অণু গল্প

অণু গল্প- শেষ বেলায়

শেষ বেলায়
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

চলে গেল বহুদূরে। আর ফিরবে না,পৃথিবীর আলো আর দেখবে না। এই তো কয়েক মিনিট আগে ও চেয়ে চেয়ে দেখছিল পৃথিবীর রূপ,রং। ফুলের সুগন্ধে মেতেছিল,পাখির কূজন শুনে মুগ্ধকর্ণ, শিশুর চিৎকারে বিরক্ত আর সংসারের কোলাহলে ঝালাপালা হওয়া মানুষটা ক্ষণিকের মধ্যে চুপচাপ, কোন স্পন্দন নেই প্রাণের।
শান্তিতে চক্ষু মুদিত (আমার মায়ের বাবা) দাদু। বড় আদরের নাতনি আমি। আমার পড়াশোনা নিয়ে সবসময় সচেতন। বলতো, এই যে আমার দিদিমনি, সত্যিকারের দিদিমনি হতে পারবি তো? ছাত্র পড়াতে হবে, মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে। শুধু হেঁসেল ঠেলা আর ছেলে মানুষ করলেই চলবে না, মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। দাদু তখনকার দিনের হাইস্কুলের মাস্টারমশাই, যে ক’টা টাকা পেত, ঠিক করে সংসারই চলত না, তবু ছাড়েনি শিক্ষকতা। বিনা বেতনে গ্রামের মেয়েদের পড়াত।

একটু বড় হতেই বাবা জ্যেঠু ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমার বিয়ে দিতে। পাত্রপক্ষ দেখতেও আসে, কিছুতেই বসবো না, জ্যেঠুর কথাই বাড়িতে শেষ কথা।
সে যাত্রায় দাদুই বাঁচাল,বুঝিয়ে সুজিয়ে বিয়েটা আটকে দিল। খুব খুব খুশি হয়েছিলাম আমি,দাদুর ওপর। একদিন হাসতে হাসতে দাদু একটা কলম দিয়ে আমাকে বলেছিল, আমি যেদিন থাকব না ,সেদিন এই কলম দিয়েই লিখিস আমার কথা, নারী শিক্ষার কথা, তুই দিদিমনি হয়ে দেখিয়ে দিস। মেয়েরাও সব পারে।
যত্ন করে রেখেছি কলমটা, আজ দাদু আর নেই, রয়ে গেছে সেই কলমটা আর একটা ডায়েরী। যাতে বড় বড় হরফে লেখা আছে, “আমার আদরের দিদিমনি” জন্য এই ডায়েরীটা রেখে গেলাম্।
ডায়েরীটাতে দিদার সঙ্গে কি করে বিয়ে হল, কি ভাবে ন,বছরের স্ত্রী “দিদাকে’ লেখাপড়া শিখিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিল, সুন্দর করে লেখা, আজ যা অমূল্য সম্পদ।
সেই কলমেই লিখলাম্ দাদুর জীবন কথা। “শেষ বেলায়”।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page