গ্লানির খোলা পাতা
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
হতবাক মনের কলম আঁচড় কাটতে পারছে না আর। শুধু ভাবছি আর কতো? আরো কতো? শালীনতা বোধ কি আমাদের হারিয়ে গেছে? নাকি পরিভাষা বদলে গেছে। আঙুল তুলে দোষারোপ আমাদের কাছে এক অতি সহজ পন্থা- সব দায় এড়ানোর জন্য। গত ১৪ই মে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক পরিস্থিতির মাঝে বাঙালীর ঈশ্বর ( বিদ্যাসাগর) খণ্ডিত হলেন। প্রতিবাদ হলো, ধিক্বারে ভরে গেল সামাজিক মাধ্যম। যথারীতি একে অপরকে দোষারোপ, বিরোধীতা, যুক্তির ধাঁধা, মিছিল, জমায়েত, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবী সব হলো একে একে। বেশ কিছুদিনের চর্বিত চর্বন। সংবাদ মাধ্যমের নির্লজ্জতা বেশ অর্থবহ ইঙ্গিত দিল বিকিয়ে যাবার। রাজনীতি (?) হচ্ছে, হবে, চলতে থাকুক…
একটু ফিরে তাকাই নিজেদের দিকে? কোনো দল নয়, কোনো রঙ নয়, সাধারণ খুব সাধারণ ভাবে ভাবি কারোর দিকে আঙুল না তুলে। যাদের হাত ধরে ঝামেলার সূত্রপাত তারা তো আমাদের সন্তান। আমাদের অভিভাবকরা যেমন আমাদের মনের গভীরে মনীষীদের জন্য সম্মানের বীজ পুঁতে দিয়েছিলেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলীয় রঙের উর্ধ্বে উঠে আমাদের শিখিয়েছিলেন এঁদের জীবন দর্শন। বলেছিলেন এঁদের স্মৃতি রক্ষা আমাদের কর্তব্য। এঁদের অবমাননা চরম অন্যায়। সেই শিক্ষাটুকু মননে রেখে আমাদের চেতনা রক্তাক্ত হয়েছে, হচ্ছে বারবার। কিন্তু আমরা এই প্রজন্মের অভিভাবকরা সেই মূল্যবোধ কতটুকু দিতে পেরেছি আমাদের সন্তানদের? কতটা সম্মান, শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছি ওদের? বিদেশী ভাবধারার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের, আমাদের ভারতের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতির, দর্শন কতোটা শেখাতে পেরেছি ওদের, যে ওরা রক্ষা করবে ‘আমাদের’ উজ্জ্বল অতীত, আমাদের মনীষীদের। পারিনি আমরা তাই তো আমরা আজ রক্তাক্ত চেতনার ভার বয়ে চলি, তাতে তো আমাদের কর্মফলের দোষ, নৈতিক পরাজয় আমাদের পিছু ছাড়ে না..
কোনো রাজনৈতিক দল তো আমাদের সন্তানদের জন্ম দেয়নি, কিন্তু তাদের নীতি দিয়ে দত্তক নিয়ে নিয়েছে। তাই আমাদের সন্তানদের আজ প্রথম পরিচয় ‘ও ওই দলের কর্মী, সমর্থক।’ তারপরেই তরজা শুরু হয়ে যায় “আমরা-ওরা”। আমাদের নীতিবোধের বাঁধন যদি গভীরে যেত আমাদের সন্তানরা আজ কেউ রাজনৈতিক সন্তান হয়ে যেত না। দোষ, লজ্জা, হতাশার দায় নিতে যে আমাদেরও হবে, সেই কথা মনে রেখে বিতর্ক দূরে রেখে উত্তপ্ত পরিবেশের থেকে একটু সরে আগামীর জন্য একটা সুস্থ দিনের সূচনায় কি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পারি না? আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের গৌরবময় ইতিহাস রক্ষা করার জন্য। ভিন্ন মতামত তো থাকবেই, শুধু ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়, আগামীর ইতিহাস যতটা কম কলঙ্কিত করা যায়- সেই আদর্শ সামনে রেখে কি আমরা নমনীয় হতে পারি না?
মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথায়-“নিম্নবিত্ত”, “দৌড়”,”ভগ্ন-ব্রিজ”, “গরম চা”, “বনলতা”, “সুর”, “নারী কথা”, “আমরাই নীলকন্ঠ”, “সম্পর্কের টানাপোড়েন”, “অভিলাষ”।
কালবৈশাখীর আসা না আসার দোলাচলে নিত্য দগ্ধ দিনের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ‘আলাপী মনে”র পক্ষ থেকে সকল স্বজনসাথী ও পাঠকবৃন্দকে।