মিমির কান্না
– অঞ্জনা গোড়িয়া
দু’দিন ধরে স্কুলে আসছে না, শান্ত শিষ্ঠ ছোট্ট মিমি। মনটা খুব ছটপট করে উঠল। কি হয়েছে জানার জন্য খবর পাঠালাম। অন্য একজন জানাল, দিদি ওর দু’দিন খুব জ্বর! তাই আসতে পারে নি। মনটা খারাপ হয়ে গেল, আহারে! ছোট্ট মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে। যখনই স্কুলে আসে গা ঘেঁষে দাঁড়ায় আর বকবক করেই চলে। কখনও বলে দিদি দিদি, “তোমার শাড়িটা খুব সুন্দর! আবার কোন দিন বলে, দিদি তুমি সেই লাল শাড়িটা পড়ো নি কেন? বেশ লাগে তোমায়, ঠিক আমার মায়ের মত।
মায়ের কথা বললেই ওর চোখ দু’টি ছলছল করে উঠত। বেশী কিছু বলতাম না, যদি ছোট্ট মিমির আবার কষ্ট হয় মায়ের কথা শুনে। একবছর হল, মা মারা গিয়েছে। শুনেছি, বাবার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। রোজ মদ খেয়ে এসে খুব মাতলামো করত, মা প্রতিবাদ করলে বোতল ছুঁড়ে মারত।
কিন্তু মিমির আবার নতুন মা হয়েছে। মিমি অবশ্য খুব খুশি,”মা”বলে ডাকতে পেরেছে । আপন করে নিয়েছে নতুন” মাকে ছোট্ট মিমি। নতুন মা’ও মেয়েকে পেয়ে খুব সুখী। এমন মেয়েকে ভালো না বেসে কেউ কি থাকতে পারে?
তিন দিন পর স্কুলে এল মিমি। একটু মনমরা । মুখটাও বেশ শুকনো। হঠাৎ চোখে পড়ল ফর্সা গালে আঙুলের ছাপ, লাল হয়ে আছে। চমকে উঠলাম!
কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে মিমি? শরীর ভালো আছে?
চোখ দু’টি ছলছল করে উঠল, কিছুক্ষণ চুপ!
আস্তে আস্তে বলল, কদিন আগে আমি পড়তে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল, দেখি মাকে ঝাঁটা দিয়ে ইচ্ছা মত মারছে আর চুলের মুঠি ধরে আছে, গালিগালাজও করছে ।
আমি ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতেই বাবা, আমার মুখে চড় মারল জোরে। আমার মায়ের ও খুব লেগেছে দিদি। আর বলতে পারল না, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ছোট্ট মিমি।