রাজকন্যে,তোমার জিয়ন কাঠি
-ঋজু
রাজকন্যে,
মনে পড়ে তুমি বলেছিলে, আমার সবকটা বই তুমি নিজের সংগ্রহে রাখবে,পড়বে…
এবারের ২৫ শে বৈশাখ আমার শেষ বইটি আসতে চলেছে।
এবারেরটাও তোমায় নিয়েই। এখন জীবনানন্দের বনলতা বা,সুনীলের নীরার মতোন তুমিও চাইলেই বলতে পারবে “আমিও একজনের সবকটা কবিতা জুড়ে আছি”।
হ্যাঁ গো,আমার সব কবিতায় উল্লিখিত ঐ “রাজকন্যে” নামটাতে তোমার অধিকারটা কখনো যায় নি;যাবেও না; যাক চাই ও না…
না হয় তারপরে তোমাতে আগুনের দু’কদম বেশী অধিকার আমার চেয়ে; তোমার নতুন সংসারের তারাভাই বোন দের ও…
বড়ো নিরুপায় লাগে রাতটা সুন্দর মনে হলে;বয়সের ওজন ক্লান্তি আনে মনে।
মাঝে মাঝে কোনো মৌখিকতাহীন এমনই মৃদু অথচ নিরাপরাধ;অকারন দুপুরে তোমার অবয়বটা ইন্দ্রিয়গোচর হয় না; হাঁফিয়ে উঠি.. তোমার প্রিয় গানদুটো তুলবো বলে বেহালা কাঁধে পিঠ ঠেকাই দেওয়ালে।
আচমকা লিখে ফেলি কতো কিছু আবোল তাবোল…
জানো, এখন আমি আমার ঘর-বিছানা-টেবিল সব গুছিয়ে রাখতেও শিখে গেছি; নিয়ম করে ওষুধগুলো ও খাই। এখন ক্লিনশেভ রাখি যেমনটা তুমি চাইতে। রোজ জল দিই ক্যাকটাস গাছগুলোতে, প্রত্যেক শুক্রবার থিয়েটার দেখতে গিয়ে আমি, আমার জন্য দু’টো সিট বুকিং করাই…
হয় না শুধু তোমার মতোন চীজ স্যান্ডউইচ; আর, বলা না কওয়া না…আচমকা কর্পূরের মতোন মহাবিশ্বের সবকটা নাম না জানা ধূলীকনার সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়া টা;ইচ্ছেমতোন ছুটি স্যাংশান করানো টা ও।
নাঃ আমার কোনো পিছুটান নেই,তবু,আজকাল আর অঙ্ক ভালো লাগে না।
বিকেলটা গড়ালে তবু,ছেলেমেয়েরা পড়তে আসবে ব্যাগ কাঁধে। বেশ কাটবে সন্ধ্যেটা ওদের নিয়ে। অন্ততঃ সে আশাটুকু রাখি ওদের হাসির কাছে। এভাবেই রাত বাড়বে।
আর বেশী জাগতে পারি না; বয়েস হয়েছে,বোঝোই তো।তবু খাওয়াদাওয়া সেরে হাঁটতে আসি বারান্দাটায়। কতো চিঠি ছুড়ে দিই রোজ বারান্দায় থেকে তারাদের লক্ষ্য করে…
“ওই? খেয়েছিস? কি খেলি আজ রাতে? একা খেলি?…” ইত্যাদি।
পরদিন সকালে দেখি পৌরসভার সাফাইকর্মীরা মুখ টিপে হাসাহাসি করে। কি জানি কেন?
বড়ো একটা উত্তর জানতে ইচ্ছে করে।
আজো; কোনো বৈশাখের লোডশেডিং রাতে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যদি দেখলে বিছানাটা জ্যোৎস্নায় এক্কেবারে ভিজে চুপচুপে;অবাক হয়ে চুপ মেরে যাবে তো আজো?
আমি তো হই… আগের মতোনই ফোনের অপেক্ষা করি।জানি; তুমি ও দেখছো, চাঁদের ঐ কালো দাগটা।
মনে পড়ছে বড্ডো একসাথে কাটানো প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে টা র কথা; বিশেষ করে আমাদের ঐ একে অপরকে নিয়ে লেখা কবিতার ঐ দু’টো লাইন…আর উল্টো পিঠে তোমার হাতের লেখায়, “প্রাপকের উদ্দেশ্যে, আজ যে শতাব্দী,সন,মাস,তারিখ,সময় ই হোক না কেন,আমরা একে অপরকে সেভাবেই ভালোবাসি। এটি পেলে নিম্নের নম্বর দুটিতে যোগাযোগ করুন।”
বোতলবন্দী করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার সময়ও জানতাম আমরা সত্যি কথাই বলছি।আজ জানা আর মানা রা নিজেদের ভিতরকার সবকটা তফাৎ ভুলে মিশে একাকার হয়ে আছে।
আমি ভালো আছি।
ভালোবাসায় আছি; তুমি ও থেকো পারলে।
মহাবিশ্বের যে প্রান্তেই থেকো, তুমি ও ভালো থেকো। -তোমার জিয়ন কাঠি