আমি নারী
-সুজাতা দাস
আমি কৃষ্ণা, আমি পাঞ্চাল রাজ নন্দিনী; আমি দ্রৌপদী-
আমি অগ্নিকন্যা, যজ্ঞকুণ্ডডে জন্ম আমার; আমি যাজ্ঞসেনী-
আমি পঞ্চ স্বামীর পত্নী, পঞ্চপুত্রের জননী তবুও আমি অবহেলিত,
তবুও এককী আমি খুঁজে ফিরি ভালোবাসা- আজও সেই মুখ রেখেছি লুকায়ে,
স্বয়ম্বর সভায় পা রাখার মূহুর্তে হয়েছিল যে চার চোখের দৃষ্টি বিনিময়-
পিছিয়ে এলাম সখা কৃষ্ণার অঙ্গুলিহেলন, চায়নি সরিয়ে নিতে পা
তবুও এগিয়ে গেছি একের পর এক রাজ পুরুষকে পেরিয়ে সম্মুখপানে-
কৃষ্ণ সখি আমি কৃষ্ণা সেই দিন হয়েছিলাম এক দাবার বোড়ে,
শুরু হয়েছিল সেই দিন থেকে এক অন্ধকার দিকের সূচনা;
যা শেষ হয়ে ছিল এক ভয়ংকর ধর্মযুদ্ধে-
তারপর জিতলেন অর্জুন মাছের চোখ ভেদিয়া পাঞ্চালীরে,
কিন্তু ভাগ হলাম আমি পঞ্চপাণ্ডবে; শুরু হলো নারীত্বের অবমাননা-
চললাম তের বৎসরের জন্য বনবাসে, সেখানেও অবমাননা নানাছলে;
রইলাম ক্রীতদাসী হয়ে বিরাট ভবনে এক বৎসর কাল সেখানেও কীচকের অবমাননা ঘিরে ছিল আমাকে-
ভালবেসেছিলাম অর্জনে কিন্তু একটু ভুলের কারণে চলে গেলে আমার থেকে অনেক অনেক দুরে-
বারো বৎসরের পরে ফিরেলেন চিত্রাঙ্গদা নাগরাজকন্যা উলপী আর কৃষ্ণ ভগিনী সুভদ্রাকে বিবাহ করে-
এখানেও অবমাননা আমার, পাওয়া হলো না আর অর্জুনে-
ভালোবেসেছিলেন অর্জুন সুভদ্রাকেই-
এরপর ইন্দপ্রস্থ!! যজ্ঞস্থলে চলল সখা শ্রী কৃষ্ণের অপমান- বধ হলেন শিশুপাল একশ অপরাধ ক্ষমার পরে শ্রী কৃষ্ণের হাতে-
সুদর্শন ফিরে আসার সময় রক্ত ঝরালেন ভগবানেরও, সেই সময়ের উপকারের কারণে লজ্জা থেকে নিস্তার পেলাম কিন্তু রজঃস্বলা শরীরেও অবমাননার স্বীকার হলাম-
আমি পাঞ্চালী আমি অবহেলিত অপমানিত প্রতিনিয়ত-
আমি হলাম কুরুসভায় বিক্রিত, অবনত মস্তকে হতে দিলেন স্ত্রীর অবমাননা পঞ্চ স্বামী,
ধর্ম হলেন বিমুখ অধর্মের কাছে-
কেমনে পারলেন সইতে অবমাননা পঞ্চপাণ্ডব-
তাকিয়ে ছিলাম আমি একবার আমার রক্ষার্থে সামন্তরাজ কর্ণের দিকে-
রেখেছিলেন মাথা নত এক রাজবধুর অবমাননার সামনে-
সখা কৃষ্ণ ভগবান- তিনি হতে দিলেন আমার লাঞ্ছনা-
সত্যি ই কী ছিলেন সখা তিনি? না আমি ছিলাম ধর্মযুদ্ধের এক ঘুঁটি মাত্র-
এরপর যুদ্ধ শুরু শতশত বীর যোদ্ধার সাথে অভিমন্যু আর আমার পঞ্চ পুত্রের মৃত্যু হলো আমার সামনে-
ভগবান তুমি তো সব জানতে তবুও কেন হতে দিলে এই যুদ্ধ-
আজ আমি অপরাধী কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের-
সব হারিয়েও খুঁজেছি ভালোবাসা যা আমার প্রাপ্য ছিল পাওয়া
কিন্তু হারিয়েছি বারে বারে শুধু আমি যাজ্ঞসেনী বলে-
অগ্নিকন্যা আমি তাই হয়তো সব হারিয়েছি আপন ভাগ্যদোষে-
হে মাধব আমি তো ছিলাম সখি তোমার,
তবুও কেন হয়নি পরিবর্তন যা তুমি অনাআসেই করতে পারতে-
আসলে তুমিও নিয়তির হাতে বাঁধা ছিলে তাই গান্ধারীর অভিশাপ তোমাকে স্পর্শ করেছিল-
তোমার নিজের মুক্তি পেতে-
আসলে নারীর অবমাননা যেখানেই হবে ধ্বংস
হবে সেই জায়গা এমনিই প্রকৃতির নিয়ম- তাই দ্রৌপদীরাই বারেবারে অপমানিত হন,
এই ধ্বংসের কারণ হিসাবে-