অণু গল্প

বিদায় বেলায়

বিদায় বেলায়
– অঞ্জনা গোড়িয়া

 

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ফুলি ‘কাকিমা’।

দুম করে পড়ে গেল আবির। মুখ দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসছে । হাতে পায়ে চোখে বিষাদের ছাপ, নিস্তব্ধতা । কে কোথায় আছো জল আনো শীঘ্র? আবির যে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ফুলি কাকিমা চেঁচিয়ে উঠতেই প্রিয়ার বুকটা ধকাস্ করে উঠল । আহা রে! ছেলেটা কত মজা করে আবির নিয়ে খেলছিল। হঠাৎ কি হল? বলেই কাঁদতে লাগল কাকিমা। এদিকে কাঁদো কাঁদো হয়ে ছুটে এল প্রিয়া। বন্ধ ঘর থেকে। জলের ছিটে দিল আবিরের চোখে মুখে। মুখটা চেপে ধরল দু’হাতে। ছটপট করে বসে পড়ল আবির। দু’হাতে রাখা লাল আবির ভরিয়ে দিল মাথায় । ভালো করে মাখিয়ে দিল রং প্রিয়ার গালে। সবাই হৈ হৈ করে উঠে হেসে উঠল। প্রিয়া তো ভীষণ রেগে গেল। আবার ছুটে দরজা বন্ধ করে দিল। অনেক বার বারণ করেছে জীবন নিয়ে মজা না করতে। এমন করে কেউ মজা করে? সত্যি ই যদি ওর কিছু হয়? কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না ওকে। আবির হাসতে হাসতে বলল,”অভিনয় না করলে তোমার অভিমানী মুখটা রাঙাব কেমনে প্রিয়া?”

প্রিয়া আর কিছুতেই খুলল না দরজা ।

একই ক্লাসে পড়ত প্রাইমারী স্কুলে। তাই ওর ছোট ছোট মজাগুলির সঙ্গে প্রিয়ার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকে। কথা রাখে নি আবির। আবার এমন শুরু করল।
আবির গেটের বাইরে থেকে কত করে অনুরোধ করল, একটি বার গেট খুলতে। মিষ্টি মুখটা ভালো করে দেখার জন্য। আর যদি সুযোগ না পায়! কথাটা বলতে গিয়ে থমকে গেল আবির। কিছুতেই জানাবে না প্রিয়াকে। বড্ড ছেলেমানুষী প্রিয়া। সইতে পারবে না যে। মনে মনে বলল, আর জ্বালাতে আসবে না প্রিয়াকে। বিদায় বেলায় একটি বার নয়ন ভরে দেখতে এসে ছিল। দেখা হলো। আবিরের আর কিছু চাওয়ার নেই।

ফিরে গেল আবির। প্রিয়া জানতেই পারল না ওটা আবিরের অভিনয় ছিল না। ইচ্ছে করেই জানাই নি। ও কি বিশ্বাস করতো রক্তদানের সূচ থেকেই ওর শরীরে বাসা বেঁধেছে এইডসের মতো মারণ রোগ। হয়তো ভাবতো….আবির খারাপ পাড়ায় গিয়েই…তার চেয়ে এই ভাল হল।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page