বেলডাঙা এক্সপ্রেস
-অমিতাভ সরকার
আজও খুঁজে চলেছে মধুমিতা সেই বুড়ি মাকে,
হ্যাঁ মা তো বটেই। বেলডাঙ্গা এক্সপ্রেস। দৈনিক রেল যাত্রীরা এ নামে ডাকে। নটা কুড়ির ট্রেন, রোজ এই ট্রেনে যায় মধুমিতা তার অফিস করতে। যাতায়াত করতে করতে অনেকের মুখ চেনা হয়ে গেছে। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে, গল্পগুজব ঠাট্টা মজা সব রকমই হয়।
একদিন অফিসে প্রচুর কাজ ছিল। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর এক ডেপুটেশনে অফিস ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অফিস থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। দু’টো ট্রেন বেরিয়ে গেছে। স্টেশনে পৌঁছে পেয়ে গেল এক লেট ট্রেন। বিশেষ পরিচিত কেউ কেউ ছিল না স্টেশনে। শরীরটা ভীষণ খারাপ করছে মাথা টনটন করছে। কামরায় উঠে সিট পেয়ে গেছিল মধুমিতা। অল্প স্বল্প চেনা দু’একজন যারা ছিল তারা পরের ষ্টেশনে নেমে গেল। তীব্র মাথার যন্ত্রণায় মধুমিতা হঠাৎ করে পড়ে গেল । মাথায় চোট খেয়ে ভীষণভাবে ফুলে গেল, অসম্ভব যন্ত্রণা। কোনুইএর পাশে কেটে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। আশেপাশে যারা ছিল তারা শুধু দর্শনার্থী হয়ে বসে থাকলো। নিচে বসে ছিল এক শাক বিক্রেতা মাসি ঝুড়ি নিয়ে। সে এদিক ওদিক দেখে নিয়ে এগিয়ে এলো। এসে বললে মা দেখি দেখি তোমার হাতটা। অনেকটা কেটে গেছে। ইতস্তত না করে তার কাপড়ের আঁচল ছিঁড়ে, সেই কাপড় দিয়ে তার ক্ষত বেঁধে দিল। সেই সময় এক হকার মাথা ব্যথার মলম বিক্রি করতে কামরায় এসেছিল। তাকে ডেকে মাসি তার কোমরের খুঁটে বাঁধা পয়সা বার করে একটা মলম কিনে নিল এবং তার মাথায় মলম ঘষে দিতে লাগল। মধুমিতা একটু সুস্থ বোধ করল। মাসির পরের স্টেশনে নেমে যাওয়ার কথা ছিল। সে নামলো না বহরমপুর স্টেশন পর্যন্ত মধুমিতাকে পৌঁছে দিল। জিজ্ঞেস করল
মা তুমি যেতে পারবে তো? মধুমিতা সম্মতি জানাল হ্যাঁ পারব। মাসি বহরমপুর স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকলো ফেরার ট্রেনের জন্য। মধুমিতা টোটো ধরে বাড়ি পৌঁছে গেল। সেই অবস্থায় মধুমিতা মাসিকে মলমের দাম জিজ্ঞেস করতে পারেনি, সে কৃতজ্ঞতায় বিনীত হয়েছিলো। ভেবেছিল পরে মাসির সাথে দেখা হলে তার হাত ধরে কিছু টাকা গুঁজে দেবে এবং সেদিনের কথা স্মরণ করিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাবে।
বছর পেরিয়ে গেছে মধুমিতা আজও খোঁজ করে চলেছে বুড়ি মাকে, তার সেদিনের সাহায্যের কথা ভেবে।
বাহ