।”
———সমাপ্ত————
বি.দ্র.:-গল্পে বর্ণিত স্থানাদি সম্পূর্ণ রূপে কাল্পনিক, একটা আপাত বাস্তবতা সৃষ্টির চেষ্টা মাত্র।