কবিতার তুমি
-অযান্ত্রিক
যেভাবে লিখে ফেললাম হাজার কবিতা,আঠাশ খানা কবিতার বই,
যেভাবে জ্বালিয়ে শব্দের ঝারবাতি,বসিয়ে ফেললাম কথার মজলিশ
না-কথারা এক এক করে এসে শুনিয়ে গেলো আদিম হৃদয় প্রিয়তা
নদী অরণ্যে পাহাড়ের স্তব পাঠ করে ,খুলে ফেললাম চশমা
এগুলো কি তোমার জন্যে নয় নিলোফার?
লক্ষ,অযুত কোটি কবিতায়, প্রত্যেকটা “তুমি”কি তুমি নও ?
আমি শব্দের প্রতিবিম্ব দেখছিলাম শান্ত মনের স্ফটিকের দলদলে,
কথাছিলো মুখোমুখি হলে শরীর নয় ছায়া,নীরবতার বিনিময় হবে,
কবিতার মধ্য রাতে, আচমকা ঘুমের মধ্যে জেগে উঠবে তুমি,
মাথার কাছে টিপয় থেকে খাবে জল, ভিজিয়ে নেবে গলা আলজিভ।
বুঝতে কি পারবেনা দূরে যেখান থেকে মনকেমনের গন্ধ আসে,সেখানে
আমরা যারা শব্দের প্রতিবিম্ব দেখছি,মনে করছি তোমার ঘুমন্ত মুখ।
কবিতার প্রতিটা অক্ষর,দাড়ি,কমা, রেফ, ছুঁড়ে দিচ্ছি তোমার দিকে,
আলোর অভাবে আমাদেরই আঙুলে জ্বেলেছি মোমবাতি ,কবিতার রাতে,
আধ্ঘুমন্ত তোমার মুখের চারপাশে,চিরুনি বিহীন তোমার এলোমেলো চুল,
তোমার অবিন্যস্ত বিছানায়, বালিশে চাদরে ছুঁয়ে ফেলতে চাইছে তোমায়,
আমাদের কবিতার অক্ষর গুলো নিঃশব্দে নিঃশ্বাসের মতো বিঁধে যাচ্ছে,
তোমার কপাল, ঠোঁট,চিবুক ,চিবুকের তিল ,ভারী হয়ে আসা চোখের পাতায়।
তুমি কি চিনতে পারবে না আমাদের সেই “তুমি”কে ?তুমি কি ভয় পাবে
তুমি ভয় পেয়ো না। তুমি ঘুমাও
তোমাকে ছোঁবে না কলমের লালায়িত জিভ,
দূরের থেকে ছুঁতে পারবেনা কবিতার ভয়ঙ্কর হাত,
কবিতার রাত জাগা অভ্যাস,শারীরিক উষ্ণপ্রিয়তা
তোমাকে ছোঁয়ার তীব্র আকাঙ্খায়,শব্দের প্রতিবিম্ব ভেঙে ফেললেও,
তোমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না সেই চাপা আর্তরব,
তোমাকে ভয় দেখাবে না,কবিতার অধলিন আবেগ হিমাঙ্কের কাছাকাছি ,শীতল,
তোমার কপালে চুমু খেলে তুমি বুঝতেও পারবেনা।
তোমার হাতের উপরে হাত রাখল টের পাবে না।
তোমার সাথে সারারাত শুয়ে থাকলে তুমি নষ্ট হয় যাবে না।
শুধু , জেগে উঠলে সকালে তোমার পায়ের কাছে দেখবে রজনীগন্ধার
তারপরেও কি তুমি বুঝতে চাইবে না?এত এত কবিতার “তুমি” আসলে তুমি।
তারপর যখন স্বাতী নক্ষত্রে ছায়া জেগে উঠবে বেহুলার জলে,
রূপশালী ধানের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা জমবে শেষ মাঘের শিশির,
তোমার সাথে সামনা সামনি দেখা হবে কোনো নতুন কবির কবিতায়।
তুমিও ছড়িয়ে ঝর্ণার মতো হাসি বলবে “কি খবর,দেখা হলো অনেক দিন পর”
কিন্তু ,তুমিও জানবেনা আমি প্রতিদিন তোমার সাথেই থাকি,
এক ঘরে,এক ভাতের থালায়,এক বিছানায়,এক পোশাকে।
কিন্তু ,তুমি বুঝতেও পারবেনা আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ,
তোমার মুখের দিকে,তোমার কপালের ডুবন্ত সূর্যের মত টিপের দিকে।
অক্ষর ভর্তি কবিতার মাঝেও আমি শুধু তোমাকেই আঁকছি নিঃশব্দে,
আমার কবিতার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ,রোমকূপ যত “তুমি”ফুল ফুটে আছে,
সেগুলো সব সব শুধু তোমাকেই বোঝায় নিলোফার,
শুধু তোমাকেই বোঝায়,
কিন্তু,
তুমি বুঝতেও পারো না।।