রং নম্বর
– অঞ্জনা গোড়িয়া
হঠাৎ একটা অজানা নম্বর থেকে কল। ফোনটা ধরতেই সেই চেনা ডাকে বলে উঠলো, প্রিয়া ভালো আছ? চমকে উঠলাম। কে এ? সেই গলা, সেই বলার ধরন?কিছু জানার আগেই বলল রং নম্বর। ফোনটা কেটে দিল। তবু মনের মধ্যে একটা কুচিন্তা ঘুরতে লাগলো। তবে কি ফিরে এসেছে। নম্বরটা পেল কি ভাবে? ভীষণ ভয় করতে লাগল প্রিয়ার। এ দিকে ওর শরীরটাও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার কিছুই ধরতে পাচ্ছে না। কাজে মন লাগছে না। দিব্যি ভালোই চলছিলো সুখের সংসার। কদিনের জন্য বাইরে কাজে গিয়ে জ্বর বাঁধিয়ে বাড়ি এল। সেই থেকে চিকিৎসা করা হচ্ছে, কোন ভালো কিছু হচ্ছে না। চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। ঠিক তখনি বেজে উঠল ফোনটা। সেই নম্বর থেকে। ভরসা করে ধরল, কে আপনি? বারবার ফোন করছেন? চিনতে পারছ না? নাকি অচেনার ভান করছ?
চুপ করে রইল প্রিয়া। সেই বলল, ভয় পেও না। নম্বরটা তোমার বরই দিয়েছে। দু’টো নম্বর দিয়েছিল। মনে হয় ওরটা সুইচ অফ। ফোনটা ওকে দাও। ভয়ে ভয়ে বলল প্রিয়া,”কি বলার আমাকে বল?”
হা হা হা হেসে উঠলো। এখনো সেই ভীতুটা আছ। বিছানা থেকে বলে উঠলো স্বামী,”কার ফোন?” হাতে দিলাম ফোনটা। অট্টহাসিতে ঘরটা ভরে গেল। “কাল আসছে আমার এক বন্ধু। দেখবে তোমার ভালো লাগবে।”
জানতে চাইলাম,”কে আসছে?”
হাসি মুখে বলল, “গাড়িতে কাল এক ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ হল। আমাকে চেনে মনে হয়। নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। তোমাকেও চেনে। আমার অসুখের কথা শুনে আসতে চেয়েছে। ঠিকানা দিয়েছিলাম সঙ্গে ফোন নম্বর। দেখি, কি বলে একবার।”
ও জানেই না এই সেই জন। যাকে কথা দিয়েছিল বিদেশ থেকে ফিরলে বিয়ে করবে প্রিয়া। কি উত্তর দেবে প্রিয়া?
কিছুই বুঝে উঠতে পারল না ।
ও কি প্রতিশোধ নিতে আসছে ?পুরানো কিছু চিঠি আজ ও ওর কাছে। সব কি জানিয়ে দেবে ও? ভাবতে ভাবতেই বেলটা বেজে উঠল। একটু শাড়িটা পড়িপাটি করে পড়ল। মাথার অগোছালো চুলটা সুন্দর করে ছেনে খুলে দিল কাঁধের নীচে।
জানি না কেন একটু সাজতে ইচ্ছা করছে। এখনও কি ওর জন্য সেই টানটা –না না এসব কি ভাবছে?
আস্তে আস্তে গেটটা খুলে দিল। চেয়ে দেখে, একজন সেবক। এ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দাঁড়িয়ে।
কাছে এসে বলল, স্যার পাঠিয়েছেন রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। স্যারের নিজস্ব হসপিটালে। ওখানেই চিকিৎসা করবেন স্যার। প্রচন্ড রোগীর চাপ। তাই আসতে পারে নি। তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। প্রিয়া মনে মনে বলল, ‘তুমি ঠিক আগের মতই আছো।”