ভীষ্ম সংবাদ
-সুজাতা দাস
যেদিন গঙ্গার প্রেমে পাগল শান্তনু প্রস্তাব দিলেন বিবাহের-
শর্ত রেখেছিলেন গঙ্গা, তাঁর কোনও কাজে বাঁধা হবেন না শান্তনু-
তবুও বাঁধা দিয়েছিলেন শান্তনু, যখন অষ্টম সন্তান জন্ম নেবার পরে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে গেলেন সেই পুত্রকে-
পারেননি গঙ্গাকে দেওয়া শর্ত রাখিতে-
শর্ত মেনে ফিরে চললেন পুত্রকে সাথে নিয়ে, ফিরিয়ে দেবেন মানুষের মতো মানুষ করে, এই শর্ত পতিরে দিয়ে-
গঙ্গার সাহচর্যে দেবব্রত বড় হতে থাকলো-
অল্পদিনেই পারদর্শী হয়ে উঠলো দেবব্রত অস্ত্রবিদ্যায়, দূরদর্শী হলেন চিন্তায় আর মননে-
সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠলেন তিনি নিজের ক্ষমতায়-
একদিন মায়ের কাছে অস্ত্র শিক্ষাকালে শর নিক্ষেপ বাঁধিলেন গঙ্গার ধারাকে-
অদ্ভুত এই দৃশ্যের সম্মুখীন হলেন দেবব্রত, কার এই ক্ষমতা? মনে মনে ভাবিয়া এগিয়ে চলিলেন উৎস সন্ধানে-
খুঁজে পেলেন পত্নী আর সন্তানকে, অনেক আকুতিতেও ফিরলেন না তিনি আর রাজমহলে-
ফিরে চলিলেন দেবব্রত পুত্র শান্তনু সাথে-
দিন তো চলে দিনের খেয়ালে, নিয়তির খেলাকে বুঝিতে পারে-
চললেন শিকারে তিনি বনের উদ্দেশ্যে-
চলতে চলতে হঠাৎ এক সুন্দর গন্ধ পাগল করলো তাঁকে-
গন্ধের উৎস খুঁজতে চললেন তিনি,গন্ধের সন্ধানে-
দেখলেন শান্তনু এক পদ্মগন্ধা মেয়ে-
পরলেন আবার প্রেমে তিনি, নিবেদন করলেন প্রেম কন্যার সকাসে-
দিলেন ধীবররাজ শর্ত একখান, দিতে পারেন বিবাহ যদি তার সন্তান রাজ্য পান-
ফিরলেন শান্তনু বিমর্ষ বদনে, দিন দিন গঙ্গাপুত্র জিজ্ঞাসে পিতারে-
বলিলেন কেমনে করিব দান এই রাজ্য অন্য পুত্রে, তুমি যে আমার জ্যেষ্ঠপুত্র দেবব্রত-
পিতারে করিতে তুষ্ট করিলেন এক আশ্চর্য প্রতিজ্ঞা রাজ কুমার দেবব্রত- থাকিবেন কুমার হয়ে নিয়ে ব্রক্ষ্মচর্য-
এই ভীষণ প্রতিজ্ঞায় কাঁপিল মেদিনী, সঙ্গে কাঁপিল স্বর্গ মর্ত্য সুরধণী-
সেই হতে তাঁর নাম হইলো ভীষ্ম-
পেলেন শান্তনু হতে এক বর ইচ্ছা মৃত্যুর-
চলিলেন অতঃপর মায়ের সমীপে করিলেন বন্দনা গঙ্গার চরণে-
মাতৃ শীতলতায় করিয়া অবগাহন অতঃপর ফিরিলেন ভীষ্মদেব হস্তিনানগর-
সংসারে থেকেও পারলেন নির্লিপ্ত থাকিতে, রাজকার্যে সহায়তা করেন অনুজে-
এই ভাবেই নানা ঘটনার সমাহারে হইলেন তাতশ্রী পঞ্চপাণ্ডব আর কৌরবের-
কৌরবের ক্রূরতা হতে রক্ষেণ পান্ডবে, দিতে থাকিলেন শিক্ষা তাঁদের কৃপাচার্য আর দ্রোনাচার্যের সাথে-
অস্ত্র শিক্ষায় পারদর্শী সমস্ত রাজকুমার, হইলেন তবুও অর্জুন প্রিয়পাত্র তাতশ্রীর অপার-
ধনুর্বিদ্যায় অর্জুনের পারদর্শিতায় আপ্লুত তাতশ্রী,রাখলেন অর্জুনে সদা পাশে তাঁর-
এভাবেই একদিন গান্ডীবধারী অর্জুন, চলিলেন দ্রৌপদী সহিত শকুনীর কূটিলতায় পঞ্চপাণ্ডব সহিত বনে-
তেরো বৎসর কাল পূর্ণ হলো নানা ঘটনায়, ফিরিলেন ইন্দ্রপ্রস্থের নতুন রাজ সভায়-
নানা ছলে কাড়িলেন ইন্দ্রপ্রস্থ, করিলেন অবমাননা রাজবধুরে রাজসভার পরে-
লাগিল ভীষণ যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের মাঠে, চলিল আঠেরো দিন যুদ্ধ নানা কারনে-
শতশত প্রাণ গেল’গেল মহারথী, শিখন্ডীর কারণে ছাড়িলেন অস্ত্র; ভীষ্ম মহারথী-
অর্জুনের বাণে বিদ্ধ হয়ে নিলেন শরসজ্জা, ছাপ্পান্ন দিন দিলেন পান্ডবে অগাধ জ্ঞান আর বিদ্যা-
মাতা গঙ্গা দিলেন কোল শেষ সময়ে এসে, চলিলেন অষ্টবসুর শেষ বসু নিজের আলয়ে-
ধুয়েছিলেন নিজ পাপ গঙ্গার সংস্পর্শে-
পতিত পাবনী রূপে চিরকাল তিনি স্বর্গ মর্ত পাতালে-
উচ্চারিত যখনই হয় নাম দেবব্রতর-
গঙ্গাপুত্র নামে খ্যাত হলেন, তাতশ্রী ভীষ্ম ।।