অবাক পৃথিবী

অবাক পৃথিবী
-বিশ্বদীপ মুখার্জী

 

স্বচ্ছ নীল আকাশের নিচে চারিদিকে সবুজে সবুজ মন্দ লাগছিল না দেখতে। সময়টা বিকেল, তাই সূর্যের কাজ শেষের দিকে। ইতি মধ্যেই সোনালী রং মেখে সে অস্তের পথযাত্রী। খোলা মাঠে বেছনো সবুজ ঘাসের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য গাছ। কোনও গাছ পাতায় ভরা তো কোনও গাছ নিঃশব্দে নিজের দুর্দশার কথা বলছে। কোনও কোনও জায়গায় ঘাস প্রায় তিন থেকে চার ফুটের মতো উঁচু হয় গাছে। শহরের বাইরের এই প্রান্তকে লোকেরা জঙ্গল বলেই চেনে। জঙ্গলের পাশ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। সারা দিন অজস্র গাড়ির যাওয়া আসা সেটা দিয়ে। রাস্তা দিয়ে পরিস্কার শোনা যায় জঙ্গলে বাস করা অসংখ্য পাখির কলরব। পাখিরা আসতে আসতে নিজের ঠিকানার দিকে ফেরত আসতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আজ তাদের কলরব অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি মনে হচ্ছে। কিছু পাখি তো নিজের বাসাতেও যায়নি। বাসার আশেপাশে উড়ে চলেছে এবং নিজেদের ভাষায় কী সব যেন বলছে। সেই নীল রঙের ছোট্ট পাখিটা এখনও নিজের বাসার ভেতরে ঢোকেনি। এক বার গাছের ডালে বসছে, পরক্ষণেই গাছের আশেপাশে উড়তে শুরু করে দিচ্ছে। গাছের নিচের দৃশ্যটা দেখে সে হয়তো ভয় পেয়ে গেছে। গাছের নিচে কেউ যেন শুয়ে আছে। এক নজর দেখে নির্জীব বলেই মনে হয়। গায়ের কাপড় এলোমেলো …. অর্ধনগ্ন বললেই বেশি ভালো হয়। গাল, ঠোঁট, গলা, স্তন এবং শরীরের নিম্নভাগে গভীর এবং টাটকা ক্ষতচিহ্নর দাগ। ছেঁড়া কাপড়ের ফাঁক দিকে রক্ত গড়িয়ে এক স্থানে জমা হয়ে গেছে। জমা রক্ত এবং নিথর শরীরের চারিপাশে ভনভন করছে অজস্র মাছি। দেহে বুকের ওপর শুয়ে আছে এক ছোট্ট শিশু। নিষ্প্রাণ দেহের উন্মুক্ত স্তন থেকে চুষে নিতে চাইছে অদৃশ্য দুধ। অদৃশ্য দুধ বলা কি ঠিক হবে? তার ছোট্ট-ছোট্ট দুটি ঠোঁট পাচ্ছে দুধের স্পর্শ। কিন্তু এ দুধের স্বাদ ও রং ভিন্ন। আঁশটে স্বাদ এবং রং গাঢ় লাল।
হঠাৎ পাশের রাস্তা দিয়ে লোকের দল দেখা গেল। অনেকের হাতে একটা করে পতাকা। প্রত্যেকেই প্রায় চিৎকার করে বলছেন – ‘চলবে না, চলবে না। নারী নির্যাতন চলবে না।’

 

Loading

Leave A Comment