আত্মার কাজ
-রাখী চক্রবর্তী
বিভু একটা একটা করে খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ছে আর মেঝেতে ফেলছে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি তুফান হচ্ছে। রাত নটা বাজে এখন।
-বিভুর একদম পড়াতে মন নেই বিভু আর ঘর কিন্তু নোংরা করবে না।পরিষ্কার করে দিলাম।
বিভু চমকে গেল হঠাৎ এই কথাটা শুনে, ও মালতীদি তুমি। তা এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে হঠাৎ কেন এলে কাজে? তুমি তো সকাল বেলায় কাজে আসো রোজ তবে, আজ… এখন? তোমার নাকি জ্বর হয়েছে? মা বলছিল।
-তুমি তো নোংরা ঘর পছন্দ করো না তাই।
-তোমার গলার স্বরটা এরকম লাগছে কেন?আর এত রাতে তুমি কখনও আসনি তো কাজ করতে।
-না, কাল থেকে যদি না আসতে পারি।
-মালতী দি ,আয়নাতে তোমাকে এত বীভৎস লাগছে কেন? আবার কোথায় গেলে? দূর কারেন্টটাও আসছে না। এ কি চেহারা করেছো। কাঠি কাঠি মনে হচ্ছে তোমাকে দেখে।
ও মালতীদি কাঁদছো কেন?
-আমার সাবুর হাতে কাল কিছু টাকা দেবে? ওর খুব দরকার টাকাটা
-ঠিক আছে মাকে বলব কাল সকাল বেলায়।কোথায় গেলে আবার? মালতী দি, মালতী দি
বিভুর মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলছে, এত রাতে মালতীকে কেন ডাকছিস? ওকে রাতে কি করে পাবি?
সেকি রে বিভু তোর ঘর পরিষ্কার কে করল এত রাতে?
-মালতী দি এসেছিল তো, কাজ করছিল, কোথায় যে গেল। আর বলল সাবুর হাতে তুমি কিছু টাকা দিও কাল সকাল বেলায়।
-কি বললি?
-মালতীদি কাজের মেয়ে গো
-কি বলছিস বিভু!
-মালতীদি কাজের মেয়ে গো
-মালতী তো আজ দুপুর বেলায় মারা গেছে।তোর কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হল তালেগোলে তোকে বলা হয় নি
বিভু বলল, তা কি করে হয় মা, আমি যে দেখলাম মালতীদিকে,
সারা রাত বিভুর মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে ওর মা। বিভু জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে, আর মাঝে মাঝে “মালতীদি” বলে বলে চমকে উঠছে।
সকাল বেলায় বিভুর বাবা মালতীর বাড়ি গিয়ে সাবুর হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল, খাবারের জন্য দিলাম এটা রাখ, পরে আবার দেব। তোমার একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেব আমি।
আজ চারদিন হল বিভু একটু সুস্থ আছে।কিন্তু বিভুর ঘরটা সব সময় কে যেন পরিষ্কার করে রাখে।
বিভু জানে মালতীদি রোজ আসে রাতের বেলায়। তবে বিভু এখন আর ভয় পায় না।