“একবিংশের আমরা’র এক খন্ড চিত্র”
– তন্ময় সিংহ রায়
একবিংশের চতুর্দিকে তোমার অবস্থান প্রয়োজনাতিরিক্ত বন্ধু বলয়ের মধ্যে হলেও, সীমিতসংখ্যক বন্ধুগুলোর অবস্থান আজ লিভেনহিকের সৃষ্টির তলদেশে! নিত্য বহমান বন্ধুত্ব দু-হাজার চার সালে দুটো শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে যথা (১) প্রত্যক্ষ ও (২) পরোক্ষ(ফেসবুক)। এ যেন “জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঘৃতাহুতি!” অর্থাৎ একে বর্তমানে ‘সম্পর্ক’-এর সাথে ‘সু’-এর সম্পর্কের অপেক্ষাকৃত অধঃপতন তার উপরে বন্ধুত্বের পরোক্ষ ভবিষ্যত প্রভাব! অতঃপর সুফলের অস্তিত্বকে বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করলেও পরোক্ষ-র ক্রমবর্ধমান প্রভাবে ক্রমশই অধিক গুরুত্ব হারাতে শুরু করে/করছে প্রত্যক্ষ। রাজনীতি, ক্রমবর্ধমান ব্যস্ততাসহ বিভিন্ন কারণসমূহের মধ্যে এও এক উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত… ভবিষ্যত পরিণাম ঘরে ঘরে আত্মকেন্দ্রিক সন্তান আর এভাবেই নিশ্চিতভাবে গড়ে উঠবে/উঠছে আত্মকেন্দ্রিক সমাজ ক্রমে জেলা থেকে রাজ্য ও সর্বোপরি রাষ্ট্র যার চুড়ান্ত রূপ বোধকরি ‘জাতীয়তাবাদী ভাবধারা’-র জ্বলন্ত অনলে আত্মাহুতি! অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আজ রিখটার স্কেল বসানো। বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কে ফাটল ,স্বামীর সাথে স্ত্রী-র সম্পর্কে ভাইরাস, বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্কে ছেদ! স্বার্থটা/গুলো ত্যাগের চেয়ে ভোগটা আজ আমাদের অধিক প্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘অল্পতে সন্তুষ্ট’ আজ আর আমাদের চিত্তাভিধানে নেই। দুই-পঞ্চমাংশের ধৈর্যশক্তি আজ আর ফোটন কণা দ্বারা উত্তেজিত হয়না। ‘শ্রদ্ধা’, ‘ভক্তি’, ‘কৃতজ্ঞতা’, ‘ভালোবাসা’, ‘আনুগত্য’, ‘মায়া’, ‘মমতা’, ‘স্নেহ’, ‘বিশ্বাস’… শব্দগুলো মানব শরীরে কেমন যেন চরম অপুষ্টির স্বীকার! শুধু ‘আমার’-কে বিপদমুক্ত, সুস্থ ও আর্থিকভাবে সু রেখো ভগবান/আল্লা/গড!… এ সমগ্র জাতি-র কল্যাণের নিঃস্বার্থ প্রার্থনার দায়িত্ব শুধুই পরম শ্রদ্ধেয় বীর নেতাজী সুভাষের জন্যেই বোধহয় ছিলো। এ গ্রহের অবহেলিত, ঘৃণিত ও উপেক্ষিত কুকুরগুলো আজ বোধকরি বেশি বজায় রেখে চলেছে তাদের ভদ্রতা ও আনুগত্য, অনেক ভালো আছে তারা। এত সমাজসেবী চারিদিকে কিলবিল করছে যে সমাজটা আজ প্রতিদিন ধর্ষিতা হতে হতে মুমুর্ষুপ্রায়! নিঃশব্দ আর্তনাদ করে সে বলছে শোনা যায়, ”ইজিপ্টোপিথেকাস অনেক শ্রেয় ছিলো, এ হেন হোমো-স্যাপিয়েন্স সন্তান-এর চেয়ে।” (ব্যতিক্রম স্বীকার্য ও ভূল ত্রুটি মার্জনীয়।)