চোরের ওপর বাটপারি
-রাখী চক্রবর্তী
বীরপুর থানার বড়বাবু অরুপ দে-কে গ্রামের লোকে এক ডাকে চেনে।
গ্রামের মানুষগুলোর কাছে ভগবান তিনি।সবার সুখে দুঃখে তিনি নিজেকে উজাড় করে দেন।
কিন্তু গতকাল একটা অঘটন ঘটে গেল।কলকাতা পুলিশের ভ্যান এসে সাথে গোটা কয়েক পুলিশ অফিসার বীরপুর থানার বড়বাবুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ।
গ্রামের মানুষদের মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। খবরটা চাউর হতে বেশি সময় লাগলো না যে থানার বড়বাবু নাকি ঘুস কাণ্ডে জড়িত ।
গ্রামের মোড়ল গদাই ধর কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। এর সত্যতা তিনি বার করবেনই। এ যেন তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।পুরো গ্রামটা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। এহেন পরিস্থিতিতে সরকার নতুন বড়বাবু থানায় নিয়োগ করেছেন। নতুন বড়বাবু সত্যব্রত সেন। দীর্ঘ সুঠোম চেহারা। আভিজাত্য আছে বেশ চেহারাতে।
সত্যব্রত সেন, আজ তার কাজের প্রথম দিন। পুরো গ্রামটা ঘুরে দেখছেন। তিনি একটি নির্বাক গ্রাম দেখছেন। যেন কেউ এই গ্রামে কথা বলতে পারেনা। প্রথমে তিনি গ্রামের মোড়ল গদাই ধরের সাথে কথা বলবেন বলে ঠিক করলেন। মোড়লমশাই নতুন বড়বাবুকে দেখতে পেয়েই তার হাত দু’টো ধরে বললেন,”আমাদের ভগবানকে একবার আমাদের কাছে নিয়ে আসুন। উনি এ কাজ করতে পারেন না।”
একে একে গ্রামের সব মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে বড়বাবুর কাছে আর্জি জানাল। বড়বাবুও তাদের আশ্বাস দিলেন যে তিনি তাদের সাথে আছেন।
এদিকে থানার নতুন বড়বাবু আসার খবরটা প্রমোটার দিলু-ও পেয়েছে। নানান উপঢৌকন নিয়ে দিলু থানায় হাজির। নতুন বড়বাবুর তো চক্ষু চড়কগাছ উপহারের বহর দেখে। এ সব কি? জানতে চাইলে দিলু বলল- এ তো সামান্য, আমার কথা মেনে চললে আরও আরও পাবেন।আগের বড়বাবু বড্ড বোকা ছিলেন। আশা করি আপনি তা নন।থানার নতুন বড়বাবু বললেন-পুলিশের চাকরি করি বোকা হলে চলবে।
-এই তো, এই তো জাত ভাইয়ের মতো কথা।দিলুর হাসি যেন ধরে না। নতুন বন্ধুর সাথে হাত মিলিয়ে দিলু চলে গেল।
আর হ্যাঁ, নতুন বড়বাবু আজ ডিনার করছেন প্রমোটার দিলুর সাথে। কথা প্রসঙ্গে অরুপবাবুর কথা আসতেই দিলু তার ভেতরের সব কারসাজি উগলে দিল। নতুন বড়বাবু ও তৈরি হয়ে এসেছেন। একটি বাঁশির আওয়াজেই তার দলবল দিলুকে গ্রেপ্তার করল। বড়বাবু দিলুর সব কথা রেকর্ড করে রেখেছেন।
প্রমোটার দিলু একটা মোটা অঙ্কের টাকা অফার করেছিল অরুপবাবুকে। একটা বেআইনি ফাইল ধামাচাপা দেওয়ার জন্য।কিন্তু সৎ আদর্শে শিক্ষিত অরুপবাবু তাতে রাজি হন নি।দিলুই টাকার বান্ডিলটা অরুপবাবুর ব্যাগে কায়দা করে রেখে দিয়েছিল।
নতুন বড়বাবু সব প্রমাণ নিয়ে কলকাতা যাচ্ছেন অরুপবাবুকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনতে। গ্রামের মানুষদের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি রওনা হলেন। গ্রামবাসীরা এক মুহূর্ত আর অপেক্ষা করতে রাজি না। তাই তারা তাদের ভগবানকে বরণ করার জন্য ফুল,মালা নিয়ে রাস্তার মোড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আজ আমাদের সমাজ যখন ঘুস দেওয়া বা নেওয়াতে জর্জরিত তখন বীরপুর থানার এই দুই মহান বড়বাবুকে আমরা না হয় আজ আমাদের ভগবানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করলাম। আর দৃষ্টান্ত হিসাবে জীবনভর থাকুক এই দুই মহান মানুষ দুটির নাম…..জয় হিন্দ