আমি শোকাহত নই…

আমি শোকাহত নই..

-কৃষ্ণ বর্মন

 

শোকাহত,শোকস্তব্ধ,মর্মাহতের শব্দ ভান্ডারে ক্রমশ জমছে
সমবেদনার চোখের জল।
আক্রোশের ছাইছাপা আফসোস হতে চাইছে
মর্মভেদী তীব্র চীৎকার।
সংবাদে,বিবাদে,প্রতিবাদে দোষারোপ আর প্রতিশোধের সুর।
যারা রাস্তায় পড়ে থাকা নিথর কিংবা আহত মানুষকে
সচেতনভাবে এড়িয়ে যায়,
নিজের বৃদ্ধা মাকে ফেলে আসে ফুটপাথে
কিংবা অবহেলায় রাখে সিঁড়ির নীচে
তাঁরা সবাই আজ দেশপ্রেমিক।

এইসব ছবি ছাড়াও আরো কিছু ছবি আছে
যেখানে কোনো দিন পৌছাবে না
সান্ত্বনা কিংবা ক্ষতিপূরণের প্রলেপ।

ঘুমোতে যাওয়ার আগে আজ আর ফোনে গলা শুনতে পায়নি
শহীদ জওয়ানের শিশুকন্যা।
সামনের মাসেই বাড়ি ফিরে যে দাদার
কেনার কথা ছিল বোনের জন্য লাল বেনারসী,
সে এই প্রথমবার বাড়ি ফিরবে কোনো দেরী না করে,
বরং কথা দেওয়া দিনের বহু আগেই
তেরঙা পতাকাকে বুকে জড়িয়ে।
জীবনে প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দকে
প্রেয়সীর মাথার পাশে থেকে ভাগ করে নেবে
অথবা সন্তানের হৃদস্পন্দনে বুকে জড়িয়ে
অনুভব করবে বলে ভেবেছিল যে সৈনিক
সে আজ নিজেই স্পন্দনহীন।
অলিন্দে বসে থাকা ক্ষীণ আঁখি দুটি
নিজের জীবনের গোধূলী বেলায়
সূর্যাস্তের আগেই শূন্য হাহাকারে স্বাগত জানাবে
বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়ের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন সোনার টুকরোকে।

আক্রোশ ক্রমশ স্তিমিত হয়ে যাবে।
আক্রমনের ঝাঁঝালো ইচ্ছেও নিস্তেজ হবে।
আবার হাতে হাত মিলিয়ে আলিঙ্গন করবে রাষ্ট্র নায়কেরা
বিদেশী বন্ধুর পতাকা তলে।
সামনের বিশ্বকাপে দেশবাসী মেতে উঠবে
ভারত পাকিস্তানের খেলার চুড়ান্ত উত্তেজনায়।
সব ক্ষত মিলিয়ে যাবে।
উথলে ওঠা দেশপ্রেম মিলিয়ে যাবে নিস্তরঙ্গ নিথরতায়।
মোমবাতিগুলো ফুঠপাথ কিংবা শহীদ বেদী থেকে
স্বমহিমায় ফিরে যাবে
ভ্যালেন্টাইন ডে-র ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের টেবিলে।

এভাবেই ২৬/১১ হারিয়ে গেছে
জনস্রোতে কিংবা দেশেপ্রেমের ভীরে।
১৪/০২-ও এভাবেই একদিন সুস্হ হয়ে উঠবে
মিলিয়ে যাবে সব ক্ষত
চির তিমিরে আর বেদনার গভীরে রয়ে যাবে শুধু
শহীদের পরিবার যত।

Loading

Leave A Comment