Site icon আলাপী মন

কবিতা- নারী

নারী
– অমরেশ কুমার

 

নারী তুমি কার অধিকারে?
সমাজের! পুরুষের! নাকি সন্তানের?
সমাজ? সে তো কবেই তোমাকে সেবিকার
তর্জমা লাগিয়ে অসতী করেছে।
তাও, সমাজ তোমাকে চায় —
তুমি না থাকলে ভক্ষকদের বাঁচাই যে দায় ।
যারা তোমাকে এই কাজে টেনে নিয়ে এলো
তারা যে একে একে এলো আর গেলো
তাও, তাড়াই যে তোমাকে বলে —
নারীর আবার জাত কি ?
অচল সমাজের সচল পুতুল সেজে থাকা
প্রকৃত পরিচয় নয় কি ?

সমাজ,
সে তো দেখেও না দেখার ছলনায় মুখ ফিরিয়ে থাকে
যখন, তোমার রক্তমাখা দেহ ছড়িয়ে চারিদিকে
ভাবছো ? সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ জীবন
স্বপ্ন , স্পর্শ , স্মৃতি সবকিছু ভুলিয়ে
বরণডালা সাজায়ে এ পুরুষ হৃদয়ে পূজিত হবে–
স্বপ্ন ? সে তো মায়া !
স্পর্শ ? সে তো অনুশোচনা !
স্মৃতি ? সে তো বেদনা হয়ে ফিরে আসে
বারে বারে হৃদমাঝারে ।
আর , এই সংসার জীবনের স্মৃতির ঘেরা স্পর্শের মায়া
দিবাস্বপ্ন স্বরূপ মায়াবী রূপে
জোৎস্নার রাতের আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় জুড়ে ।

পুরুষ !
আসবে ফিরে ? নাকি এসেছে কখনও ?
কত পুরুষ , রোজ রাতে যায় আর আসে
কখনো কি কেউ ভালোবেসে বসেছে পাশে ?
নাকি! তারাও খুঁজে চলে —-
সেই রূপ, সেই স্মৃতি ,সেই স্পর্শের টান
মাঠ-ঘাট জীবনের কত পথ সবকিছু ফেলে
ছুটে আসে স্মৃতি ঘেরা বন্ধন ভুলতে ,
আবেগ ঘন মেঘ হয়ে, স্মৃতির বন্ধনে ঝরে পরে বর্ষার বারি হয়ে —
তুমি কি পারলে, সেই স্মৃতিয় স্মৃতি মেলাতে
নাকি, চোরা নদীর স্রোতের ন্যায় স্মৃতির বেদনায়
কল কল করে বইলে—

ভোগ্য পণ্যের ভাগী হয়ে যেতেই হয় রয়ে
তাইতো তানপুরারই তারের টানে ফকির কহে–
“জীবের যাওয়া আসা নদীর ভিতর, স্বর্গ নরক দুঃখ ক্লেশ,
যত লোভী কামি যায় রসাতল, দেখে নদীর পরিবেশ ” ।

বৃদ্ধকালে বৃদ্ধাশ্রমে, জোটে না ঘরে স্থান
তোমার কুঁচকে পড়া মুখের ভাঁজ,
ছেলের ঘরে বাড়ায় না আর, সৌন্দর্যের মান
ছোটবেলায় থাকতো ছেলে, আঁচল তলে
ডাকতো, মা, মা বলে
হাজার হাজার বায়না করতো
উঠতো চড়ে কোলে ;
মা ডাক, এখন হয়েছে বাসি —-
তুমি যে আজ, ছেলের বাড়ির, কাজের মাসি ।
তাও, হাজার দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে, হাসো তুমি
ছেলের হাসি দেখবে বলে;
খোকা আমার বাড়ি ফিরে, খেলো কিনা ,
জিজ্ঞাসা করতে তা যাওনা ভুলে ।

তাও!
তুমি ভাবছো, তুমি কার?
তুমি যে সামাজিক
তুমি যে বিশ্বের চালিকাশক্তি
তুমি যে মন্ডপের কল্পিত পূজিত মূর্তি
সমাজের তুমি সেবিকা
পুরুষের তুমি কাঙ্খিত সতী
সন্তানের তুমি ভালোবাসা
তাইতো, তুমি মাতৃত্বের ভালোবাসায় মোড়া
অসীম শক্তির অধিকারিণী দেবী।

Exit mobile version