অণু গল্প

পরিচয়

 পরিচয়
-অণুশ্রী দাস

 

লাবণ্যর বিয়েটা প্রেম করেই, তবুও শর্ত ছিল গৃহবধূ হয়ে থাকার, শাশুড়ি এই গল্পের ভিলেন, আর তার পঙ্গপাল পাশের বাড়ির জ্ঞাতিরা। নিজের মেয়েকে মানুষ করার সুযোগে লাবণ্যর সব আত্মত্যাগের কষ্ট, নিঃশব্দে ভেঙে ধুলোয় মিশে গেছে সবার চোখের আড়ালে, ভিলেন যখন লাবণ্যর জীবনের ওপর থেকে কালো ছায়া কাটিয়ে চলে গেছে তখন চুলে রুপালি আঁচড়, আর মেয়ের বিয়ের একবছর হয়েছে, মুঠো ফোনের দৌলতে সময় কাটে সোস্যাল মিডিয়ায় পুরনো বন্ধু মহলে,

স্কুলের বেস্ট ফ্রেন্ড পিয়ালীকে সেই ছোট্ট বেলায় দেওয়া একটা কার্ডের ছবি পিয়ালী ফেসবুকে লাবণ্যকে ট্যাগ করে পোস্টে করে, সেই পুরনো স্মৃতির জলছাপে উপলব্ধি করে, নিজের পরিচয়টা এখন ভটচার্য্যি দার বউ না হলে আই.পি.এস অফিসার সৌরিণির মা,এদের মাঝে হারিয়ে গেছে, আমিত্বটা এখন অন্যের বেড়াজালেই আবদ্ধ।
নিজের ভালোলাগা স্বপ্ন, বা বলা যায় নেশাটা এত বছরের দায়িত্বের চাপে কখন জীবাশ্ম হয়ে গেছে বুঝতেও পারে নি।
পুরনো ধুলোয় গাঁথা ট্রাঙ্কটা বের করে নিজের এক একটি সৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখে যখন নিজেই অবাক হচ্ছে একটা ফোন এল, কথা বলা শেষ হল, গালের নরমে কতক্ষণ লাভা স্রোত তুলেছিল কে জানে !
-তুমি ধুলোর মধ্যে পুরনো ছবিগুলো নিয়ে কি ভাবছ হাঁ করে, ওঠো চা করে দাও
– পরশু থেকে চা টা ফ্লাস্কে থাকবে,নিজে নিয়ে নিও।
-কেন ? তুমি কোথায় যাবে? 
-ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড কালারস্ থেকে আমাকে একটা প্রজেক্ট এর জন্য ওরা ইনভাইট করেছে। আর আমি জয়েন করব কথা দিয়েছি।

– হ্যালো মা হ্যাপি ওইমেনস ডে। তোমার গিফটটা পছন্দ হয়েছে তো?
-কি গিফট আমি তো কিছু পায়নি।
-এই যে আজ তুমি তোমার পুরনো পৃথিবীতে নতুন করে শ্বাস নিতে যাচ্ছ সেই গিফট।
আসলে আমি পুরনো তোমার পেন্টিংসগুলো ওদের দেখাতেই ওরা তো….

তখন চশমার ফাঁকে চিক চিক করছে দু’টো চোখের কোন, আজ এক নারীর মাতৃত্ব সার্থক। সব না-পাওয়া গুলো হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার আনন্দে পরিপূর্ণ, এখন শুধু লাবণ্যর নিজের পরিচয়ের সাদা কালো জীবাশ্ম হাজার রঙে রাঙানো বাকি ।।

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page