উৎসবে ‘গণতন্ত্র’
-রীণা চ্যাটার্জী
বর্ষবরণের উৎসব পালন করে আমরা আগামী নতুন বর্ষকে বরণ করে নিলাম সাড়ম্বরে। নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।
আর এক মহৎ উৎসবে ব্যস্ত জনগণ, জন প্রতিনিধি, সরকারি আমলা, কর্মচারী, কলেজ পড়ুয়ারা। গণতন্ত্রের মহোৎসব’ হলো গত ও আগামী কয়েকদিনের বিশেষ আলোচ্য বিষয়। সরগরম সমস্ত মাধ্যম নিজের নিজের মত প্রকাশে, নিজেদের দেওয়া তথ্যের নির্ভুল প্রমাণের দাবীতে। আর সংবাদ মাধ্যমগুলি তো যথেষ্ট তৎপর বিক্রিত, বিকৃত সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতায়। লক্ষ্য কি? ঠিক জানা নেই কারো। সঠিক-বেঠিক বিচারের প্রয়োজন নেই, ন্যায়-নীতির দায়বদ্ধতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসীন যাঁরা, তাঁদের মনোরঞ্জনের তাগিদ, বিরাগভাজন হবার ভয়ে- প্রয়োজনীয় সংবাদ আড়ালে রাখার নির্লজ্জ প্রয়াসে রোজের ছাপানো হরফ, রঙীন ছবি– নিত্যদিনের ক্রোড়পত্রে।
তর্ক- বিতর্ক, প্রতিশ্রুতির ঝুলি, সাফল্যের মিথ্যা কিছু শেখানো বুলি, চোখে ধূলো দেওয়ার কারসাজি এ তো আমাদের গণতান্ত্রিক মহোৎসবের নৈবেদ্য। সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়ে চলেছে ভিন্ন ভিন্ন মোড়কে গত সত্তরোর্ধ্ব সব গণতান্ত্রিক মহোৎসবে। মাঝে উপাচার অবশ্যই আছে। যেমন হঠাৎ করে উৎসবে যোগদানকারী প্রতীকের মুখোশধারীরা একেবারে মাটির মানুষ হয়ে ধরা দেবেন। তেমন কেউ কেউ আবার কল্পনায় কল্পতরু হয়ে উঠবেন। ভয়ে, ভালোবাসায়, ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক , “তোরা যে যা বলিস ভাই জনগণ তোর ভোটটা আমার চাইই…” এই একটি মন্ত্র কিন্তু সবার, সব রাজনৈতিক দলের, রঙের, প্রতীকের। মন্ত্রের সাধন নয়তো শরীর পাতন। আহা রে! এতো মহানুভবতা দেখে বিশ্বাস যেন আপনি ধরা দিয়ে যায়- এবার আর বদল না হয়ে উপায় নেই। একবার (এই দল) ক্ষমতায় এলেই আমাদের সুখ, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি আটকাবে কে? হায় রে! আমরা সব জানি সব বুঝি তবুও ভুলে যাই, “যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ” এ যে প্রতিফলিত পরীক্ষিত সত্য।
নতুন নতুন অনেক রকম প্রচার মাধ্যম হয়েছে এখন। তাই খবর এখন হাতে গরম! কোন প্রতিনিধির কি কি আছে? কোন প্রতিনিধি কি কি বললেন? কি পড়লেন? কিসে চড়লেন? এমন কি সকাল, দুপুরের (রাতেরটা আড়ালেই থাকে, ওটা যে ব্যক্তিগত) আহারটুকুও লিপিবদ্ধ করে সামনে হাজির। মহামান্যরা জানেন কি? যেখানে প্রচারে যাচ্ছেন সেখানে, যাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করছেন তারা অনেকেই একবেলার পেট ভরে খাবার যোগাড় করতেও হিমশিম খায়! খাবার তালিকা সেই সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কখনো কেউ শোনেওনি। আপনাদের মনে থাকে- ভোট হয়ে গেলে এদের কথা? মনে রেখে লাভ কি? ওদের কাজ তো একদিনের, তার জন্য তো পরিচয় পত্রটুকু ঠিক থাকলেই তো হলো। ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ… !’
আরো অবাক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছামত মতো এখন খোলস ছাড়ে, রঙ বদলায়। নীতি কোথায়? কিসের ভিত্তিতে? জনগণের রায়ের মোহর লাগিয়ে লাভ কি তবে? সবটাই প্রহসনের মহোৎসব বললে খুব ভুল বলা হবে কি?
আরো হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে, ক্রোধে, অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে নির্বাচনী বিধি, প্রক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া সব চলবে দফায় দফায়। শেষে ফলাফল আসুক রফায় দফায়। আমরা থাকলাম অসহায় অপেক্ষায়।
আলাপী মনে প্রকাশিত মন ছোঁয়া কিছু কলম ‘ছন্দ পতন’, ‘আঁধারে আলো’, ‘লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে’, ‘উপহার’, ‘মালো পাড়ার বিটি’, ‘হিসেব’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, ‘দ্বেষী বিদ্বেষী’, ‘প্রতিশোধ’, ‘দূরত্ব’, ‘ইচ্ছেপূরণ’ প্রভৃতি
শুভ আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো সকলের জন্য ‘আলাপী মনে’র পক্ষ থেকে।