Site icon আলাপী মন

প্রভাতকল্পা

প্রভাতকল্পা
-রাখী চক্রবর্তী

সবিতাদেবী যখন নতুন বৌ হয়ে “আনন্দ ভুবনে” পা রেখেছিলেন তখন থেকেই বিন্দু তার প্রাণের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল।সবিতাদেবীর শাশুড়ি মা কখনও বিন্দুকে কাজের মেয়ে বলে ভাবতেন না বরং খুব কাছের পরিজন ভাবতেন। সবিতাদেবীর ঘরকন্নাতে বিন্দুর অবদান অনেক খানি ।সন্তান সম্ভবা সবিতাদেবীর যখন প্রাণের আশঙ্কা হয়েছিল বিন্দু রক্ত দিয়ে তার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিল ।এখন অবশ্য সব গল্প কথা।
সবিতাদেবীর দুই ছেলে ও বৌমারা বিন্দুকে কিছু তেই সহ্য করতে পারে না। সবিতাদেবীর চোখ বোঝার অপেক্ষাতে সব আছে। এ হেন পরিস্থিতিতেও বিন্দু হাসিমুখে থাকে।
সবিতাদেবীর ক্যানসার ধরা পড়েছে।ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। হয়তো তিন বা চার মাসের অতিথি তিনি। ছেলে ও বৌমারা তেমন কিছু ভাবছে না। বিন্দু যত্ন-আততির ত্রুটি করেনা।
একদিন বিছানা পরিষ্কার করতে গিয়ে সবিতাদেবীর ডায়েরিটা বিন্দুর চোখে পড়ে।সযত্নে নিজের কাছে ডায়েরিটা রেখে দিল বিন্দু। সবিতাদেবী কিছুই টের পেল না।অনেক খুঁজে যখন সবিতাদেবী ডায়েরিটা পেলেন না তখন বিন্দুকে ডেকে বললেন, -জানিস তো আমার ডায়েরিটা কেউ চুরি করেছে। কি লাভ হল বল তার!
-তোমার জিনিস আবার কে চুরি করবে?কোথায় রেখেছো ঠিক করে বলো, আমি খুঁজে দেবো।ৎচিন্তা করো না।

এদিকে বড় বৌ বিকেল থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করছে তার নাকি সোনার আংটি পাওয়া যাচ্ছে না। সন্দেহের তীরটা কিন্তু বিন্দুর দিকে। হয়তো আংটিটা আঙ্গুল থেকে বেরিয়ে গেছে আর বিন্দু নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। তিনদিন হয়ে গেল না ডায়েরি পাওয়া গেল আর না আংটি পাওয়া গেল।মার ডায়েরি না পাওয়াতে অবশ্য ছেলেদের তেমন চিন্তা নেই। কিন্তু আংটি,কতো সোনা।খোঁজ এখনও চলছে। বিন্দুর হাতল ভাঙ্গা টিনের বাক্স, কাপড়ের ভাঁজ, এমন কি বালিশের তুলোর ভেতরেও। কেন যে সবিতাদেবীর ছেলে দু’টো গোয়েন্দা বা পুলিশের চাকরি পেল না। ভাবতে একটু অবাকই লাগে। সবিতাদেবী আজকাল মনমরা হয়ে থাকে। বিন্দু জিজ্ঞাসা করে,
-কি এমন আছে ঐ ডায়েরিতে যে তুমি এতো ভাবছো? আর তুমিই তো বলতে, ঠাকুর যা করেন মঙ্গল এর জন্য করে। তাহলে এতো চিন্তা কিসের?
-আচ্ছা বিন্দু তুই রোজ কোথায় যাস? আগে তো বাইরে বের হতিস না। সাবধানে থাকিস রে।
বিন্দু মৃদু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দু’দিন পর বাড়িতে পুলিশ এল। না,না সবিতাদেবীর ছেলে বা বৌমারা
পুলিশ ডাকেনি। বিন্দুই পুলিশ ডেকেছে।সোনার আংটিটা যে বিন্দুই চুরি করেছে।শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
-দেখলে তো মা, কাল সাপ ঠিক ছোবল মারল।
-আমি বিশ্বাস করি না সবিতাদেবীর গলা বন্ধ হয়ে আসছে।
ঠিক সেই সময় দে পাবলিশার্স এর সম্পাদক শ্যামল চক্রবর্তী মহাশয় সবিতাদেবীর হাতে বই দিয়ে বললেন- আপনার লেখা গল্প ছাপা হয়েছে। বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাবে আপনার লেখা বই
বাড়ির সবাই তো অবাক।
-মার লেখা মানে, মা গল্প লিখত!
আর আমরা কিছুটি জানতে পারলাম না।
সম্পাদক মশাই বললেন- আপনাদের বাড়ির কাজের লোক বিন্দু জানতে পারল আর আপনারা ছেলে হয়ে জানতে পারলেন না।
সবিতাদেবী বললেন- বিন্দু সবটা খুলে বল
-যেদিন তোমার ডায়েরিটা দেখলাম, সেদিনই আমি তোমার ডায়েরিটা চুরি করে ছিলাম।বৌদিমনির সোনার আংটিটা আমি চুরি করেছি। আমি চোর দিদি আমি চোর।তাই তো পুলিশ ডেকেছি।
তোমার ডায়েরিতে লেখা তোমার শেষ ইচ্ছাটা কি যখন জানলাম তখন আমি পাপ পূণ্য সব জলাঞ্জলি দিয়ে তোমাকে খুশি দেখতে চেয়েছিলাম। আংটিটা বিক্রি করে সম্পাদক মশাইকেই টাকাগুলো দিয়েছিলাম। তুমি খুশি তো দিদি?
সবিতাদেবীর ছেলেদের মুখে রা নেই।বৌমারাও চুপ।
সবিতাদেবী ও স্তম্ভিত। তিনি ভাল করেই জানেন যে তার ছেলেরা তার লেখা গল্পগুলোকে কোনওদিনই প্রাধান্য দেবে না।হয়তো হেসে উড়িয়ে দিত ।
পুলিশকে তার কাজ তো করতেই হবে। হ্যাঁ বিন্দুকে হয় আংটির সমান টাকা দিতে লাগবে না হয় জেলে যেতে হবে।সবিতাদেবীর ছোট ছেলে বললেন- মার যে দায়িত্ব আমাদের নেওয়ার কথা ছিল সেটা বিন্দু মাসি করেছে। আংটির টাকাটা আমি দিয়ে দেব। বিন্দু মাসিকে ছেড়ে দিন।
বিন্দু খুব খুশি আজ। সবিতাদেবীর গল্প ছাপলো। ছোড়দা বাবুর বিবেক জাগল। বিন্দু মনে মনে বলল- আনন্দ ভুবনে আনন্দ আসবেই দিদি আসবেই।

Exit mobile version