অণু গল্প

অণুগল্প- ঘুংঘুর নদীর পানি

ঘুংঘুর নদীর পানি
– শক্তি পুরকাইত

 

বর্ষা শেষ হতে চলল, আকাশে এক ফোঁটাও বৃষ্টি নেই। ঘুংঘুর নদী শুকিয়ে কাঠ। মাটি হাঁ হয়ে আছে। প্রতিবেশীদের চোখে জল। একফোঁটা বৃষ্টির জন্য মানুষের এমন হয়, সওকত মিঞা এ বছর তা সাক্ষী । প্রতিবেশীদের বিপদ পড়লে সে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, এটা নতুন নয়। আগা গোড়াই সে করে আসে। গ্রামে কেউ মারা গেলে একাই মাটি খোঁড়ে। আবার নিজেই মাটি দেয়। সওকত মিঞা ঘর থেকে বাইরে বের হয়। তারপর আকাশের দিকে তাকায় কোথাও এতটুকু মেঘ নেই। বৃষ্টি তো অনেক দূরে। গ্রামের যে কোন বিচার বা সালিশি সভায় ডাক পড়ে তার। ব্রহ্মপুত্র নদীর জলে পলি মাটি বয়ে আনতে আনতে আজ মানচিত্র থেকে ঘুংঘুর নদী নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। ঘুংঘুর নদী আর ঘুংঘুর নদী নেই। তবুও প্রতিবছর ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি নামলে প্রতিবেশীরা দেখত ঘুংঘুর নদীর আসল চেহারা। খড় কুটো পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু এ বছর তা সম্ভবনা খুবই কম। সওকত মিঞার অন্তর কেঁদে ওঠে। গ্রামের মানুষ গরমে হাঁস ফাঁস করছে। এই ভাবে গরম থাকলে গ্রাম উজার হয়ে যাবে। বাগানের শাক সবজি সব শুকিয়ে গেছে।মানুষ খাবে কী! সে যেন এ গ্রামের প্রাণপুরুষ। সকল দায় -দায়িত্ব সব তার। সেই জন্যে তার জন্ম। সওকত মিঞা, আগুন ঝরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ‘আল্লা এক পসলা পানি দিলি না, মানুষগুলা বাঁচবে কেমনে …’! বলতে বলতে তার মুখের কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। কিছু বলতে চেষ্টা করে। পারে না। দু’চোখে অন্ধকার নেমে আসে। শেষ নিঃশ্বাস পড়ে। প্রতিবেশীরা এসে দেখে সওকত মিঞা মারা গেছে। শেষ বিকেলে ঘুংঘুর নদীর চরে কবর খোঁড়া হয় তার। সওকত মিঞাকে কবরে তুলতেই গ্রামের মানুষ দেখল, আকাশ ভেঙে মুষলধারে বৃষ্টি। এ বছর প্রথম বৃষ্টি। বৃষ্টি নামতেই ঘর থেকে ছেলে-বুড়ো সবাই বেরিয়ে আসে। বৃষ্টি ভেজার আনন্দ উপভোগ করে। আর ঘুংঘুর নদীও হাঁ হয়ে থাকা মাটিতে প্রাণ ফিরে পায়। ঘুংঘুর নদীর পানিতে বইতে থাকে গোটা গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ । গ্রামের অন্তরালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেন সওকত মিঞা এ সব দেখছে …!

Loading

One Comment

  • sakti purkait

    বাংলাদেশের কুমিল্লার এক সময় বয়ে যেত ঘুংঘুর নদী । আজ তা মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে । কিন্তু সেখানকার মানুষগুলো আজও নদীর মত …

Leave A Comment

You cannot copy content of this page