জিয়নকাঠি
-সঞ্জয় গায়েন
পাঁচবছর অন্তর। পরিবর্তন প্রয়োজন। নইলে সেই একই মুখ। ভাল্লাগে না। একঘেয়েমি আসে। তাই সরকার নতুন মুখ পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সবার কাছে। আমাদের জীবনে এমনটা হলে মন্দ হয় না। প্রজ্ঞার একথা লেখার উদ্দেশ্য বুঝতে পারল না কৃষ্ণেন্দু। তাই ভ্রু কুঁচকে দু’চোখ নাচিয়ে ইশারা করল। মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সে কিছু বুঝতে পারে নি। প্রজ্ঞা হাতের মুদ্রায় জানাল, পরে বলবে। দু’জনে আবার কমপিউটারের কী-বোর্ডে আঙুল চালানো শুরু করল। ওদের অফিসে কথা বলা নিয়ে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ বিধি চালু আছে। তাই কাজের ফাঁকে কিছু বলার ইচ্ছে হলে ওরা স্ক্রিনে লিখে জানিয়ে দেয়। ওদের চেয়ার পাশাপাশি। একে অপরের রিপ্লাই দেয়া-নেয়া করতে অসুবিধা হয় না। এভাবে সারাদিন কাজ করে ওরা। গল্পগুজবও সেরে নেয়। লাঞ্চব্রেকে কৃষ্ণেন্দু ধরল প্রজ্ঞাকে।
-এবার বল্। পাঁচবছর অন্তর পরিবর্তন চাই মানে কি?
প্রজ্ঞা বলল, সত্যি কৃশ তুই ব্যাকডেটেড রয়ে গেলি আজও। কথা বুঝে নিতে হয়। কিছু কিছু।
– তোকে বারন করেছি, আমাকে কৃশ বলবি না। আমি কৃষ্ণেন্দু। কৃষ্ণ যুক্ত ইন্দু। কৃষ্ণের সঙ্গে চন্দ্রের…
– থামবি তুই। তোর পৌরাণিক গল্প শুনিয়ে আধঘন্টার লাঞ্চব্রেকটা বোর করে দিস না প্লিজ।
– ওকে। বল্ কি বুঝে নিতে হবে?
– শোন্ কলেজ লাইফে সুমন্তর সঙ্গে প্রেমটা পাঁচবছর হেভি এনজয় করেছি। তারপর পরস্পরের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়ার ছিল না। শুধু শুধু একে অপরের দায় নিলে বোর হতাম। তাই বিয়ে করি নি আমরা। রঞ্জনকে বিয়ে করলাম। নতুন সাথী। নতুন রোমাঞ্চ। নতুন শিহরণ। কিন্তু বিয়ের ফিফথ্ অ্যানিভারসারি সেলিব্রেট করতে গিয়ে দু’জনেই ফিল করলাম আমাদের একঘেয়েমি এসেছে।
– তাই রঞ্জনকে ডিভোর্স দিবি তাই তো? ভালো ল-ইয়ার চাই। খোঁজ নিয়ে কাল জানাবো।
– না রে। ডিভোর্স করব না আমরা।
– তাহলে?
– সেটাই তো ভাবছি। তোর পৌরাণিক যুগে এর কোন সমাধান নেই?
– পৌরাণিক যুগে দেবগণ বহুবিবাহ করতেন এই কারণে। কিন্তু তোরা মর্ডান লেডি। তোরা কি বহুবিবাহ মানবি?
– ইয়েস মানব। তবে বহুবিবাহ নয়। বহুপ্রেম।
– মানে!
– রঞ্জনকে বলব, তুমি মেয়ে খুঁজে প্রেম করো। আমিও হ্যান্ডসাম কাউকে সার্চ করি। হেভি এনজয় হবে। থ্যাংক ইউ কৃশ। ইউ আর সো কিউট। যুগ যুগ জিও পুরাণকাব্য।
কৃষ্ণেন্দু একেবারে থ। বিষ্মিত হয়ে বলে ওঠে, কি বলছিস তুই?
– ইয়েস ডিয়ার। এ যুগে পরকীয়ায় আমাদের জিয়নকাঠি।