প্রশ্ন- তাঁবেদারী?
– রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
‘বারান্দায় রোদ্দুর…… তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’ নাহ্, আর কারো না বর্ষারাণীর কথাই বলছি। পাড়া- পড়শীর আঙিনা ভেসে যাওয়ার সংবাদ শোনা গেলেও, আমার/ আমাদের আঙিনা ভিজলো না মোটে। আসে নি অঝোর বর্ষা। আমারো আর কবিগুরুর হাত ধরে বলা হয়ে ওঠেনি, “এমনি দিনে তারে বলা যায়, এমনি ঘনঘোর বরষায়….. বাদল ঝরোঝরে তপনহীন ঘন তমসায়…”। কোথাও অতিবৃষ্টি, বন্যা, দুর্যোগে নাজেহাল তো কোথাও অনাবৃষ্টি, দহন, খরা- চাতকের মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন-প্রহর গোনার পালা। প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা যেন মনে হয়েছে বৈষম্যমূলক বৈমাতৃক আচরণ। আবহাওয়া দপ্তর, পূর্বাভাস, আশা- ভরসার মাঝেই বর্ষাকাল শেষ হয়ে এলো প্রায়। এখন মন গুমরে বলে, “ওকে ধরিলে তো ধরা দেবে না, ওকে দাও ছেড়ে দাও ছেড়ে…”
এরই মাঝে গুটি গুটি পায়ের পদধ্বনি শরৎসুন্দরীর- রোদ মেঘের যুগলবন্দী। মনে আশা ক্রমে মিটবে দহন জ্বালা। শরৎ মানে উৎসব, আনন্দের পরিবেশ। বাঙালীর প্রিয়, প্রধান উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব।
পূরাণ মতে- শরৎকালে, রাবণ তথা অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য শ্রীরাম শক্তির আরাধনা করেছিলেন। শক্তি পূজার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই, যুদ্ধে সাফল্যের মনস্কামনায় করেছিলেন দেবীর বোধন- তাই এই পূজো ‘অ-কাল বোধন’ নামেও প্রচলিত। কালক্রমে ‘অ-কাল বোধন’ হয়ে ওঠে জনপ্রিয় উৎসব। কোথাও নবরাত্রি, কোথাও ‘দশেরা’ আর আমাদের বাঙ্গালীদের ভীষণ প্রিয়, আকাঙ্খিত শ্রী শ্রী দূর্গা পূজা। ষষ্ঠী থেকে দশমী নানান পূজা বিধির মাধ্যমে ভক্তি (বর্তমানে যদিও বাহ্যিক আচরণ, বিলাসবহুল ব্যবস্থার প্রতিযোগিতা) সহকারে পালন করা হয়।
তাহলে এটা বলতেই পারি যে আমরা শ্রী রামের পূজোর স্বীকৃতি স্বরূপ শারদীয়া উৎসব পালন করি। অথচ এখন নতুন কথা শুনি বাঙলার বিজ্ঞ- বিদ্বান জনেদের মুখে, ‘বাঙলা রাম সংস্কৃতিতে, রাম ধ্বনিতে অভ্যস্ত নয়।’ বেশ বিস্ময় জাগানো কথাই বটে- উৎসব কেন পালন করি সে বিষয়ে আমরা তাহলে অজ্ঞ!
দায়টা কাদের এই অজ্ঞতার? উৎসব, সংস্কৃতির উৎস- ইতিহাস যদি পূর্বসূরীরা ভুলে যান বা ভুলতে চান, তাহলে উত্তরসূরীদের ঝুলিতে কি দিয়ে যাবেন? অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক উৎসব বিলাসিতা?
রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থে ভুল তথ্যের গলাবাজি করুক, তাদের কথা ছেড়ে দিলাম। কারণ তাদের কেউ স্বদেশে ঠাকুর ফেলে বিদেশি ঠাকুরে (মতবাদে) বিশ্বাসী, প্রশ্ন- বাঙলা কি এই বিদেশী মতবাদে অভ্যস্ত ছিল? কেউ কেউ ভুল তথ্যের সিরিজেই মঞ্চ কাঁপিয়ে হাততালির লহর তোলেন, প্রশ্ন- বাঙলা কি এতেও অভ্যস্ত ছিল? তাই রাজনৈতিক দলগুলির নৈতিকতা, দায়বদ্ধতার প্রশ্ন রাখলাম না। কিন্তু আপনারা বিদ্বজনেরা? হাততালি দেবার আগে, পক্ষে- বিপক্ষে মঞ্চ কাঁপানোর আগে… নিরপেক্ষতার দায় থাকেই আপনাদের। নাহলে যে আপনাদের যোগ্যতা প্রশ্নচিহ্নের দাবী করে- শুধুই তাঁবেদারী?
সজাগ কলম চেতনা উন্মেষের দায় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথা- ‘শুধু তোমার জন্য’, ‘মধুচন্দ্রিমা’, ‘গরিব সিরাজ, নিঃস্ব বেগম’, ‘সমর্পন’, ‘অচেনা মিছিল’, ‘কতটা পথ চললে পথিক’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’, ‘স্মৃতিরাও বাসি হয়’, ‘শুকনো কেস’, আলোকবর্তিকা’, ‘একলা চলো র..’, ‘প্রতীক্ষার ইচ্ছে’, ‘ক্ষুধার্ত’, ‘ভৈরবী রাগে’, ‘জিয়নকাঠি’, ‘বাঁক’, ‘পরগাছা’, ‘স্বার্থপর’।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ‘আলাপী মন’-এর পক্ষ থেকে সকল সাহিত্যিক বন্ধু, পাঠকবৃন্দের কাছে।