ভুতের ভাবনা
– সুজিত চ্যাটার্জী
এখন আমি ভূতের আস্তানায়। কি করে এলাম জানিনা। অন্ধকার পাহাড়ি পথে গাড়ি বিগড়ে গেল। জনপ্রাণী হীন। তার মধ্যে প্রবল বৃষ্টি। উপায় নেই। ভোরের অপেক্ষায়, গাড়িতেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত পাকা। ঘুমিয়ে পরেছি। আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল।একি,আমি কোথায়? সাজানো ঘর। আলো নেই, তবু ঘর আলোকিত। বিশাল খাটে আমি শায়িত।
আমার চারপাশে কয়েক জন, বিকটাকার লোক দাঁড়িয়ে। একজন হেঁ হেঁ করে হেসে বললে,
‘কি, ক্ষিদে পেয়েছে, খাবে তো?’
‘তোমরা কারা, আমি কোথায়?’
‘আমরা ভূত। হেঁ হেঁ হেঁ’
‘সর্বনাশ। ভূত মানে!’
‘ভূত মানে ভূত। মানুষ মলে যা হয়।’
‘ওরে বাবা রে, আমি বাড়ি যাবো।’
‘তোমরা সেই একইরকম রয়ে গেলে। ভূতের ভয়! কেন শুনি? মানুষের চেয়েও কি ভূত খারাপ?’
‘কি বিপদ, না না, খারাপ কেন, ভালোই তো।এবার যাই কেমন?’
‘তা কখনো হয়? তোমাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে এলুম, ছেড়ে দেবার জন্যে?’
‘তাহলে?’
‘তোমার কাছে জানবো। মানুষ কি সেই আগের মতই আছে, নাকি একটু মানুষের মতো মানুষ হয়েছে?’
‘জানবার আর লোক পেলে না, শেষমেশ আমি?’
‘আচ্ছা, তোমরা ভগবানের পুজো করো, আর আমাদের ভয় করো কেন? আমাদের শক্তি কি ওদের চেয়ে কম? ওরাও বর দেয়, আমরাও দিই। সত্যজিৎ এর ছবি, দ্যাখনি? তবে? যাকগে, যা বলছিলাম, মানুষগুলো সেইরকম হিংসুটে, লোভী, স্বার্থপর..’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, একই রকম আছে, চিরকাল থাকবে, ও যাবার নয়। কেন, তোমরা কি তা নও?’
‘একেবারেই না। কেন জানো, আমাদের অতীত ছাড়া আর কিছুই নেই। তোমাদের যত জ্বালা তো বর্তমানকে নিয়ে, আর যত ভাবনা, দূর্ভাবনা,ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাইতো এত হানাহানি।’
‘ওরে বাবা এগুলো কি? এত খাবার, মানে আমার জন্যে?’
‘খেয়ে নাও, নাচ গানের ব্যাবস্থা আছে জম্পেশ। তোমার জন্যে।’
‘সত্যি তোমরা কি ভালো। শুধু শুধু আমরা ভুল ভাবি।’
‘তোমাদের জন্মটাই ভুলে ভরা। না মরলে বুঝবে না। এখানে কেবলই আনন্দ।’ ‘ভয়,ভাবনা, মারামারি, রোগভোগ, কান্নাকাটি, মামলামকদ্দমা, বিচ্ছেদ, বিশ্বাসঘাতকতা, মানে তোমাদের যা স্বভাব। তার কিছুই এখানে নেই।’
‘সত্যি বলতে কি,তোমাদের ছেড়ে আর যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাদের সাথে থাকতেই বেশী ভালো লাগছে। মানুষের মাঝে ফিরে গেলে তো,আবার… আচ্ছা, তোমাদের মাঝে থাকতে পারিনা? বরাবরের মতো?’
‘সময় হলেই পারবে। তবে বলবো, মানুষ হয়েও যদি ভূতের স্বভাব পেতে পারো, সেই চেষ্টা করো, তাতেই সক্কলের ভালো।’
পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে, ফেসবুকে লিখলাম, “আমার এখন ভূতেদের সংগে থাকতে বেশী ভালো লাগছে” একজন মানুষ কমেন্ট করলো,
“রতনে রতন চেনে।”
ভোর হয়ে গেছে। গাড়ি সেরে গেছে।
স্বপ্ন কিন্তু ভাঙেনি। সে থাকবে আমার সঙ্গে আমৃত্যু।
সকল বন্ধুদের এই লেখা টি পড়বার অনুরোধ রাখলাম। অবশ্যই আনন্দ পাবেন। গ্যারান্টি।
কি করবো , নিজের ঢাক আজকাল নিজেকেই পিটতে হয়। হা হা হা হা।