Site icon আলাপী মন

অবিস্মরণীয় উপহার

অবিস্মরণীয় উপহার
-অমিত কুমার জানা

 

দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সৈকত পড়াশোনায় খুব ভালো না হলেও খেলাধুলা এবং ছবি আঁকায় বেশ দক্ষ। সৈকত বরাবরই মিতভাষী এবং লাজুক প্রকৃতির ছেলে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান শুরু হলো। সৈকত অন্তরে একটা আনন্দমূলক চাপা উত্তেজনা অনুভব করলো। বিশেষত তার হাইজাম্পের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে যখন স্কুলের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক মহাশয়রা হাততালি দেয় তখন যে সে কি অপার্থিব আনন্দ পায় তা সেই-ই জানে। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ শ্রেণীর সবচেয়ে সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে সোনালী ও তার ক্রীড়াদক্ষতার বেশ প্রশংসা করে।
যথাসময়ে হাইজাম্প শুরু হলো। চারিদিকে দর্শকের সমাগম। কিন্তু সৈকত সোনালীকে দেখতে পাচ্ছে না কোথাও। তার মনটা যেন মনখারাপের মেঘে ছেয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় সেখানে হাজির হলো সেই অষ্টাদশী অপরূপা সুন্দরী। সৈকতের প্রেমাতুর মন আবেগমাখা খুশির জোয়ারে ভেসে গেল।
সে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির হাইজাম্প দিয়ে স্কুলে নতুন রেকর্ড করলো।
পুরস্কার বিতরণী আনুষ্ঠানের দিন মঞ্চ থেকে পুরস্কার হাতে নামছিল সৈকত। শত হাততালির মাঝেও সে যেন সোনালীর মুখ থেকে ‘অভিনন্দন’ কথাটা শুনতে পেল। এই কোকিল কন্ঠ তার কাছে যেন শ্রেষ্ঠ উপহার মনে হলো। সে লাজুক চোখে প্রেমপূর্ণ নির্মল দৃষ্টিতে সোনালীর দিকে তাকালো।

দিনটা ছিল ৩১শে ডিসেম্বর। চতুর্থ পিরিয়ডে ক্লাসে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক প্রবেশ করলেন। রাসায়নিক সমীকরণের গাণিতিক সমস্যাগুলো সৈকতকে ক্রমশ বেশ সমস্যায় ফেলছিল। ক্লাস শেষ হলে সে বলে উঠলো ,-“কারোর কাছে রসায়নের রেফারেন্স বই থাকলে আমাকে দিস তো, খুব প্রয়োজন।” তার কথা বোধহয় তার সহপাঠীদের কাছে সেদিন ততটা গুরুত্ব পায়নি।
আগামীকাল ২০১৯সালের ১লা জানুয়ারি, অর্থাৎ নতুন একটা বছর শুরু হতে চলেছে। সহপাঠীরা কে কাকে গ্ৰিটিংস কার্ডের মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাবে তাই নিয়ে আলোচনা করছিল ।
সৈকতও সেই চিন্তাতেই মশগুল ছিল। সে এবার মনে মনে ঠিক করেই ফেললো যে সে সোনালীকে গ্ৰিটিংস কার্ডের মাধ্যমে প্রপোজ করবেই। ১লা জানুয়ারি স্কুল ছুটি। জানুয়ারির ২ তারিখ সৈকত যখন ক্লাসে উপস্থিত হলো তখন সোনালীর সামনে হাইবেঞ্চের উপর গ্ৰিটিংস কার্ডে ভরে গেছে। সোনিলীকে গ্ৰিটিংস দিয়ে প্রপোজ করেছে বেশ কয়েকজন ছেলে। তা দেখে সৈকত যেন নিজের পরাজয় অনুভব করলো। সে ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছিল। ঠিক সেই সময় সোনালী সৈকতের উদ্দেশ্যে তার সেই ভুবনভোলানো হাসি আর কোকিল কন্ঠের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ জানালো। সৈকতের আসন্ন সব আলতো যন্ত্রণা যেন নিমিষেই স্তিমিত হলো।

স্কুল ছুটির পর সোনালী সৈকতকে একা ডেকে জিজ্ঞেস করলো,- “কি রে,তুই আমাকে নিউইয়ারের উপহার দিবি না? আমার মন সেই কখন থেকে তোর উপহারের অপেক্ষায় ছটফট করছে।”
সৈকত খুশিতে একেবারে ফেটে পড়লো। সে ব্যাগ থেকে বের করলো সোনালীর জন্য সযত্নে রাখা সেই বিশেষ উপহার। উপহারটি হলো একটা A-4 সাইজের কাগজের একদিকে মনোযোগের সহিত পাঠরতা সোনালীর ছবি এবং অন্যদিকে অতি সুন্দর হরফে রংপেন্সিলে লেখা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ।
সোনালী এই বিশেষ উপহারটিকে দু’টো হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
সৈকত তার মনের গোপন কথাটি আর গোপন রাখতে পারছিল না। ঠিক এই সময় সোনালী তার ব্যাগ থেকে রসায়নের রেফারেন্স বইটা বের করে সৈকতের হাতে দিল। সৈকত অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,”সেদিন তাহলে ও আমার কথা শুনেছিল এবং গুরুত্বও দিয়েছিল।”
তারপর দু’জনেই যে যার বাড়ি ফিরে গেল। রাতে সোনালীর দেওয়া রসায়নের রেফারেন্স বইটার পাতা উল্টাচ্ছিল সৈকত। রাসায়নিক বিক্রিয়ার অধ্যায় খুলতেই সে একটা সুন্দর গ্ৰিটিংস কার্ড এবং লেখাভর্তি কয়েকটা পৃষ্ঠা দেখতে পেল।গ্ৰিটিংস কার্ডে লেখা ছিল “সৈকত,আই লাভ ইউ। আমি জানি তুইও আমাকে
ভালোবাসিস”।
আর ওই পৃষ্ঠাগুলোতে লেখা ছিল সহজে রাসায়নিক সমীকরণের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি। সৈকত এক অপার খুশিতে আত্মহারা হলো। এটা তার জীবনের এক অবিস্মরণীয় উপহার। অন্যদিকে সোনালীও সৈকতের দেওয়া সেই উপহারটি তার পড়ার ঘরে রেখে দিয়েছে ফ্রেমবন্দি করে।

Exit mobile version