লহ প্রণাম
-রীণা চ্যাটার্জী
শ্রদ্ধেয় গুরুদেব,
শুভ জন্মদিবসের হৃদয়ের সশ্রদ্ধ প্রণাম নিও গুরুদেব।
অনেকটা ব্যস্ততা, আর আলস্যের মাঝে আবার বাঙ্গালীর পূণ্য লগন। প্রভাত ফেরি, রবীন্দ্র সঙ্গীতের মূর্ছনায় সাজো সাজো রব। আজ পঁচিশে বৈশাখ- তোমার শুভ জন্মদিবস। অনেক স্মৃতিচারণা, অনেক শ্রদ্ধা, অনেক প্রণাম, মালা, শ্রদ্ধার্ঘ্যর ভিড়ে তুমি আজ। তুমি প্রণম্য, তুমি বাঙ্গালীর বুলি, তোমার মাঝে ‘সহজ পাঠে’র আসর। “ঘরে বাইরে” তোমার থেকেই শেখা “দেনা পাওনা”র হিসাব। তোমার কলম থেকেই “নষ্টনীড়”র গ্ৰন্থি ধরে “নৌকাডুবি”র মাতন তুলে “চতুরঙ্গ” পেরিয়ে এসে “চার অধ্যায়” এর হাতটা ধরা।
আজকের উৎসবের ভীড়ে কিছু কথা তোমাকে একান্তে বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। গুরুদেব অসীম শ্রদ্ধা নিয়ে বলি- অপরাধ নিও না। তুমি আমাদের প্রাণের কবি। তবুও তোমার মাঝে দেখি যেন এক প্রবল প্রেমিক, দুরন্ত প্রেমিক, অসহায় ভালোবাসার আর্তির সুরে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমিক। তুমি যেমন তোমার কবিতায়, সুরে পূজা-প্রেম এক করেছো বারবার। পড়তে পড়তে প্রেম পূজা যে আমাদেরও কখন একাকার হয়ে গেছে। “চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি, গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি…” পূজা যে প্রেম হয়ে ধরা দিল গুরুদেব! “কোথায় পাবো এমন আকুতি? আবার প্রকৃতির মাঝেও প্রেমের অনুভূতি দিয়ে বলে গেছ, “মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন/ তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম” তুমি শুধু তুমিই দিয়ে গেছ আমাদের এই অনুভূতি? আমার চোখে তুমি প্রবল পুরুষ, প্রেমের জোয়ারে ভেসেছো, ভাসিয়েছো যুগ যুগ ধরে।
যেখানে যেখানে তোমার পদরেণু পড়েছে, তাই তীর্থ। তোমার কথা, সুর সব বীজমন্ত্র। তোমার বাণী চলার পাথেয়। তোমাকে অনুভব করতে শুধু চোখ বন্ধ করে মনের আগল খুলে রাখি, চিরন্তন অপেক্ষায়- “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুণ্য করো দহন দানে, আমার এ দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো..”
ভাষা দিয়ে তুমি বেঁধে গেছো আমাদের, আমরা তোমাকে বেঁধেছি ভালোবাসায়। তুমি আমাদের জীবন- বোধের দিয়েছো বাণী, শতাব্দী পার করে এসেও অমলিন তোমার ছবি।
লহ প্রণাম হে গুরুদেব।….