গল্প- “রাতের রজনীগন্ধা”

রাতের রজনীগন্ধা
– রাখী চক্রবর্তী

হাল্কা ঝড় বৃষ্টি হওয়ার পর টাটা সুমো তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে। রাত দশটার মধ্যে চাকদাহ’র “সবুজ বাতাস” হোটেলে না পৌছতে পারলে হোটেলে আর ঢোকা যাবে না। এর জন্য তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাচ্ছে সুমোর ড্রাইভার।
মনিকা আর আকাশ বিয়ে করে এই প্রথম চাকদহ যাচ্ছে। তিনদিন হোটেলে থাকবে। তারপর বর্ধমান, আরামবাগ, ব্যান্ডেল এই সব জায়গায় যাবে।
কল্যাণী হাই রোডে যখন গাড়ি ঢুকল তখন রাত নটা।
-দিদি রজনীগন্ধার ফুলের মালা নেবে?

ড্রাইভার গাড়ি থামাও, বলে মনিকা হাঁপাচ্ছে।
-কি হল মনিকা, গাড়ি থামাতে কেন বললে আর এত হাঁপাচ্ছো কেন?
-কে যেন বলল দিদি রজনীগন্ধার মালা নেবে!
ড্রাইভার বললো, এসব কথাতে কান দেবেন না।অলৌকিক ঘটনা রোজ ঘটে এই রোডে।
আবার গাড়ি তীব্র গতিতে ছুটছে। মনিকা একটু স্বাভাবিক হল।
দশটার মধ্যে ওরা হোটেলে পৌছে গেল। বিলাসবহুল হোটেল দেখে মনিকা খুব আনন্দ পেল।
আকাশ বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল, যাও একবার বাথরুমটা গিয়ে দেখো।
মনিকা বাথরুমে গিয়ে দেখল, সারি সারি রজনীগন্ধার স্টিক, মালা। কি সুন্দর গন্ধ। মনটা ভরে গেল মনিকার।
রাতের খাবার দিতে এসেছে হোটেলের স্টাফ।
মনিকা বলল, স্যার আপনাদের আপ্যায়ন আমাদের খুব ভালো লেগেছে। বাথরুমে রজনীগন্ধার স্টিকের ও মালার তো জবাব নেই।
-না ম্যাডাম আমরা বাথরুমে রজনীগন্ধার স্টিক, মালা দিইনি।
আকাশ বলল, কি সব বলছো কোথায় ফুল? আমি তো দেখলাম না।
ওরা বাথরুমে গিয়ে দেখল কোথাও তো রজনীগন্ধার স্টিক নেই। মনিকা বলল, আমি দেখলাম যে।
যাইহোক রাতে মনিকার চোখে ঘুম নেই। প্রতি মিনিটে মিনিটে ও বাথরুমে যাচ্ছে। আর ফুলের সুবাস নিচ্ছে।
ভোর বেলায় আকাশ ঘুম থেকে উঠে মনিকাকে দেখতে না পেয়ে হোটেলের স্টাফদের জিজ্ঞাসা করলো, আমার মিসেসকে দেখেছেন? আমাদের রুমেও নেই।
-না তো স্যার। এখনও হোটেলের মেইন গেট খোলে নি তো। তাহলে উনি কোথায় গেলেন?
হোটেলের সবাই মনিকাকে খুঁজতে শুরু করল।
হোটেলের দারোয়ান বলল, বাবুসাব রাতে যখন আপনারা এলেন, তখন ঐ মেয়েটাকে আপনাদের সাথে কেন নিলেন না। কি কাঁদছিল মেয়েটা। আমি বললাম ‘তুমি কাঁদছ কেন?’
মেয়েটি বলল, আমার ফুলের সুবাস নিল ওই দিদি আর আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল না। আমার খুব খিদে পেয়েছে।

আমি বললাম, তুমি একটু দাঁড়িয়ে থাক এখানে, আমি আসছি। কিন্তু ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেই দেখি মেয়েটি উধাও।
আকাশ বলল, না তো আমাদের সাথে কেউ আসে নি তো।
আকাশ ভাবতে বসল, কাল রাতে মনিকা রজনীগন্ধা স্টিকের কথা বলল। গাড়িতেও বলল, কে যেন ওকে রজনীগন্ধা ফুল নিতে বললো।
কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
হোটেলের সামনে লোকজন জমায়েত। মনিকার কোন খোঁজ নেই। পুলিশ ভালো করে হোটেলের তল্লাশী চালাচ্ছে। এর মধ্যে আকাশের রুমে গিয়ে পুলিশ চমকে গেল, রজনীগন্ধার ফুল দিয়ে ওদের ঘরের খাট সাজানো দেখে। আকাশ তো এই দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।
সকাল, দুপুর বিকেল গড়িয়ে রাত্রি হল। রাত্রি বেলায় পুরো হোটেলে রজনীগন্ধার স্টিক ছড়ানো। রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধতে মো মো করছে হোটেলটা। মনিকা আর ফুলের ঝুড়ি হাতে নিয়ে ঐ মেয়েটা যাকে দারোয়ান দেখেছিল, ওরা দু’জনে সারা হোটেল ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ ওরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তদন্ত করে কিছুই পেল না। আকাশকে তো ফিরতে হবে। তিনদিন এইভাবে কাটল আকাশের। লোকমুখে কল্যাণী রোডের রজনীগন্ধা ফুলের কথা এদিক ওদিক চাউর হল। বেশ কিছু মানুষ বলতে লাগল কল্যাণী রোডে রাতের বেলায় আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। কেউ কেউ বললো নিজের চোখে তারা দেখেছে অতৃপ্ত আত্মারা কিভাবে নির্জন রোডে ঘুরে বেড়ায়।
আকাশের অবস্থা ভালো না। হোটেলের মালিক আকাশকে আকাশের মামার বাড়ি বর্ধমানে দিয়ে এল। তবে ঐ হোটেলে মনে হয় না আর কোন অতিথি থাকতে যাবে।
সমাপ্ত

Loading

Leave A Comment