“দোল দোল দুলুনি “
-রাখী চক্রবর্তী
অফিস যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে দোলনার দোকান টার সামনে প্রায়ই অসিত কাকুর পা টা থমকে যায় ।বেশ কিছু দিন ধরে এই রকম হচ্ছে ।আর, কাকুর দোলনা কেনার লোভটা ও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন ।
কাকু সেদিন সন্ধ্যা বেলায় কাকিমাকে বলল,”ছাদের ঘরের বারান্দায় দোলনা রাখার জায়গা হবে”?
কাকিমা হেসে বলল,”তা বুড়ো বয়সে তোমার দোলনা চড়ার শখ হলো বুঝি”?
অসিত কাকু বলল,ঐ আর কি অফিস থেকে ফিরে চা ,সিগারেট খেতে খেতে দোলনায় বসে খবরের কাগজ পড়ার মজাই আলাদা ।ও সব তুমি বুঝবে না।
যাইহোক অসিত কাকু কাকিমা কে বলল,”সামনের রবিবার দোলনাটা কিনতে যাব “।
শনিবার দিন হন্তদন্ত হয়ে অসিত কাকু বাড়ি ফিরল।কাকিমা কে বলল, আজই চলো দোলনা কিনতে।রবিবারের অপেক্ষা আর করতে পারছি না।কি সুন্দর সব দোলনা,, দোকানে গিয়ে কাকুর চোখ ঝলসে গেল।
দোকানের কর্মচারী বলল,দাদা এই দোলনাটা নিন খুব টেকসই হবে।একটু সস্তা ও হবে ।অসিত কাকু কিনে নিল দোলনাটা।বাড়ি এসে দোলনাটা জায়গা মতো রেখে কাকু কাকিমা রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল।কিন্তু কাকুর চোখে ঘুম নেই ।রাত একটা বাজে।কাকু ওপরে চলে গেল দোলনা চড়তে।ওপরের দরজা খুলতেই কাকু চমকে গেল দোলনাটা কি ঘুরছে ।হয়তো বা খুব হাওয়া দিচ্ছে, কাকু কিছু একটা ভেবে দোলনায় গিয়ে বসলো ।এদিকে কাকিমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ।কাকু পাশে নেই দেখে কাকিমা মনে মনে বলল,ঠিক দোলনা চড়তে গেছে ।বুড়ো বয়সে যত ভীমরতি ।হাই তুলতে তুলতে কাকিমা ওপরে গিয়ে দেখল কাকুর পাতলা পুতলা চেহেরা একটা মেয়ের চেহারার মতো হয়ে গেছে।ওড়না ঝুলছে গায়ে, কি অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে ।এ দৃশ্য দেখে কাকিমা অজ্ঞান হয়ে গেল ।সকাল বেলায় ঘুম ভেঙে কাকিমা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল।কাকুও পাশে শুয়ে আছে।অস্বাভাবিক কিছু নেই । কিন্তু রাতের সেই দৃশ্য কাকিমা কিছুতেই ভুলতে পারছে না।কাজকর্ম সেরে কাকিমা রাতের জন্য অপেক্ষা করছে।আজ রাতে আড়াল থেকে সব কিছু দেখবে কাকিমা ।
যথারীতি রাতের বেলায় কাকিমা ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল।কাকু ঠিক রাত দুটোর সময় ওপরে গিয়ে দোলনায় বসলো।কাকিমা সবকিছুই দেখছে আড়াল থেকে। নিমেষে কাকু একটি মেয়েতে পরিনত হল।ওড়নাটা উড়ছে হাওয়া তে।মুখটা আবছা দেখাচ্ছে ।কাকিমা শেষ দেখবে বলে ভয় পাচ্ছে না।হঠাৎ দোলনায় বসে থাকা মেয়েটি বলে উঠল,”আমি মুক্তি চাই ওকে শাস্তি দে”।
ভোঁ ভোঁ করে দোলনাটা ঘুরছে ।কি বিকট কান্নার আওয়াজ ।গা শিউরে উঠল কাকিমার ।পরের দিন পাড়ার মিন্টুদা ও শিবুদাকে নিয়ে কাকিমা দোলনার দোকানে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলল।
সব শুনে দোকানের কর্মচারী বলল,দোলনাটা পুরনো ।দত্ত বাড়ির মেয়ে মীনা আত্মহত্যা করার পর ওর বাবা দোলনাটা বিক্রি করে দেয় আমাদের কাছে ।কিন্তু আমরা এত কিছু হবে ভাবিনি ।আজ রাতে মিন্টুদা ও শিবুদাকে কাকিমা থাকতে বলল।সবকিছু ওদের দেখাবার জন্য ।ঠিক রাত দুটোর সময় কাকু দোলনায় গিয়ে বসল ।আর সেই মেয়েতে পরিনত হল।কি বিকট কান্নার আওয়াজ ।শিবুদা তো ভয় পেয়ে গেল ভীষণ ।মিন্টুদা তান্ত্রিক তাই মেয়ে টিকে প্রশ্ন করল,কি চাও মা তুমি? মেয়ে টি গোঙ গোঙ করে বলল”,মুক্তি চাই”
মিন্টু দা বলল,কিভাবে?
মেয়ে টি বলল,”নরেনদা আমার ওপর অত্যাচার করে আমাকে মেরে ফেলেছে।ওর শাস্তি চাই”।
শিবু দা সব কথা রেকর্ড করে রাখল।পরের দিন মিন্টুদা পুলিশের হাতে তুলে দিল সব রেকর্ড ও নরেনকে।অসিত কাকু দোলনাটা নিয়ে গেল মীনার বাড়িতে।দোলনাটা মীনার বাবাকে দিয়ে বলল,এটার মীনার শখের দোলনা ।এটা আপনাদের বাড়িতেই রেখে দিন ।বিক্রি করবেন না।অসিত কাকু মীনার ছবিটার দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। মীনা তৃপ্তির হাসি হাসছে। মীনার ঘর থেকে বের হতেই অসিত কাকু এই গানটা শুনতে পেল। কে গাইছে? কি করূণ সুরে “দোল দোল দুলুনি রাঙা মাথায় চিরুনি “গানটা শুনে অসিত কাকুর মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। মীনার আত্মা বোধহয় এবার শান্তি পেল।