তিয়াসের প্রেমে
-রঞ্জনা সেনগুপ্ত
সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। আকাশেরও বুঝি বা আজ মন খারাপ, রজতের মতোই। গত কয়েকদিনের দমিয়ে রাখা মনখারাপটা যেন আজ আর কোনোভাবেই বাঁধ মানছে না। আজ রাতের ট্রেনেই রওনা হতে হবে কলকাতায়, রুপাই শহরটিকে চিরকালের মতো বিদায় জানিয়ে। শুধু রুপাই নয়, ছাড়তে হবে ওর তিয়াসকে, ওর ভালবাসার,আদরের তিয়াসকে। এই যন্ত্রণাই তো কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে। এই রুপাই শহরে বদলি হয়ে আসা অবধি তিয়াসই তো ওর একমাত্র বান্ধবী। এমনিতেই রজত খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের, নিজের প্রয়োজনের কথাও কম বলে; তার উপরে এই শহরটিও ভীষণ শান্ত, লোকজনের বাস কম-ই। অফিস থেকে ফেরার পর তিয়াস ছাড়া আর কেউই তেমন নেই রজতের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এই সুন্দর ছবির মতো শহরটির আরও অনেক অনেক সুন্দর রূপসী নদী তিয়াস। নামটা শুনে ভেবেছিল ‘নদ’, কিন্তু ওকে দেখেই বুঝেছিল “এ নদী না হয়ে যায় না! এতো রূপ কোন পুরুষের হতে পারে না!” প্রথম দেখাতেই প্রেম। আর তারপরে এমন কোন দিন যায়নি যেদিন কি না রজত যায়নি ওর প্রেমিকার কাছে। তিয়াসের পাশে বসে থেকেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বিভোর হয়ে দেখেছে ওকে, ওকে ছুঁয়েছে, ওতে মাতাল হয়েছে। ওর রূপে কেমন যেন এক অদ্ভুত নেশা আছে; চোখে স্বপ্ন এঁকে দেয়, আর মনে ধরিয়ে দেয় জ্বালা! ওর পাশে বসে, ওকে ছুঁয়ে রজত বলতে থাকে, ওর সারাদিনের খুঁটিনাটি ঘটনার কথা, ওর বাড়ির কথা, ওর অতীতের কথা আর ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা। তিয়াস কখনও নিজের শরীরে দোলা দিয়ে সাড়া দেয়, আবার কখনও বা চুপচাপ শোনে। আজ ওর তিয়াসের কাছে বিদায় নেওয়ার পালা। শেষবারের মতো তিয়াসকে ছুঁতে চাইল রজত, নেমে পড়ল ওর বুকে। হঠাতই তিয়াস অস্থির হয়ে উঠল। রজত উঠতে চাইল পারে, কিন্তু পারল না। কে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল ওকে! তিয়াস আজ কিছুতেই ওর প্রেমিককে চলে যেতে দেবে না। ধীরে ধীরে রজতকে ও শরীরের ভিতরে প্রবেশ করাল পরম সুখে। ওকে রেখে নিল চিরদিনের জন্য, নিজের গভীরে, পরম তৃপ্তিতে। রজত শুধুই ওর, ওকে ছেড়ে কারও কাছে, কোনদিনও যেতে দেবে না তাকে; যদি মরণ দিয়ে বাঁধতে হয় তার প্রেমিককে, তবে তাই সই!