Site icon আলাপী মন

বসন্ত এসে গেছে

বসন্ত এসে গেছে
– অঞ্জনা গোড়িয়া

জয়ন্ত বাবু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল, বসন্ত এসে গেছে, সঙ্গে বাসন্তী। স্ট্যাটাসটা পড়েই বিদেশ থেকে ছেলে, বউ, মেয়ে জামাই একপ্রকার ধমকের সুরেই ম্যাসেজ দিল- এই বয়সে কি শুরু করেছ বাবা ?

জয়ন্ত বাবু একগাল স্মাইল এঁকে বুঝিয়ে দিল খুব ভালো আছি। জয়ন্তবাবুর একাকীত্বের মাঝে বাসন্তীর আগমনে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে জয়ন্তবাবুর জীবন। লোকে ছি ছি করতে থাকে, এই বয়সে জয়ন্তবাবু প্রেমে পড়ল! মানসম্মান বলে কিছুই রইল না। কাউকে পরোয়া করল না। সত্তর অতিক্রান্ত জয়ন্তবাবু সত্যিই বড় একা হয়ে গিয়েছিল। একান্নবর্তী পরিবারের মাথা ছিল যে, সেই মাটিতে লুটায়। একজন রিটায়ার পুলিশ অফিসার। একসময় চোর ডাকাত গুন্ডা এর নামে ভয়ে কাঁপত। সেই জয়ন্তবাবুকে নিঃসঙ্গতা গ্রাস করেছিল। আগে এই বাড়িতে বাবা, মা, বউ, দুই ছেলেমেয়ে থাকত। একেবারে সুখের হাট ছিল। চিরকাল তো একরকম থাকে না। একে একে চলে গেল সবাই। ছেলে মেয়ের বিয়ের পর বিদেশে চলে গেল। মাঝে মধ্যে নাতি নাতনীদের ভিডিও কলে চোখে দেখার জন্যই হাপিত্যেস করে বসে থাকত জয়ন্তবাবু। কাজের ব্যস্ততায় আজকাল তাও কেউ করত না। একটা কাজের বউ ঘর পরিস্কার আর খাবার তৈরী করে দিয়ে যেত। বন্ধু বান্ধবরা একে একে বয়সের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে। সময় আর কাটে না। নিজে ঠিক করল বাড়ি ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবে। সেখানে অন্ততঃ কিছু মানুষ তো পাবে কথা বলার জন্য। সবে মাত্র টলিব্যাগ গুছিয়েছে, কমলীর আগমন। বড় বড় চোখ, মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল আর মিষ্টি মুখখানি। চোখদু’টিতে কেমন যেন আষাঢ়ের মেঘ জমে আছে। করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আট বছরের কমলী। জয়ন্ত বাবু জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি ?

সে বলল, আমি বাসন্তী। সবাই এই নামেই ডাকে। কাজের বউটা বলল, আমার নাতনী বাবু। মাসখানেক হল এক বাস দুর্ঘটনায় মেয়ে জামাই দু’জনেই মারা গেছে। আটবছরে মেয়েটার লেখাপড়ার খুব সখ। তাই আপনার কাছে নিয়ে এলুম। জয়ন্তবাবু এক মুহুর্ত ভাবল। তারপরেই ফেসবুকে লিখেছিল, বসন্ত এসে গেছে। সঙ্গে বাসন্তী।

Exit mobile version