Site icon আলাপী মন

গল্প -আশ্রয়

আশ্রয়
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

একেবারে পায়ের গোড়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তখন সবে আমি রান্না শুরু করেছি। সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা হবে। বাইরের গেটটা হাল্কা খোলা ছিল। একজন বয়স্ক মহিলা গেট খুলেই রান্না ঘরে হাজির।
আজকাল ভীষণ চোরের উৎপাত হচ্ছে। অস্ত্র হাতেও বাড়িতে এসে মেয়েদের নানা ভাবে অত্যাচার করছে।এই সব কথাগুলি মনের মধ্যে আসতেই ভীষণ ভয় পেলাম।
বৃদ্ধা একেবারে পায়ে ধরার মত করে বলছে, ‘দু’টো খেতে দিবি রে। বড্ড খিদে পেয়েছে। দু’দিন কিছু খাই নি। মাথাটা খুব ঘুরছে। দিবিরে?’ আবার কখন ও বলছে, ‘বুকটা বড্ড ব্যথা করছে।’
কথাগুলো শুনেই খুব ভয় পেলাম। একটা মায়াও হচ্ছে। কত দিন খায় নি কে জানে? আবার ভাবছি
কোন ছদ্মবেশী নয় তো?
আমি কিছু মুড়ি চানাচুর খেতে দিলাম। সত্যিই বৃদ্ধা জল দিয়ে ভিজিয়ে খাওয়ার জন্য হুটোপাটি করছে। ততক্ষণে ছেলে মেয়ে কাছে এসে পড়েছে। খুব ভয় পাচ্ছে ওরা। মেয়ে বলল,বাবাকে একবার ফোন করো। ছেলে বলল, পাশে বাড়ির দিদাদের ডেকে আনি। আমি ও খুব ভীতু। রাতের বেলা আমরা তিন জন বাড়িতে। যদি কিছু বিপদ হয়?
খাওয়া হয়ে যেতে জানতে চাইলাম সব পরিচয়।
বাড়ি কোথায়? কোথা থেকে এসেছে?
একটাাই উত্তর,আজ রাতটা তোদের বাড়ি থাকব। ছেলের বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাস্তাটা ভুলে গিয়েছি। নাম জানতে চাইলাম। কিচ্ছু বলতে পারে নি। মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বিড়বিড় করে কি যেন বলেই চলেছে।

পাশের বাড়ি থেকে কাকিমা এল।
দেখেই বলে, যাই হোক, বাড়িতে রেখো না। দিনকাল ভালো নয়। মনে হয়, এ বুড়ির মাথা খারাপ। নয় তো অসুস্থ। রাতে কিছু হয়ে গেলে বিপদের শেষ থাকবে না। 
কাকিমা একপ্রকার জোর করে গেটের বাইরে বের করে দিল। বাড়ি যাও নইলে ছেলের বাড়ি কোথায় খোঁজো। এখানে রাতে থাকা যাবে না।
বুড়িটা আমার দিকে একবার তাকাল। কেমন কষ্ট হল। তবু কিছু করার নেই।
চলে গেল বিড়বিড় করতে করতে।

সকাল বেলায় ঘুম ভাঙতেই হৈ চৈ এর আওয়াজ পেলাম। বাইরে বেড়িয়ে শুনতে পেলাম দূরে মাঠের ধারে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ পড়ে আছে। বুকের ভেতরটা ঢিপ করে উঠল। পরে শুনলাম আমাদেরই পাড়ার নতুন এক ভাড়াটিয়ার মা। বছর পালা খেত দুই ছেলের কাছে। কালই ছিল শেষ দিন। তাই ছোটছেলের কাছ থেকে বড় ছেলের বাড়ি আসছিল বৃদ্ধা।

পথে প্রেসার হাই হয়ে ছিল। তাই মনে হয় মাথা গরম হয়ে যায়। সব ভুলে গিয়েছিল।

ভাড়াটিয়া মৃতদৃহটা শনাক্ত করেছে।
দুই ছেলেকে বৃদ্ধা মুক্তি দিয়ে গেল।
একটা অপরাধ আজও আমাকে দংশন করে বারেবারে।  একটা আশ্রয় পেলে হয়তো….।

Exit mobile version