গাঁয়ের সেরা

গাঁয়ের সেরা 
– অঞ্জনা গোড়িয়া

 

গ্রামের ভালো মেয়েটা ,ভালো হয়ে থাকা হল না । কিছু ক্ষুধার্ত নরপিশাচের হাতে শোষিত হল। যাকে বলে নষ্ট হল।মাধ্যমিকে স্টার ,চারটি বিষয়ে লেটার পাওয়ার খবর ঝড়ের আগে পৌঁছে গেল গ্রামে। স্কুলের দিদিমনি পড়ার দাদা থেকে পাড়ার সকল বয়ঃজ্যেষ্ঠরা অহনাকে ধন্য ধন্য করল। নম্বরটা হয়তো খুব বেশী নয় , এখনকার দিনের তুলনায় । তবু প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুল যাওয়া আসা এক রিক্সাওয়ালার মেয়ের এমন ফলাফল কার না চোখে পড়বে ?
কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য যে প্রচুর খরচ । কোথায় পাবে টাকা?কি করে সম্ভব ? স্কুলেরই বড়দি ও পাড়ার কিছু শুভাকাঙ্খীরা পড়া শোনার জন্য যতটা সম্ভব সাহায্য করল।
অহনার মনে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা । বড় তাঁকে হতেই হবে । গ্রামের সেরা মেয়ে হয়ে গাঁয়ের মুখ উজ্জ্বল করবে । রোজ পাঁচ কিলোমিটার মেঠো পথ হেঁটে পাকা রাস্তায় উঠতে হত । সঙ্গী বলতে গাছপালা আর খোলা আকাশ। একপ্রকার ছুটতে ছুটতে যেতে হত । নইলে যে সময় মত গাড়ি পাবে না । ১৫মিনিট অন্তর ঘন্টা অন্তর একটা গাড়ি । বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে যেত । তবু সে দমবার পাত্রী নয় । অনেক বড় হবে সে একদিন । দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের পড়া নিজেই পড়ত। নিত্য পথের মাঝে বেশ কিছু দুষ্টু লোক রোজ অহনাকে মাঝে মধ্যেই উত্ত্যক্ত করত। অহনা সাহস মনে তবু একাই ঠাকুর ঠাকুর নাম নিয়ে বাড়ি ফিরত ?
এমনই এক ঝড় বৃষ্টির দিনে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ল অহনার গায়ে । শাড়িটা এক টানে খুলে ফেলল। ব্লাউজটা ছিঁড়তে যাবে , সেই সময় সিনেমার হিরোর মত একজন এসে হাজির । সঙ্গে সঙ্গে দে দৌড় তারা । অহনা ভয়ে লজ্জায় মাটিতে মিশে গেল ।শাড়িটা জড়িয়ে দিল গায়ে । এতক্ষনে মুখটা দেখল ওর । ছোটবেলার স্কুলের সাথী নিলয় । পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিল না কোন দিনই ।দুষ্টুমি আর বদমাইসী বুদ্ধিতে সবসময় ক্লাসকে মাতিয়ে রাখত। অহনা একদমই পছন্দ করত না ওকে ।
সেই নিলয় আজ অহনার সম্মান বাঁচাল। নিলয় কাছে এসে বলল ,ঘাবড়িও না । আর কোন ভয় নেই । কেউ জানবে না নিশ্চিন্ত থেকো। এই পথেই বাড়ি ফিরছিলাম আজ ।আজও কি আমায় অপছন্দ করো ? কি বলবে অহনা জানে না ?
নিলয় বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল । আর কোন দিন ই ওর সামনে এল না ।

ঘটনার কথা কিন্তু কি ভাবে একান থেকে ওকান হতে হতে পৌঁছে গেল সারা গাঁ। কলঙ্ক লাগতে বেশী সময় লাগে না ,কলঙ্কের দাগ একবার লাগলে আর মোছে না ।
বাবার কানে যেতেই বাবা শোকে পাথর হয়ে গেল । আর মুখ দেখানোর উপায় রইল না ।ওর মুখের দিকে কেউ ভালোভাবে তাকায় না পর্যন্ত ।
পড়ার দিকে মন বসে না কিছুতেই । প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল । একদিন পথের এল পোলের ধারে বসে ওরা চারজন ।কাছে গেল অহনা ।পড়িয়ে দিল হাতে রাখি । ভরিয়ে দিল আবিরে । অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাতৃত্বের এই বন্ধনে ।
দুচোখ ভরে দেখল ওরা চারজন । অহনা তৃপ্তির হাসি হেসে স্কুলের দিকে এগোল ।
গ্রামের ভালো মেয়েটা এমনি করেই সবার সেরা হয়ে উঠল । উচ্চমাধ্যমিকে স্টার নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে গাঁয়ের মুখ উজ্জ্বল করল ।

Loading

Leave A Comment