কুসুম কুমারী দাস
-সঞ্চিতা রায়
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ ছোটবেলা থেকে শুনে আসা এই কবিতা(আদর্শ ছেলে) র লেখিকা কবি সাহিত্যিক কুসুমকুমারী দেবীকে এই লেখার মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে চাই।
কবিপুত্র জীবনান্দ দাশ বাংলার এক বিখ্যাত কবি। কিন্তু জীবনানন্দের মা হিসাবে নয়, তাঁর নিজস্ব প্রতিভাতেই তিনি বাংলার সাহিত্য জগতে অমর।
কবি কুসুমকুমারী দাশ বাখরগঞ্জের বরিশালে ১৮৭৫(বাংলা ২১শে পৌষ ১২৮২) সালে এক বিদ্যোৎসাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম চন্দ্রনাথ দাশ ও মাতার নাম ধনমানী দাশ। ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করায় তাঁর বাবা চন্দ্রনাথ দাশকে গ্রামের পৈতৃক ভিটা গৈলা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। কবি কুসুমকুমারী বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর অর্থাভাবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর বাবা তাঁকে রামানন্দ চট্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করান। বোঝা যাচ্ছে তখনকার দিনের তুলনায় তাঁর পরিবারের মানসিকতা অনেক উচ্চ ছিল। বেথুন স্কুলে তিনি দশমশ্রেণী পর্যন্ত পড়েন।
উনিশ বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন এর প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁর স্বামী ছিলেন অত্যন্ত সাহিত্য অনুরাগী। এখানে এসে তিনি জ্ঞান চর্চার একটি প্রশস্ত ক্ষেত্র পেলেন। বরিশালের ব্রাহ্মদের সভা অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত যোগ দিতেন। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তাঁর ছোট থেকেই। রামানন্দ চট্যোপাধ্যায়ের রচিত শিশুদের গ্রন্থের প্রথম ভাগে তিনি যুক্তাক্ষর বিহীন ছোট পদ্যাংশ লিখেছিলেন। তাঁর লেখা ‘পৌরানিক আখ্যায়িকা’ তাঁর গদ্যগ্রন্থ। প্রবাসী, মুকুল, ব্রহ্মবাদী প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি প্রায়ই লিখতেন। শিশুদের জন্য ‘কবিতা মুকুল’ বইটি রচনা করেছিলেন। ‘নারীত্বের আদর্শ’ প্রবন্ধ লিখে তিনি স্বর্ণপদক পান। বহু সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউর বাড়ীতে তিনি শেষ স্বর্ণপদক পান। বহু সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউর বাড়ীতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এমন একজন কবি সম্পর্কে আমাদের সকলের অবশ্যই জানা উচিৎ, তাই এই প্রবন্ধ লেখা।
(তথ্যসূত্র ইন্টারনেট ও সাহিত্য সংসদের ‘বাঙালী চরিতাভিধান’।)